জুলাই ৩১, ২০২১ ১৬:৩৪ Asia/Dhaka

‘মার্কিন সরকার জাতিসংঘের ইশতেহার লঙ্ঘন করে আজ পর্যন্ত ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার একটি প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করেনি’। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ পরমাণু সমঝোতাকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব পাসের ষষ্ঠ বার্ষিকী উপলক্ষে এই সংস্থার মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসের কাছে লেখা চিঠিতে এ অভিযোগ করেন।

প্রায় ১৩ বছর ধরে কঠিন ও স্বাশরুদ্ধকর আলোচনার পর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সই হয়। এর এক সপ্তাহ পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পরমাণু সমঝোতাকে স্বীকৃতি দিয়ে ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব পাশ করে। ওই প্রস্তাব অনুসারে এতে স্বাক্ষরকারী দুপক্ষই সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের ৮মে আনুষ্ঠানিকভাবে বহুপক্ষীয় এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যান। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন থেকে দূরে রয়েছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গত বুধবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের এক সমাবেশে বলেছেন ‘মার্কিন সরকার মুখে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা বললেও তারা এখনো নিষেধাজ্ঞা তোলেনি এবং তুলবেও  না। নতুন চুক্তিতে তারা এমন সব শর্ত আরোপ করার চেষ্টা করছে যাতে পরবর্তীতে সেসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন ‘এসব শর্ত দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিসহ পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের ভূমিকাকে সীমিত করা’।

গত কয়েক দশকে মার্কিন আচরণে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তারা আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তি বা প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারেও তারা একই আচরণ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যন্থেনিও গুতেরেস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ এক টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘মূল পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের জন্য ভিয়েনায় ইরান ও পাঁচজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে; এর চেয়ে কম নয়, বেশিও নয়। পরমাণু সমঝোতার আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে মূল লক্ষ্য থেকে সরে না যেতে এবং নতুন কোনো কিছু এর সাথে যুক্ত না করার আহ্বান জানান তিনি’।

যাইহোক, পরমাণু সমঝোতার ছয় বছর পরও পাশ্চাত্য তাদের প্রতিশ্রুতি পালন না করায় এর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইরানের একমাত্র দাবি হচ্ছে যেহেতু তারা প্রতিশ্রুতি পালন করেছে সে কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্রকেই ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে হবে। এ অবস্থায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় তেহরানের সদিচ্ছার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। #  

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩১

ট্যাগ