এপ্রিল ০৬, ২০২৩ ১৪:৫০ Asia/Dhaka

খোদা-সচেতন হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর বিখ্যাত নামগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা জরুরি।

তাই বিগত বেশ কয়েকটি আলোচনায় আমরা মহান আল্লাহর বিখ্যাত কয়েকটি নামের অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেছি। পবিত্র রমজানের এ পর্যায়ে আমরা মহান আল্লাহর বিখ্যাত নাম আলবাসির সম্পর্কে কথা বলব। বাসির শব্দের অর্থ দ্রষ্টা বা  যিনি দেখেন।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন তিনি সব দেখেন ও শোনেন। -মহান আল্লাহ মানুষকেও যেসব বড় নেয়ামত দান করেছেন চোখ ও দৃষ্টিশক্তি সেসবের অন্যতম। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সুরা নাহ্‌ল-এর ৭৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন: 

আল্লাহ তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে । তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর বা বুদ্ধি  দিয়েছেন, হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞ হবে আল্লাহর প্রতি! –

মানবজাতির অনেকেই মহান আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করে না এবং এ জন্য কৃতজ্ঞতাও জানায় না। আমাদের যে কিছুই ছিল না ও আমরা যে কিছুই জানতাম না সে কথা স্মরণ রাখা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের যে চোখ, কান ও  বুদ্ধি দিয়েছেন তা দিয়ে আমরা মহান আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করব এবং আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাব। আর এটাই হচ্ছে বিবেকের দাবি।

মানুষের দৃষ্টিশক্তির রয়েছে সীমাবদ্ধতা। মানুষ আল্লাহর মত সব কিছু দেখতে পারে না। যেমন, খুব ক্ষুদ্র কিছু বা খুব বড় কিছুর সব অংশ আমরা দেখতে পাই না খালি চোখে। যেমন, পুরো সাগর বা বিশাল পর্বত আমরা দেখতে পাই না একই স্থানে দাঁড়িয়ে। চোখের ক্ষমতাও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসতে থাকে। আর তাই চশমা ব্যবহার করতে হয়।  ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) বলেছেন, বার্ধক্যের লক্ষণ তিনটি: চোখ দুর্বল হয়ে যাওয়া, পিঠ বাঁকা হয়ে আসা ও হাঁটার মধ্যে তেজস্বিতা বা গতি কমে আসা।

হযরত ইব্রাহিম (আ) যখন তাঁর মাথায় প্রথমবারের মত একটি সাদা চুল দেখতে পান তখন আল্লাহকে প্রশ্ন করেন : এর কারণ কি বা এর তাৎপর্য কি? আল্লাহ বলেন: এটা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষণ।- আমরা সাদা চুলে কলপ দিয়ে যতই রং ঢাকার চেষ্টা করি না কেন মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব হবে না।

মানুষের চোখের আরেকটি সীমাবদ্ধতা হল এর মাধ্যমে আমরা কোনো কিছুর বাহ্যিক দিকই দেখি বাস্তব রূপটা আমরা দেখি না। আর তাই আমাদের কারো কারো কাছে, বিশেষ করে এক শ্রেণীর যুব সমাজের কাছে নারী, বাড়ি, গাড়ি, জমি-জমা, সন্তান-সন্ততি এবং পদ ও ক্ষমতার বাহ্যিক চাকচিক্য- এসব খুবই মোহনীয় মনে হয়। এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝামেলা ও ক্ষয়িষ্ণুতার মত বাস্তব দিকগুলো আমরা অনেকেই দেখি না। মহান আল্লাহর কাছে তাই একটি প্রার্থনায় বলা হয়: হে আল্লাহ আমাদের কাছে সত্যকে প্রকাশিত বা মূর্ত করে তুলুন ও মিথ্যাকেও স্পষ্ট করে তুলুন।  সত্যকে সত্যের স্বরূপে এমনভাবে প্রকাশ করুন যাতে আমরা নিজ থেকেই সেদিকে ধেয়ে আসি এবং মিথ্যাকেও তার স্বরূপে দেখতে পেয়ে তা এড়িয়ে চলতে পারি।- অন্য কথায় এভাবেই মহান আল্লাহর কাছে দূরদৃষ্টি  ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের জন্য প্রার্থনা করতে হবে।

মহান আল্লাহ যে অর্থে দ্রষ্টা বা বাসির তা মানুষের দৃষ্টিশক্তির তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ আল্লাহ সবই দেখেন। তিনি অতি ক্ষুদ্র ও অতি বৃহৎ, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও বাহ্যিক আর বাস্তব এবং গোপন দিক ইত্যাদি সবই দেখেন।

আমরাও যদি দূরদর্শী হতে চাই ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে চাই এবং নানা বিষয়ের বাস্তব দিকগুলো ও অদৃশ্য দিকগুলো উপলব্ধি করতে চাই তাহলে আমাদেরকে এমন এক শক্তির নৈকট্য অর্জন করতে হবে যিনি সবই দেখেন ও বোঝেন এবং শোনেন। আর এমন মহাশক্তি হলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ যার সমকক্ষ বা তুলনার যোগ্য কিছুই নেই। আল্লাহর সহায়তায়  দূরদর্শিতা অর্জন করা ছাড়া শয়তানের ধোঁকা এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়।  ইমাম হাসান (আ) বলেছেন, আমি কোনো হারাম কাজ করি না। কারণ আমি এর বাস্তবতা দেখি, এর আগুনটা আমি দেখি!

গিবত করাকে মহান আল্লাহ মৃত ভাইয়ের শরীরের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমরা যখন দূরদৃষ্টি অর্জন করব ও বাস্তবতা দেখতে পাব তখন আমাদের কাছে এই কাজটা এমনই বীভৎস বলেই মনে হবে! মহান আল্লাহর কাছে এমন দূরদৃষ্টি অর্জনের প্রার্থনাই করছি।

আল্লাহ বাসির বা সবই দেখছেন - এ বিষয়টি মনে রাখলে আমরা অন্যায় ও পাপাচার এড়িয়ে চলব এবং যে কোনো কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকব। রাস্তায় ক্যামেরা লাগানো থাকলে বা বিশেষ চিহ্নের সাইন দেয়া থাকলে আমরা গাড়ির গতির ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকি তেমনি মহান আল্লাহর নামগুলোর অর্থ হৃদয়ে গেঁথে নিলে আমরা জীবনাচারের ব্যাপারেও সতর্ক থাকব। হিসেব দেয়ার কথা ও জবাবদিহিতার কথাও মনে থাকবে তখন। মহান আল্লাহ মু'মিন বান্দার দিকে দোষ ধরার দৃষ্টি দেন তা নয়, বরং তিনি তাকে রক্ষার দৃষ্টিতে দেখেন। কারণ তিনি মু'মিনকে ভালোবাসেন।  তাই মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা উচিত ও মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত। সুখে ও দুঃখে মহান আল্লাহই একমাত্র সহায়।

আল্লাহ যখন নবী মুসা ও হারুনকে (আ) মহাজালিম ফিরআউনকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পথে আনতে  দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দিলেন তখন তাঁরা কিছুটা ভয় পেলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ বললেন, ভয় পেয়ো না, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি সবই দেখি ও শুনি।

মহান আল্লাহর নেয়ামতগুলোর বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করাটা হচ্ছে কুফরি তথা অকৃতজ্ঞতা।  পরকালে মহান আল্লাহ আমাদের হিসেব নেয়ার আগে আসুন নিজেই নিজের হিসেবে নিয়ে আত্ম-সংশোধনের চেষ্টা করি। #

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ