এপ্রিল ১৪, ২০২১ ১৬:৫৫ Asia/Dhaka

আমরা বলেছি, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, উন্নত দেশগুলোতেও দরিদ্র শিশুর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মধ্যে দারিদ্রের হার গোটা বিশ্বের গড় হারের চেয়েও বেশি। এর আগে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে তাদের ওয়েবসাইটে ইউনিসেফের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে উন্নত দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলোতে বসবাসকারী ব্যাপক সংখ্যক শিশুও চরম দারিদ্রের মধ্যে রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে দারিদ্রের গড় হার ২০ শতাংশ। ফ্রান্সে প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একজন দারিদ্র্যের শিকার। ব্রিটেনের সামাজিক মূল্যায়ন কমিশন বা এসএমসি এক রিপোর্টে জানিয়েছে,সেদেশের প্রায় সাড়ে ৪৫ লাখ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে, যা মোট ব্রিটিশ শিশুর ৩৩ শতাংশ। ব্রিটেনের উত্তর-পশ্চিমের ল্যাঙ্কাশায়ারের উপকূলবর্তী মোরক্যাম্বে টাউনের একটি স্কুলের অধ্যক্ষ শিউন কলিংউড বলেছেন,তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা সব সময় খুবই ক্ষুধার্ত থাকে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশের পরপরই ডাস্টবিনে খাবার খোঁজে বেড়ায়। আজকের আসরে আমরা পাশ্চাত্য সমাজে মাদকাসক্তির বিস্তার সম্পর্কে আলোচনার চেষ্টা করব। আশাকরি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই আছেন।

বর্তমানে মাদকাসক্তি গোটা মানব সমাজের অন্যতম বড় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়। মাদকাসক্তি এখন বিশ্বের সব দেশেই  কম-বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাশ্চাত্য সমাজে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে অত্যন্ত উদ্বেগজনক হারে। মাদকাসক্তি নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করে তারা সংশ্লিষ্ট  দেশের সরকার ও জাতিকে বারবারই এ বিষয়ে সতর্ক করে যাচ্ছে। ইউরোপের মাদক ও মাদকাসক্তি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ২০১৮ সালে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৮ সালে এই মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ১৪০ টনেরও বেশি কোকেন জব্দ করা হয়েছে যা ২০১৭ সালের দ্বিগুণ।

ইতালির রোমে অবস্থানরত ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার সংবাদদাতা মাসুমিনেজাদ সেদেশে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ইতালির সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে মাদকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পরেই ইতালির অবস্থান।

তিনি তার প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছেন, ইতালির স্কুলগুলোতে মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা নিয়ে সেদেশের পরিবারগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক আশঙ্কা করছেন, তাদের সন্তানেরা মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান স্কুলেই মাদকের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতালি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে যারা মাদকাসক্ত তাদের একটা বড় অংশই তরুণ। পরিসংখ্যান বলছে, ইটালির স্কুলগুলোতে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার গত দুই বছরে ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী মাদকাসক্তের সংখ্যার দিক থেকে  ইতালি  ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে। ইতালিতে সর্বাধিক ব্যবহৃত মাদকের মধ্যে রয়েছে কোকেন এবং হেরোইন। এর বাইরে অন্যান্য মাদকের ব্যবহারও উদ্বেগজনক পর্যায়ে।

ব্রিটেনে পতিতাবৃত্তি ও মাদক খাতে অর্থ লেনদেনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে সেদেশের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে। এ কারণে জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর কয়েক বছর আগে এই খাতকে জাতীয় রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত  করেছে। এটাকে তারা ছায়া অর্থনীতি হিসেবে অভিহিত করেছে। দৈনিক গার্ডিয়ান ২০১৪ সালে এক প্রতিবেদনে লিখেছে, জার্মানি, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া এবং গ্রিস পতিতাবৃত্তি ও মাদক খাত থেকে অর্জিত অর্থকে তাদের জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস জানিয়েছে, গত বছর পতিতাবৃত্তি ও মাদক খাত থেকে দেশটি এক হাজার ২৭০ কোটি ডলার আয় করেছে। পতিতাবৃত্তি ও মাদক খাতের উচ্চ আয়ের কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটি পরামর্শ দিয়ে লিখেছে, বিশাল বাজেট ঘাটতি ও ঋণের বোঝা কমাতে ব্রিটিশ সরকারের উচিৎ পতিতাবৃত্তি ও মাদক খাতকেও করের আওতায় আনা। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ব্রিটেনে মাদক দ্রব্যের বাজার সংক্রান্ত যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তা পরিপূর্ণ নয়, এখানে কেবল ব্রিটেনের ভেতরে উৎপাদিত মাদক অর্থাৎ গাঁজা কেনাবেচার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।                                                                                

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ব্রিটেনের লন্ডন শহরেই কেবল চার হাজারের বেশি শিশু এবং কিশোর-কিশোরী মাদকের মাফিয়া চক্রের সঙ্গে কাজ করে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, লন্ডনে যারা মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত তাদের ৪৬ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। এসব কিশোর-কিশোরী ব্রিটেনের অন্যান্য শহরে মাদক ও অর্থ সরবরাহ ও বিলির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই দেশি অস্ত্রের মাধ্যমে হামলার শিকার হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না এমন কোনো দিন খোঁজে পাওয়া যাবে না। তবে সেদেশে মাদকাসক্তির কারণে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায় তা গুলিবর্ষণ বা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি। বিশাল টাওয়ারগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক এবং নিউইয়র্কের উন্নত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে গেলেই কিছু লোককে দেখতে পাওয়া যায় যারা নিয়মিত মাদক সেবন করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, সেখানে মাদকাসক্তদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষকরে মাদকের ব্যবহার সব বয়সের মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে। আমেরিকায় প্রতিদিনের গোলাগুলির ঘটনার পেছনেও রয়েছে সমাজে মাদকের ব্যাপক ব্যবহার।  যেকোনে সমাজেই মাদকাসক্তি যুব প্রজন্মকে দ্রুত ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। এ কারণে মাদকদ্রব্যকে সমাজ ও জাতির জন্য বিষবাষ্প হিসেবে গণ্য করা হয়। পাশ্চাত্যে ধর্মবিরোধী যে সংস্কৃতি তা পক্ষান্তরে মাদকের ব্যবহারকেই উৎসাহিত করছে। আর এই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এখন অনেক মুসলিম দেশসহ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ছে। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ