জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ ১৩:৩৩ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে বিচারক এবং আইনজীবীদের বৈরীতা ও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নানা মহলে চলছে প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে এক বিচারককে আইনজীবীদের গালিগালাজের পর বিষয়টি অনেক দূর গড়ায়। আইনজীবীরা টানা কর্মবিরতি পালন করেন, বিচারকদের সংগঠন তাঁদের নিন্দা ও শাস্তি দাবি করে, উচ্চ আদালত দুই দফায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন।

এরপর আইনজীবীরা আইনমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই বিচারকের বদলি ও নাজিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে ফেরেন। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অনেকটাই ‘প্রশমিত’ হয়ে এসেছে। কিন্তু অস্বস্তিতে আছেন সাধারণ মানুষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের সমস্যাকে ‘ভাইবোনের ঝগড়া’র সঙ্গে তুলনা করেন আইনমন্ত্রী। অন্যদিকে, হাইকোর্ট উদ্ভূত ঘটনাকে জুডিশিয়ারির অস্তিত্বের প্রশ্ন, এ ঘটনায় ‘সব আইনজীবীর লজ্জিত হওয়া উচিত’ বলেছেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারক ও এক নাজিরের অপসারণ চেয়ে জেলার সব আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা।

গত ছয় মাসে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অশালীন আচরণের অন্তত ২০টি ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাই মাত্রাগত পার্থক্য থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ ঘটনাটি বরং সারা দেশের আদালতগুলোয় বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যকার সম্পর্ক যে অবনতিশীল, সেটা খোলাসা করেছে। কিন্তু এ সম্পর্কের অবনতি হলো কেন, এর সঙ্গে রাজনীতি, ক্ষমতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নগুলো যুক্ত কি না, তা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। বরং এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বা শান্ত হলেও হতে পারে, কিন্তু ঘটনার প্রকৃত কারণগুলো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন চারটি কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এক. অজ্ঞতা, দুই. মানসিকতা, তিন. রাজনৈতিক প্রভাব এবং চার. নম্বরে দুর্নীতি। তারা বলছেন, যেসব কারণে বেঞ্চ এবং বারের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, দেশের আইনেই এর সমাধান থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত অধস্তন আদালতের এই বিষয়গুলো দেখার দায়িত্বে আছে। আর উচ্চ আদালতের বিষয় দেখার জন্য রাষ্ট্রপতি আছেন। প্রয়োজনে গঠন হতে পারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। হাইকোর্টের নির্দেশনা হলো, বিচারালয়ে বিচারক এবং আইনজীবী উভয়ই সমমর্যাদার।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ মনে করেন, রাজনৈতিক প্রভাব এই দ্বন্দ্বকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোনো বারের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক বলে বলিয়ান। তারা চান তাদের নিজেদের মতো করে আদালত চলুক। সেটা না হলেই তারা নানা অজুহাতে আদালত বর্জন করেন। কোনো কোনো বিচারকের মধ্যেও এই প্রবণতা আছে বলেও মনে করেন মনজিল মোরশেদ।

সাধারণ মানুষের মধ্যে কারো আইন-আদালতে ভীষণ ভয়, কারো বা শ্রদ্ধা। আর লেখালেখির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের মধ্যে কাজ করে সর্বোচ্চ সতর্কতা। একটু এদিক-সেদিক হয়ে গেলেই মহাবিপদ তাড়া করে তাদের। কিন্তু আইন-বিচারাঙ্গনে কর্মরতদের মধ্যে আইন-আদালত-বিচার নিয়ে শ্রদ্ধা-ভক্তি বা ভয় কি ওই পর্যায়ে? এ প্রশ্ন ওঠে কখনো কখনো। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার কারণে সামনে আসে প্রশ্নটা। কিন্তু কখনো এর নিষ্পত্তি হয় না। তবে এবার বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে এর সুরাহা মিলবে বলে মনে করেন এটর্নী জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আহমেদ।#

পার্সটুডে/নিলয় রহমান/আশরাফুর রহমান/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ