জুন ০১, ২০২১ ১৬:৫৫ Asia/Dhaka

শ্রোতা বন্ধুরা, আপনাদের সবাইকে প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি চিঠিপত্রের আসর 'প্রিয়জন'। আজকের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়  আপনাদের সঙ্গে আছি আমরা তিনজন। আমি গাজী আবদুর রশিদ, আমি আকতার জাহান এবং আমি আশরাফুর রহমান। 

আশরাফুর রহমান: আসরের শুরুতেই আমি একটি বাণী শোনাতে চাই। ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ.) বলেছেন, “মানুষ যদি জানত জ্ঞান অর্জনের মধ্যে কী আছে, তাহলে তারা হৃদয়ের রক্ত ঝরিয়ে বা সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়ে হলেও তা অর্জন করত।”

আকতার জাহান: জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে চমৎকার একটি বাণী শুনলাম। আমরা সবাই সাধ্যানুযায়ী জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করব- এ প্রত্যাশা করে নজর দিচ্ছি চিঠিপত্রের দিকে।

আসরের প্রথম চিঠিটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ শাহাদত হোসেন। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন: সকল মানবতা ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে ইসরাইল নামক একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাইদের নির্বিচারে হত্যা করছে। কিন্তু এ ববর্রতা বিশ্ব বিবেককে মোটেও নাড়া দিতে পারছে না। আমেরিকা, ইউরোপের মত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী রাষ্ট্রগুলো শুধু নীরবই থাকছে না, বরং এসব হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে যাচ্ছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ইরান ছাড়া আর কোনো মুসলিম রাষ্ট্র আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের পাশে সেভাবে দাঁড়ায়নি। একমাত্র ইরান প্রযুক্তি, অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে তাদের সাহায্য করছে। চিঠির শেষাংশ এ শ্রোতাভাই ফিলিস্তিন ইস্যুতে রেডিও তেহরানের ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

গাজী আবদুর রশিদ: শাহাদত ভাইকে ধন্যবাদ, সময়োপযুগী বিষয়ে বাস্তবধর্মী চিঠিটির জন্য। আসরের এবারে রেডিও তেহরানের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে 'আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ' আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্য থেকে একজনের লেখার কিছু অংশ পড়ে শোনাতে চাই। 

আশরাফুর রহমান: ওই প্রতিযোগিতায় তো বিজয়ী হয়েছেন ১২ জন। এছাড়া মানসম্মত লেখা ছিল আরও বেশি। তো আজ আমরা কার লেখা পড়ব?

গাজী আবদুর রশিদ: আজকের লেখাটি বাংলাদেশের জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার পূর্ব নলছিয়ার জাগো রেডিও লিসেনার্স ক্লাবের সভাপতি হারুন অর রশীদের। তিনি এ প্রতিযোগিতায় বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন।

হারুন ভাই লিখেছেন, “সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারায় নতুন পালক নিয়ে বিশ্বকে আলোকিত করতে, সমগ্র মুসলিম বিশ্বসহ মানবজাতির সঠিক পথ প্রদর্শকের কাণ্ডারি হয়ে ১৯৮২ সালের ১৭ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিশ্ব কার্যক্রমের বাংলা অনুষ্ঠান- রেডিও তেহরান। পারস্য উপসাগরের বুকে স্বচ্ছ জলরাশির উর্মি দোলায় সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্বসংবাদসহ সারা বিশ্বের মজলুম, শোষিত, নির্যাতিত মানুষের দর্পন হিসেবে আবির্ভাব ঘটে এক শক্তিধর সততার বিমূর্ত প্রতীক গণমাধ্যমের। জন্ম হয় রেডিও তেহরানের। সময়ের পরিক্রমায় নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে সময়োপযোগী হয়ে আজ তার ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সুদীর্ঘ এই পথচলায় সারা বিশ্বের কোটি কোটি শ্রোতাকে তথ্য দিয়ে, সুস্থ বিনোদন দিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রকার সত্য সংবাদ দিয়ে মাতিয়ে রেখেছে। বিদীর্ণ, নিরাশার বালুচরে ডুবে যাওয়া প্রাণে নব উদ্যোমে নব আশার সঞ্চার করে, নতুন করে হাল ধরতে শিখিয়েছে রেডিও তেহরান। অস্থিতিশীল, কুপ্রথা, কুসংস্কৃতিময় অনাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বকে উপহার দিয়েছে আলোকবর্তিকাময় সোনালী ভোর।”

আকতার জাহান: হারুন অর রশীদ ভাই চমৎকার উপমা ও তথ্য দিয়ে রেডিও তেহরানকে মূল্যায়ন করেছেন। তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

আশরাফুর রহমান: আসরের পরের মেইলটি এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ থানার ছাতোয়া গ্রাম থেকে। আর পাঠিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল। রেডিও তেহরানে এটিই তার প্রথম চিঠি। 

গাজী আবদুর রশিদ: প্রথম চিঠির জন্য রাসেল ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তো আমাদের অনুষ্ঠানে সম্পর্কে তিনি কি কিছু লিখেছেন?

আশরাফুর রহমান: না, অনুষ্ঠান সম্পর্কে নয়, তিনি এ চিঠিটি লিখেছেন ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে। রাসেল ভাই লিখেছেন, “আরো একবার সেই একই ভাবে শেষ হলো ধ্বংসলীলা। এই একুশের দশকেও নিরীহ ফিলিস্তিন জনগণের উপর অমানবিক আগ্রাসন চালালো ইসরাইল। আর পেছন থেকে তাদের এই নির্লজ্জ আগ্রাসনের সহযোগিতা করল আমেরিকা এবং ইউরোপের কতিপয় দেশ। তারাই কৌশলে ইসরাইলকে এমন একটি ভৌগোলিক স্থানে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে এই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো সহজেই তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে।”

আকতার জাহান: ফিলিস্তিন সংকট সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরায় মোহাম্মদ রাসেল আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসরের এ পর্যায়ে আমরা একজন সিনিয়র শ্রোতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। প্রথমেই তার পরিচয় জানা যাক।  

Image Caption

 


গাজী আবদুর রশিদ: সাক্ষাৎকারের পর আবারো ইমেইলের দিকে নজর দিচ্ছি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার চুপী থেকে হাফিজুর রহমান পাঠিয়েছেন এবারের মেইলটি। 

২০ মে প্রচারিত পুরো অনুষ্ঠানে সম্পর্কে তিনি মতামত জানিয়েছেন। শিশু-কিশোরদের জন্য প্রচারিত রংধনু আসরের প্রশংসা করে হাফিজুর রহমান লিখেছেন, বাংলাদেশের শিশুশিল্পী জুবাইদা বিনতে মুনিম-এর অসাধারণ গানসহ সাক্ষাৎকার এবং ছাগল ও নেকড়ে বাঘ নিয়ে রূপকথার গল্প সম্বলিত রংধনু আসর শুনলাম। সুন্দর ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আশরাফুর রহমান: হাফিজুর রহমান ভাইকে ধন্যবাদ, মতামত সমৃদ্ধ চিঠিটির জন্য। আসরের পরের চিঠিটি এসেছে। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার মল্লিকাদহ গ্রাম থেকে। আর পাঠিয়েছেন হরিদাস রায়।

তিনি জানিয়েছেন, রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশ্বসংবাদ, দৃষ্টিপাত, চিঠিপত্রের আসর প্রিয়জন ও রংধনু আসর তার খুব ভালো লাগে। তবে এই মেইলে ‘গল্প ও প্রবাদের গল্প’ অনুষ্ঠানে ‘সন্ত্রাসীর পরিণতি’ শিরোনামের গল্পটির প্রশংসা করেছেন তিনি। 

আকতার জাহান: শ্রোতাবন্ধু হরিদাস রায়কে ধন্যবাদ, নিয়মিত চিঠি লিখে মতামত জানানোর জন্য।  কুয়েত সিটি থেকে আসরের পরের মেইলটি পাঠিয়েছেন শাহজালাল হাজারী। ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তিনি এই চিঠিটি লিখেন। শাহজালাল হাজারী লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে পরাজয়ের চূড়ান্ত পর্যায় থেকে নিজেদেরকে কোনোরকমে রক্ষা করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে, আমরা যারা ইসলামের আইডল মনে করি- মুসলিম নামধারী সেই আরব মুনাফিকেদের মুখোশ বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনকিছুই লক্ষ্য করিনি; নির্যাতিত গাজাবাসীকে সাহায্য কিংবা সহযোগিতার আশ্বাস দিতেও দেখা যায়নি। এই সকল আরব মুনাফিক ও অভিশপ্ত ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার দোসরদের প্রতি রইল ঘৃণা। অপরদিকে আত্মদানকারী সকল শহীদ ভাই-বোনদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। ফিলিস্তিনের বিজয় আসন্ন- ইনশাআল্লাহ।” 

গাজী আবদুর রশিদ: শাহজালাল হাজারী ভাইকে ধন্যবাদ সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে মাঝেমধ্যে চিঠি লিখে মতামত তুলে ধরার জন্য। 

আসরের শেষ চিঠিটি এসেছে সৌদি আরবের তাবুক সিটি থেকে আর পাঠিয়েছেন জাফুরুল ইসলাম জাফর। তিনি জানিয়েছেন, মহামারী করোনার মাঝে আমাদের উত্তর বঙ্গ আন্তর্জাতিক শ্রোতা সংঘ এবং গ্রামের যুবকদের প্রচেষ্টায় এবং প্রবাসী ভাইদের আর্থিক সহযোগিতায় ১১ বারের মতো এবারও গরীব-দুস্থ মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, সেমাই, তেল, কাপড় ও লুঙ্গী বিতরণ করা হয়। 

আশরাফুর রহমান: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব, অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে একই ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ। ক্লাবের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী যুবরাজ জানিয়েছেন, ৮ মে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদিঘী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০০ পরিবার এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেতিয়ারা এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসায় ১০ প্যাকেট, দক্ষিণ বেতিয়ারা হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় ১০ প্যাকেট, কদম মোবারক এতিম খানা ও হাফেজিয়া মাদরাসায় ৩৫ প্যাকেট উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও গরীব ও অসহায় পরিবারের মাঝে নগদ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

আকতার জাহান: পবিত্র ঈদুল ফিতরে গরীব ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাফুরুল ইসলাম জাফর ভাই ও জাকারিয়া চৌধুরী যুবরাজ ভাইয়ের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এটাই প্রত্যাশা।

গাজী আবদুর রশিদ: এবারে কয়েকজন ডিএক্সার বন্ধুর নাম-ঠিকানা জানিয়ে দিচ্ছি যারা আমাদের অনুষ্ঠান শুনে শ্রবণমান রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। 

  • ভারতের ছত্তিশগড়ের ভিলাই থেকে আনন্দ মোহন বাইন 
  •  পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে এসএম নাজিমউদ্দিন 
  • কোচবিহারের আমলাগুড়ি থেকে তপন বসাক
  • দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে বিধান চন্দ্র সান্যাল। 
  • বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ থেকে শাহাদত হোসেন
  • কুষ্টিয়া থেকে মোখলেছুর রহমান
  • এবং টাঙ্গাইল থেকে আবু তাহের।

আশরাফুর রহমান: তো যারা অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি কষ্ট করে শ্রবণমান রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

আকতার জাহান: তো বন্ধুরা, অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নেয়ার আগে আজও রয়েছে একটি গান। কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত গানটি গেয়েছেন শিল্পী ইশরাক হুসাইন।  

গাজী আবদুর রশিদ:  আপনারা গানটি শুনতে থাকুন আর আমরা বিদায় নিই প্রিয়জনের আজকের আসর থেকে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ