এপ্রিল ১৮, ২০২১ ১৯:৫২ Asia/Dhaka

আমরা বলেছি, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, উন্নত দেশগুলোতেও দরিদ্র শিশুর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

বিশেষকরে মাদকের ব্যবহার সব বয়সের মানুষের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে। আমেরিকায় প্রতিদিনের গোলাগুলির ঘটনার পেছনেও রয়েছে সমাজে মাদকের ব্যাপক ব্যবহার।  যেকোনে সমাজেই মাদকাসক্তি যুব প্রজন্মকে দ্রুত ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। আজকের আসরে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি ও মাদক চোরাচালানে সিআইএ’র ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হেরোইন ও মারিজুয়ানার মতো মাদক দ্রব্যের ব্যবহার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমেরিকার মাদক ব্যবহার ও স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় জরিপ সংস্থা এনএসডিইউএইচ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বছরের বেশি বয়সী দুই কোটি ৪০ লাখের অধিক মানুষ মাদক সেবন করে। এছাড়া আমেরিকায় মারিজুয়ানায় আসক্ত শিশু-কিশোরের সংখ্যা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মাদকাসক্তি সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৬ লাখ মার্কিন নাগরিক মাদকাসক্ত। অন্যান্য পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে,১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে হেরোইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। একইসঙ্গে নারীদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। ২০১০ সালে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ছিল পুরুষ,কিন্তু ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই অনুপাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০১৭ সালের জরিপে বেরিয়ে এসেছে, আমেরিকায় মাদকাসক্তদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই নারী। আমেরিকায় মাকদাসক্তিই ৫০ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ।

যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মাদকের উৎপাদন, ব্যবহার ও ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু মাদক উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র জড়িত থাকার নানা প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকেরা। পর্দার আড়ালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে মাদককে ব্যবহার করছে নানাভাবে। মাদক ব্যবসায় সিআইএ'র ভূমিকা এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নানাভাবে স্পষ্ট হয়েছে। পিটার ডেল স্কট এবং জোনাথন মার্শাল ১৯৯১ সালে প্রকাশিত 'কোকেন রাজনীতি: মধ্য আমেরিকায় ড্রাগস, আর্মি এবং সিআইএ' শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন,মাদক নির্মূলের প্রতিশ্রুতি সিআইএ মেনে চলে না। তারা আরও লিখেছেন, মাদক চোরাচালানের ক্ষেত্রে সিআইএ'র ভূমিকা ছিল। মাদক দ্রব্যের মধ্যে সাইকেডেলিক ট্যাবলেটের প্রতি ছিল সিআইএ'র বিশেষ মনোযোগ। যদিও গোটা বিশ্বেই এই ট্যাবলেট নিষিদ্ধ। তাদের বিশেষ মনোযোগের কারণ হলো এটাকে তারা মানুষের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করে সংস্থাটি। সিআইএ’র এজেন্টরা সেনাবাহিনী, চিকিৎসক,সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী,শিক্ষার্থী এবং মানসিক রোগীদের ওপর এই ড্রাগের পরীক্ষা চালিয়েছে।

বিভিন্ন বৈশ্বিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সিআইএ বিশ্বে মাদক ব্যবসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। "হোয়াইট ডেথ,সিআইএ অ্যান্ড ড্রাগস" শীর্ষক বইয়ে আলেকজান্ডার চকবার্ন এবং জেফ্রি ক্লেয়ার অপরাধমূলক তৎপরতায় জড়িত বিভিন্ন গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে সিআইএ'র দীর্ঘ ৫০ বছরের সম্পর্কের নানা তথ্য ফাঁস করেছেন। এই বইটিতে তারা বলেছেন,আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের একটি কারণ হচ্ছে মাদক ব্যবসার ওপর সিআইএর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং তা থেকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সুবিধা নেয়া। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, আমেরিকার বাইরে সিআইএর যেসব কার্যক্রম রয়েছে তা আফগানিস্তানের মাদক ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থে পরিচালিত হয় এবং এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে চলমান অস্থিতিশীলতা ও অশান্তি জিইয়ে রাখতে চায়। 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে,মাদক দ্রব্য ও সংঘবদ্ধ অপরাধকে ঘিরে প্রতি বছর এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেন হয়। রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব লেনদেন সম্পন্ন হয়। এখন এ প্রশ্ন উঠতেই পারে যে,বিপুল অঙ্কের এই অর্থ লেনদেন কী করে সম্ভব যেখানে মার্কিন নীতির বিরোধী হলেই যেকোনো দেশের আর্থিক লেনদেন অনায়াসেই বন্ধ করে দিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?এ থেকে এটা সহজেই অনুমেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পাশ্চাত্যের দেশগুলো মাদক নির্মূলে খুব বেশি আন্তরিক নয় বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা এই ব্যবসার মদদদাতা। আফগানিস্তানে পপি চাষ ও মাদক উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি একবার নজর দিলেও এ ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের মদদের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো। পরোক্ষভাবে দেশটির নিয়ন্ত্রণ তাদেরই হাতে। কিন্তু এই সময়ে সেদেশে মাদক উৎপাদন বহু গুণে বেড়েছে।

২০০১ সালে আফগানিস্তানে বার্ষিক মাদক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র প্রায় ২০০ টন,কিন্তু ২০১৮ সালে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার টনে অর্থাৎ মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাদক উৎপাদন ৫০ গুণ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে। সমাজ ধ্বংসকারী হেরোইনের প্রধান উৎস হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে আফগানিস্তান। আমেরিকা সেখানে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রেখেছে। আফগানিস্তানকে দখলে নেয়ার পর সেখানে মাদক উৎপাদন বৃদ্ধিই প্রমাণ করে আমেরিকা ও ইউরোপ মাদক নির্মূলে কখনোই আন্তরিক ছিল না, লোক দেখানো নানা পদক্ষেপ হয়তো কখনো কখনো চোখে পড়ে কিন্তু বাস্তবে তারা মাদকের মূল উৎসের ধ্বংস চায় না। 

২০২০ সালে রাশিয়া সরাসরি এ অভিযোগ করেছে যে,আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সেনারাই কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে মাদক পাচার করছে। আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ রুশ প্রতিনিধি জামির কাবুলোভ সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিমানগুলো আফগানিস্তানের কান্দাহার বা বাগরাম বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে এবং জার্মানি ও রুমানিয়াসহ যেখানে খুশি সেখানে চলে যায়। এসব বিমানে কখনোই কোন তল্লাশি চালানো হয় না। আর এসব বিমানে করেই খুব সহজে আফগানিস্তান থেকে ইউরোপে মাদক পাচার করছে মার্কিন বাহিনী। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী যেমনটি বলেছেন,আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতি সেদেশের তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন অপরাধ ও মাদকাসক্তিতে নিমজ্জিত করা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ