অক্টোবর ১৯, ২০১৮ ১৭:২১ Asia/Dhaka

ইন্টারনেটে কাজ করতে গিয়ে আমরা নানা কারণেই নিজের অজান্তেই ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাড্রেস, নাম, পেশা ও অবস্থান উল্লেখ করছি।

এটি কোনো না কোনো সার্ভারে সংরক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো আর ব্যক্তিগত থাকছে না। দেখা দিচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা। বাস্তবতা হচ্ছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি চুরি করে কাউকে উত্ত্যক্ত এবং ব্ল্যাকমেল করার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা খর্ব করার ঘটনাও কম নয়। সামান্য অসতর্কতার কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। আমরা এর আগেও বলেছি প্রতিটি জিনিসেরই ভালো দিকের পাশাপাশি মন্দ দিকও থাকে। ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতেরও অনেক ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু মন্দ দিক রয়েছে। ইন্টারনেট যেমন আমাদের জন্য বিশাল তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করছে এবং সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের একটা বড় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ঠিক তেমনি অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু অসতর্ক হলেই সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন খুব সহজেই মেয়েবন্ধু বা ছেলেবন্ধু পাওয়া যায়। একে অপরকে ভালোভাবে না জেনে না চিনে পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে তারা। অস্বচ্ছ ধারণার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার কারণে মানুষের আবেগ একটা জায়গায় আর আবদ্ধ থাকছে না। আবেগ-অনুভূতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। অনেকেই মিষ্টি কথায় ফাঁদে পড়ে অন্যকে সহজেই বিশ্বাস করেন। অনেকে জানেনও না যে,  ইন্টারনেটেও বাস্তব জগতের মতো খারাপ মানুষের অভাব নেই। সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে অনেক প্রতারক মেয়েদের টার্গেট করে। এমনকি গৃহবধুদের ফাঁদে ফেলে দেয়।  দীর্ঘদিন ধরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে,এরপর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সেটা ভিডিও করে পরে ব্ল্যাকমেল করে। ব্ল্যাকমেলের কারণে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে সরলমনা মানুষেরা। অনেকে এ অবস্থার মধ্যে পড়ে মানষিক রোগী হয়ে যান।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকেই কেনাকাটা ও আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। কখনো ভুলে জালিয়াতি চক্রের ওয়েবসাইটে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড লিখে ফেললে তা চুরি হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো কোনো জালিয়াত চক্র কৌশলে কোনো বিখ্যাত ওয়েবসাইটের মতো করে অবিকল নকল ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের নিয়ে যায়। সেসব ওয়েবসাইটে লেনদেন করার সময় কার্ডের তথ্য চুরি হয়ে যায়। এছাড়া, জালিয়াত চক্র এটিএম মেশিনের সঙ্গে স্কিমিং ডিভাইস যুক্ত করে দেয়। কার্ড রিডার স্লটে যুক্ত করা স্কিমিং ডিভাইসটি, কোনো গ্রাহক তার কার্ড সোয়াইপ করলে বা চার্জ করলে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থেকে তথ্য কপি করে নেয়। আর কার্ডের পিন নম্বর পাওয়ার জন্য মেশিনের কাছে ক্যামেরা সেটআপ করে রাখে। এরপর ওই সব তথ্য ব্যবহার করে যখন-তখন অর্থ হাতিয়ে নেয় জালিয়াত চক্রের সদস্যরা।

গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকেও তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকছেন। কেউ কেউ আবার ইন্টারনেটে আর্থিক লেনদেন বা কেনাকাটা থেকে বিরত থাকেন। আমেরিকার অনেক নাগরিকও ইন্টারনেটে মৌলিক কাজ বন্ধ রেখেছেন কেবল গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে। কারণ তারা ইন্টারনেটে এমন সব হয়রানির শিকার হয়েছেন যে, এই প্রযুক্তিই এখন তাদের কাছে ভীতিকর মনে হয়। তবে বাস্তবতা হলো, ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতকে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এর ব্যবহার চালিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেকটাই মোকাবেলা করা সম্ভব।

ইন্টানেট ব্যবহারে নিরাপদ থাকতে পাবলিক ওয়াইফাই যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ হ্যাকাররা একই নেটওয়ার্কের অধীনে থাকা ডিভাইসগুলোর নিয়ন্ত্রণ সহজেই নিতে পারে। এমন কোনো ছবি কখনোই তোলা বা শেয়ার করা উচিত নয়, যা কোনো তৃতীয় ব্যক্তি দেখলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মনে রাখা উচিত, ছবি হাজার বার ডিলিট করলেও তা রিকভার করার সম্ভাবনা থেকেই যায়,তাই স্পর্শকাতর ছবি তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের ব্যবহার করা পুরোনো ফোনও অপরিচিত লোকদের কাছে বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ পুরোনো মোবাইলের ডিলিট করা তথ্য রিকভার করে তা অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়। ফেসবুক বা ইমোর মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ধরনের ব্যক্তিগত ছবি আদান-প্রদান করা ঠিক নয়। কারণ যদি একজনের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় তাহলে অপরজনও বিপদে পড়বেন। কোনো অবস্থাতেই নিজের ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়া যাবে না।

ভেবেচিন্তে যেকোনো লিঙ্কে ক্লিক করা উচিত। কারণ ম্যালওয়্যার লিঙ্কে ক্লিক পড়ে গেলে নিজের অ্যাকাউন্টের এক্সেস হ্যাকারের কাছে চলে যেতে পারে। দোকানে ফোন ঠিক করতে দিলে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকা উচিত। এছাড়া অনলাইনে ডলার বা পাউন্ড বিনিময় করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ আইনের দৃষ্টিতে এটি অবৈধ। এই লেনদেন করতে গিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে বা ডলার বিক্রয় করতে গিয়ে ধরা পড়লে আইনি সমস্যায় পড়তে হবে। অনলাইনে কোনো পণ্য কিনলে তা আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। সাইবার ক্রাইম, অনলাইন ব্ল্যাকমেল,অনলাইনে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি-এ সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে দ্রুত থানায় জানাতে হবে। অনেকে লজ্জার কারণে অথবা বাড়তি ঝামেলা এড়িয়ে যেতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন না। এটা ঠিক নয়। অভিযোগ না করলে অপরাধের প্রবণতা আরও বাড়বে।# 

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৯

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন