জুলাই ২০, ২০২৩ ১৬:১১ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২০ জুলাই বৃহস্পতিবারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • মতামত-বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখাই কি উদ্দেশ্য-প্রথম আলো
  • মানুষের কোনো ক্ষতি করলে ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে: প্রধানমন্ত্রী-মানবজমিন
  • হিরো আলমকে মারধর: বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করছে ইসি-ইত্তেফাক
  • বিএনপি অশান্তির পথে হাঁটছে, সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে: ওবায়দুল কাদের-যুগান্তর
  • রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতি ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন : তথ্যমন্ত্রী-কালের কণ্ঠ

কোলকাতার শিরোনাম:

  • ভারত রক্ষায় ‘ইন্ডিয়া’-গণশক্তি
  • মণিপুর নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ, বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন মুলতুবি হয়ে গেল রাজ্যসভা এবং লোকসভা-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • মণিপুরের বিতর্কিত ভিডিও যেন শেয়ার না হয়, অশান্তি এড়াতে টুইটারকে নির্দেশ কেন্দ্রের-সংবাদ প্রতিদিন

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. পুলিশকে অহিংস হওয়ার আহ্বান অ্যামনেস্টির। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এই খবর প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

২. ইরানের সঙ্গে গভীর সংলাপে আগ্রহী উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ। তাহলে কী মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও কূটনীতিতে আরো পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

মানুষের কোনো ক্ষতি করলে ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে: প্রধানমন্ত্রী-মানবজমিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনরত দলগুলোর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের কোনো ক্ষতি করলে ছাড় দেয়া হবে না, ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে। আজ দুপুরে আখাউড়া-লাকসাম ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের দুঃশাসন ও অপকর্মের কারণে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষ। বিএনপি সন্ত্রাসী দল; ধ্বংস করা, আগুন নিয়ে পুড়িয়ে মারা হলো বিএনপির আন্দোলন। মানুষের কোনো ক্ষতি করলে ছাড় দেয়া হবে না, ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে।

শেখ হাসিনা ফাইল ফটো

 

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই এ কাজগুলো করা সম্ভব হবে। এটা জাতীয় সম্পদ, এটা জনগণকে রক্ষা করতে হবে।

বিএনপি অশান্তির পথে হাঁটছে, সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে: ওবায়দুল কাদের-যুগান্তর

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি অশান্তির পথে হাঁটছে, সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে, মির্জা ফখরুলের বক্তব্য তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে।বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে সেতুভবনে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।  

ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি যে শর্ত দিয়েছে তা সংবিধানের বাইরে, সংবিধান বিরোধী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা দলটির একদফা নিয়ে বিদেশিদের কোনো বক্তব্য নেই। তারা সন্ত্রাস করবে, সন্ত্রাস করে নির্বাচন পণ্ড করবে, নির্বাচন ভন্ডুল করবে- এ লক্ষ্য নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিস্কার কথা, আওয়ামী লীগের দফা একটাই- সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। বিএনপির দাবি অদ্ভুত, উদ্ভট ও অযোক্তিক। বিএনপিকে নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি দিবে এমন নিশ্চয়তা না পেলে তারা নির্বাচনে আসবে না। এটা তাদের প্রতিজ্ঞা, পণ করেছে। 

‘আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন, এটা যদি মনে না করেন ইমান চলে যাবে' –মানবজমিন

আল্লাহ অদৃশ্য শক্তি দিয়ে শেখ হাসিনাকে ফের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, আল্লাহ অদৃশ্য শক্তি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন। আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন। এটা যদি কেউ মনে না করেন ইমান চলে যাবে। ফেরেশতা দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন। এটাই সত্য, এটাই বাস্তব। গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত 'শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা' কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, রাজনীতির নামে কেউ মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে বিন্দু পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না। মেয়র মুজিব বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ সরকার। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।

ঢাকা-১৭ আসন ৯ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে জনপ্রতিনিধি হওয়া কী ইঙ্গিত দিচ্ছে-প্রথম আলো

ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৮১৬ জনের ভোটে উপনির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

অর্থাৎ, নির্বাচনী এলাকার মাত্র ৯ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে গঠিত এ আসনের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আরাফাত জাতীয় সংসদে বসতে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত কমসংখ্যক ভোটারের সমর্থন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা বা অসুবিধা নেই, কিন্তু বিষয়টি দৃষ্টিকটু।

সাধারণত সংসদের উপনির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকে। এ ছাড়া আগামী মাস চারেকের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম ছিল। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এ উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি। এসব কারণে ভোট পড়ার হার কম।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের পর এ প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরাও কি ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে জনমনে ভোটের প্রতি একধরনের অনাগ্রহ তৈরি হতে থাকে। বিভিন্ন নির্বাচনে নানা অনিয়ম-জবরদখলের ঘটনায় নির্বাচনব্যবস্থাসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। ভোটের ফল নির্ধারণে ভোটারদের তেমন একটা গুরুত্ব নেই, ক্ষমতাসীনেরা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তিনিই জয়ী হবেন—এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে ভোটারদের বড় অংশের মধ্যে ভোট–বিমুখতা তৈরি হয়েছে।

গত সোমবার ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন হয়। এ উপনির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। এখানে আওয়ামী লীগের আরাফাতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম।

ফলাফলে দেখা যায়, দুজনের মধ্যে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে ফারাক বিস্তর। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরাফাত পান ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলম পান ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। অবশ্য এ উপনির্বাচনে পড়া মোট ভোটের ৭৭ শতাংশ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

প্রথম আলোর মতামত কলামে-সাংবাদিক কামাল আহমদ লিখেছেন ,বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখাই কি উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, অনেকেই যেমনটি আশঙ্কা করছিলেন, তা-ই ঘটতে শুরু করেছে। বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা যে রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলবে এবং তার কারণে সহিংসতা, অঙ্গহানি ও প্রাণহানির মতো দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়েই নাগরিক সমাজের অনেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। সংঘাত হতে পারে—এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ধারণা, সম্ভবত পাল্টা কর্মসূচি না দিলে মানুষ তাঁদের ক্ষমতাহীন ভাববে।

রাজনৈতিক সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য আলোচনার আহ্বান উপেক্ষা করে তাই চলছে সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ, মিছিলের জবাবে মিছিল। কর্মসূচির জবাবে কর্মসূচি ভিন্ন দিনে, ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন আঙ্গিকে করার সুযোগ থাকলেও তেমনটি হচ্ছে না। উপরন্তু আছে বিরোধীদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা; সেটা কখনো মারধর করে, আবার কখনো সুতোর টানে যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে; আর উত্তেজনার পারদ চড়ানো ভাষায় বক্তৃতা তো আছেই।

সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রবণতা যেটি লক্ষণীয়, তা হলো পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়। এতে যদি কারও ধারণা হয় যে তারা একযোগে অথবা সমন্বয় করে বিরোধীদের দমন অভিযানে নেমেছে, তাহলে তা কি অযৌক্তিক হবে? লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার প্রাণহানি, বগুড়া, জয়পুরহাট, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে সহিংসতায় যেসব রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ জখম হলেন, এগুলোর সবই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির হতভাগা শিকার। এসব ঘটনা যে সহজেই এড়ানো যেত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

বছরখানেক ধরে বিএনপি যে আন্দোলন করে চলেছে, তাতে যে বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো তারা সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সচেষ্ট। কোনো ধরনের উসকানিতে বা ফাঁদে পা না দেওয়ার একটা সচেতন প্রয়াস তাদের বিভিন্ন স্তরের কর্মসূচিতেই লক্ষণীয়। তারা সাংগঠনিক অন্তঃকলহে নিজেরা নিজেরা লড়াই করে, খুনখারাবিও করে এবং সেগুলোর কারণে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন পর্যন্ত এমন জায়গায় যায়নি, যাকে সহিংস বলা যাবে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক পরিসরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং তারা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, তখন ক্ষমতাসীন দল কেন আরও অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু আচরণ করছে, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের প্রতি পক্ষপাত করছে এবং সহিংসতা বিস্তারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ইইউ আগেই বলেছে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ না হলে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্রও ব্যতিক্রম করবে বলে মনে হয় না। তাহলে কি ক্ষমতাসীন দল আসলে একতরফা নির্বাচনের পথেই হাঁটছে? 

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

মণিপুরের বিতর্কিত ভিডিও যেন শেয়ার না হয়, অশান্তি এড়াতে টুইটারকে নির্দেশ কেন্দ্রের-সংবাদ প্রতিদিন

দুই বিবস্ত্র নারীর ভিডিও, দুই মাস পর মণিপুর নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন মোদি

গোষ্ঠীহিংসা দীর্ণ মণিপুর (Manipur) নতুন করে অশান্ত। নেপথ্যে বিতর্কিত ভিডিও। যেখানে দেখা গিয়েছে, নগ্ন অবস্থায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুই মহিলাকে। অভিযোগ, গণধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন তাঁরা (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল)। যা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে।

দুই মাস আগে ধারণ করা মণিপুর রাজ্যের সহিংসতার একটি ভিডিও নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। ওই ভিডিও অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

এই ক্ষোভের মুখে এত দিন ধরে মণিপুর নিয়ে মৌন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম মুখ খুললেন। তিনি বলেন, এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। একজন অপরাধীও পার পাবে না।

আজই শুরু হয়েছে ভারতীয় সংসদের বাদল অধিবেশন। প্রথম দিনেই মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেসসহ বিরোধীরা মুলতবি প্রস্তাব জমা দেন। সরকারপক্ষও আলোচনায় রাজি।

ভিডিওটিতে যে ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে, তা গত ৪ মে ধারণ করা। আগের দিনই হিন্দু মেইতি ও খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, দুই মণিপুরি তরুণীকে বিবস্ত্র করে এক দল উত্তেজিত জনতা রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে একটি মাঠে নিয়ে যাচ্ছে। সেই মাঠে ওই দুই নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।

এত দিন পর ওই পুরোনো ভিডিও কী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল, কারা তা করল, কোন উদ্দেশ্যে—তা দ্রুত আলোচনায় উঠে আসে। গতকাল বুধবার রাতেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তৎপর হয়ে ওঠে। সামাজিক মাধ্যম কেন ওই ভিডিও বন্ধে উদ্যোগী হলো না, সেই প্রশ্ন আলোচিত হতে থাকে।

সরকার মনে করছে, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বোঝা উচিত ছিল, ওই ভিডিও নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করবে। সে জন্য আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। ভিডিওটি যাতে ভাইরাল না হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল। এ নিয়ে আজ সকাল থেকেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নির্দেশ দেওয়া হয় সেই ভিডিও প্রত্যাহারের। মণিপুর প্রশাসন সকাল ১০টা নাগাদ জানায়, ওই ঘটনার অন্যতম প্রধান পান্ডাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিজেপি–শাসিত মণিপুরে অশান্তির ১০ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। অগুন্তি ঘরবাড়ি, গির্জা, মন্দির ধূলিসাৎ হয়েছে। ৬০ হাজার মণিপুরি এখনো শরণার্থীশিবিরে বন্দী।

মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এত দিন একবারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী মোদি মুখ খোলেননি। বিরোধীদের সমস্বর প্রতিবাদের মধ্যেই ভাইরাল হয় ভিডিওটি। যেদিন তা জনসমক্ষে ছড়িয়ে পড়ে, তার পরের দিন থেকেই শুরু সংসদের অধিবেশন। সেই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার মুখে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো সরব হলেন। একই সঙ্গে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

বিরোধীরা অবশ্য মণিপুর নিয়ে আলোচনার জন্য লোকসভায় মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।

শুভেন্দুর পর মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের বিরুদ্ধে FIR করতে চেয়ে জনস্বার্থ মামলা হাই কোর্টে-সংবাদ প্রতিদিন

রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চেয়ে আদালতে দায়ের মামলা। তাঁদের বক্তব্যের জেরে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে বলে মামলাকারীর অভিযোগ। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেন মামলাকারী।

মণিপুর নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ, বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন মুলতুবি হয়ে গেল রাজ্যসভা এবং লোকসভা-আনন্দবাজার পত্রিকা মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধী দলগুলির বিক্ষোভের জেরে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনই মুলতুবি হয়ে গেল সংসদ। যা থেকে অনেকেই মনে করছেন মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের সম্মিলিত বিক্ষোভের জেরে আগামী দিনগুলিতেও ভন্ডুল হতে পারে সভার কাজ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয় সংসদের অধিবেশন শুরু হতেই বিরোধী সাংসদদের একাংশ ‘মণিপুর মণিপুর’, ‘মণিপুর জ্বলছে’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাঁরা এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চান।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২০

ট্যাগ