সর্বোচ্চ নেতা প্রদত্ত দায়িত্ব পালিত হবে
নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করার চেষ্টা করবে পেজেশকিয়ান সরকার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সরকারকে ইরানের ওপর আরোপিত অবৈধ নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি শুক্রবার রাতে ইরানের টেলিভিশনে এক টকশো অনুষ্ঠানে একথা জানান। ইরানের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আস্থাভোট লাভ করার দু’দিন পর এই একক-টকশো অনুষ্ঠিত হলো।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নিষ্ক্রিয় হবে না বরং হবে সক্রিয়। সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের জোরালো ভূমিকা থাকবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যদি একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে সেখানে আমাদেরকে নিষ্ক্রিয় থাকলে চলবে না। ইরানসহ গোটা অঞ্চলের স্বার্থে আমাদেরকে অবশ্যই ভূমিকা পালন করতে হবে।”
আরাকচি বলেন, পেজেশকিয়ান সরকারকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী একটি দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সেটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করা যা গোটা সরকার তার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করবে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হবে পাশ্চাত্যের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও জনগণের ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব অকার্যকর করার চেষ্টা করা।
ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলো আমাদের কাছে প্রথম অগ্রাধিকার পাবে। এরপর আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে আমাদের নজর থাকবে। তৃতীয় স্তরে যেসব দেশ কঠিন পরিস্থিতিতে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের দিকে নজর দিতে হবে।”
তিনি বলেন, ইরান ওয়াশিংটনের সাথে উত্তেজনা প্রশমন করতে চায় এবং কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চায়। যদি তারা শত্রুতামূলক মনোভাব বর্জন করে।
পার্স টুডে জানিয়েছে, জাপানের "কিয়োদা" বার্তা সংস্থার সাথে অপর এক সাক্ষাৎকারে আরাকচি বলেছেন: "ইরানের ইসলামিক কাউন্সিলে তার বক্তৃতায় তিনি আলোচনার মাধ্যমে একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইরানি জাতির মৌলিক নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর জোর দিয়েছেন।
আরাকচি বলেন, ইরানের অর্থনীতির ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অপসারণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বাণিজ্য স্বাভাবিক করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকার সাথে উত্তেজনা কমানো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক পুনঃনির্মাণের চেষ্টা করবে। তবে এই চেষ্টা শুধুমাত্র তখনই করা হবে যখন তারা ইরানের প্রতি শত্রুতা বন্ধ এবং ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা পূনর্বহাল করবে।
আব্বাস আরাকচি জানান, ইরানের সংসদে দেয়া বক্তৃতায় তিনি দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আলোচনাকে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবেন বলে জানান।
এই সাক্ষাৎকারে ইরান ও জাপানের মধ্যে সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেহরান ও টোকিওর মধ্যকার সম্পর্ককে সব দিক দিয়ে শক্তিশালী করবে এবং আঞ্চলিক সংকট মোকাবেলায় টোকিওকে সহযোগিতা করবে।
ইরানের জ্বালানি, তেল এবং অর্থনীতি খাতে জাপানের একটি বৃহৎ অংশীদারিত্ব থাকতে পারে বলে মন্তব্য করে আরাকচি বলেন, তেল ও জ্বালানি খাতে আগ্রহী জাপানি কোম্পানিগুলোকে ইরান স্বাগত জানাবে।
২০১৯ সালে তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্কের বিষয়ে জাপানের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন: ইরান এবং জাপান পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি বন্ধন তৈরি করেছে। ইরানের নতুন সরকার পূর্ব এশিয়ার সাথে সম্পর্কের উন্নয়নকে কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে আরাকচি বৃহস্পতিবার এক বক্তৃতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে উত্তেজনা প্রশমনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোও যদি ইরানের প্রতি শত্রুতা বন্ধ করে তাহলে পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে তেহরানের আপত্তি থাকবে না।#
পার্সটুডে/এমএমআই/এমএআর/২৪