আগস্ট ০১, ২০২১ ২১:০৩ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর নাম ও গুণগুলোর অর্থ বা পরিচিতি জানার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর বুকে আল্লাহর খলিফা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে যে যোগ্যতা ফেরেশতাদেরও নেই।

 

এইসব নাম মহান আল্লাহর এক একটি গুণের পূর্ণতার প্রকাশ। মহান আল্লাহর প্রকৃত খলিফা বা প্রতিনিধি হতে হলে ও পূর্ণতা অর্জন করতে হলে মানুষকেও এইসব নামের মুখাপেক্ষী হতে হবে এবং এইসব নামের ঔজ্জ্বল্য তুলে ধরতে হবে জীবনে। 

মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার অন্তর্ভুক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল হাসিব। এর অর্থ যার মাধ্যমে কোনো কিছু যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, যিনি গণনাকারী ও মহত-প্রাণ বা মহানুভব ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে চার বার এসেছে এই নাম। এর মধ্যে তিন বার মহান আল্লাহর নাম হিসেবে ও একবার মানুষের ক্ষেত্রে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিয়ামত বা বিচার-দিবসের বিশেষ সময়ের জন্য।

ভরসা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অর্থে মহান আল্লাহকে স্মরণ করতে গিয়ে বলা হয়, সব সময়ই তথা সুখে ও দুঃখে মহান আল্লাহই মুমিনদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি নিজেই গোটা সৃষ্টিকুলের চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য যথেষ্ট। মানুষ যখন আল্লাহর এই নাম তথা হাসিব নামের অর্থ বুঝতে পারেন তখন মানুষ নিজের সব চাহিদা কেবল মহান আল্লাহর কাছেই তুলে ধরেন।  এমন মানুষকে যদি সারা দুনিয়ার মানুষও বর্জন করে তাহলেও তিনি কোনো ভয় বা দুশ্চিন্তার শিকার হন না। আবার আল্লাহ ছাড়া যদি সারা বিশ্বের মানুষও তাঁকে সম্বর্ধনা জানায় তাহলেও তিনি প্রশান্তি বা আনন্দ অনুভব করেন না। সুরা তালাক্বের তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যে কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।– সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

এরা হল সেই মুমিন যাদেরকে  মুনাফিক বা শত্রুর অনুচর লোকেরা যখন বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য মক্কার লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সেনা ও সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট;  তিনি কতই না চমৎকার বা শ্রেষ্ঠ অভিভাবক ও  সাফল্য দানকারী।

অতএব হাসিব এমনই এক নাম যা কেবল মহান আল্লাহর ক্ষেত্রেই পুরোপুরি বাস্তব ও পরিপূর্ণভাবে প্রযোজ্য। একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট বলতে বোঝায় যে তিনি যে কোনো কিছুকে অস্তিত্ব দেয়া থেকে শুরু করে তার ওই অস্তিত্ব অব্যাহত রাখাসহ ওই অস্তিত্বকে পূর্ণতার শিখর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সক্ষম। তাই একটি ইয়াতিম শিশুর প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে মহান আল্লাহই যথেষ্ট। কারণ ওই শিশুর মাকেও মহান আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন ও মায়ের বুকে তার জন্য মহান আল্লাহই দুধের ব্যবস্থা করেছেন এবং শিশুকে মায়ের দুধ পানের দিকে পরিচালনাও করেন মহান আল্লাহ। আর মায়ের মনে শিশুর জন্য মমতার যোগানও দিয়েছেন মহান আল্লাহ এবং এর ফলে মা তার সমগ্র অস্তিত্বকে শিশুর সেবায় নিয়োগ করেন। সুরা যুমারের ৩৬ নম্বর আয়াতে এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন: আল্লাহ কি বান্দাহর সব বিষয়ের জন্য যথেষ্ট নন?

হাসিব নামের আরেকটি অর্থ হিসাবগ্রহীতা। মহান আল্লাহর চেয়ে নিপুণ ও পরিপূর্ণ হিসাবগ্রহীতা ও হিসাবরক্ষক আর কেউ নেই। মানুষের প্রতিটি কাজের ও কথার এবং এমনকি চিন্তারও হিসাব রেকর্ড রয়েছে মহান আল্লাহর কাছে। মহান আল্লাহর হিসাব-তৎপরতায় নবী-রাসুল ও ফেরেশতারাও কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। কারণ আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ মানুষের গোপন বিষয়ের খবর রাখেন না। তাই মুমিন কেবল মহান আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কাজের জবাবদিহিতার ব্যাপারেই ভীত থাকে। সুরা আহযাবের ৩৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

সেই নবীগণ আল্লাহর পয়গাম প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন। তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট।

মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের পর মানুষের কাজকর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন। যেমন, সুরা বাক্বারার ২৮৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: আকাশ ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে তার সবই আল্লাহর। তোমরা যা গোপন রাখ মনে বা প্রকাশ কর মহান আল্লাহ সেসবেরই হিসাব নেবেন তোমাদের কাছ থেকে। -সুরা আম্বিয়ার ৪৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট।

হাসিব অর্থ মহত্ত্ব, মহানুভবতা, উন্নত গুণ, দয়া ও এমন কিছু যা মানুষকে বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। আর এ নাম মহান আল্লাহর জন্যই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্রযোজ্য।

মানুষ যদি মহান আল্লাহর হাসিব নামটি মনে রাখে তাহলে সে তার কাজকর্মের ব্যাপারে সতর্ক হবে। আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজেই নিজের কাজের বিচার করবে। কারণ মহান আল্লাহর হিসাব হবে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও কঠিন। আর এ জন্যই মহানবী (সা) বলেছেন, তোমাদের হিসাব দেয়ার দিন ঘনিয়ে আসার আগেই নিজেই নিজের হিসাব নাও, নিজের অবস্থার পরিমাপ নাও এবং নিজেকে মহাবিচারের দিন ও পুনরুত্থান দিবসের জন্য প্রস্তুত কর।

হিসাব বা বিচারের ব্যবস্থা বিচক্ষণ মানুষকে পরকালের ব্যাপারে সতর্ক রাখে। ফলে তারা পাপ বর্জন করে চলে। মহান আল্লাহ সুরা মায়েদার চার নম্বর আয়াতে বলেছেন: আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ খুব দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।– যারা গোপনে ও প্রকাশ্যে মহান আল্লাহকে স্মরণে রেখে তাঁকে ভয় করে চলে এবং আল্লাহ তাদের ভাগ্যে যা রেখেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকে তারা বিচার-দিবস বা  ক্বিয়ামতের দিন কবর থেকে সরাসরি বেহেশতে চলে যাবেন বলে হাদিসে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সৌভাগ্য অর্জনের তৌফিক দিন। আমিন#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ