অসমে বাল্যবিবাহবিরোধী গ্রেফতার অভিযান চলছে: আতঙ্কে মানুষ, স্থগিত হচ্ছে বিয়ে
(last modified Wed, 08 Feb 2023 06:16:10 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩ ১২:১৬ Asia/Dhaka
  • অসমে বাল্যবিবাহবিরোধী গ্রেফতার অভিযান চলছে: আতঙ্কে মানুষ, স্থগিত হচ্ছে বিয়ে

ভারতে বিজেপিশাসিত অসমে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের মতো গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৪ হাজার ৭৪টি এফআইআর-এর ভিত্তিতে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হলেও রাজ্য সরকার ওই ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এদিকে আতঙ্কে অনেকেই তাদের সন্তানদের প্রস্তাবিত বিয়ে স্থগিত করেছেন।

মুসলিমদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মোহন্ত

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মোহন্তর অভিযোগ-মুসলিমদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এই সমাজের মুরুব্বিরা বাল্যবিবাহকে প্রশ্রয় দেওয়ায় তা রাজ্যের সারবিক ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।    

বিয়ে স্থগিত হওয়ায় হোটেল ইত্যাদি বুকিং বাতিল    

বিয়ে স্থগিত হওয়ার বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের জানানো হয়েছে। সম্মানহানির  ভয়ে যারা বিয়ে স্থগিত করছেন তারা তাদের নাম প্রকাশ করছেন না। তবে অসমের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটিতেই ৪টি জায়গায় বিয়ের স্থান এবং হোটেল ইত্যাদি থেকে বুকিং বাতিল করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এক তরুণী রেশমা (নাম পরিবর্তিত) বলেন,  তার অনুরোধে পরিবার বিয়ে স্থগিত করেছে কারণ নথি অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হতে এক মাস বাকি।

এটা শুধুমাত্র একটা উদাহরণ হলেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এ রকম বিয়ে স্থগিত করার বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এর পাশাপাশি অনেকে নথিপত্রে তারিখ, নাম ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোকে সংশোধন করার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। অনেক বিবাহিত মহিলা আছেন যারা বিয়ের সময় নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রমাণ করার জন্য নথিপত্র সংশোধনের জন্য এখান থেকে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  

গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে, স্টেডিয়ামকে জেল বানানো হচ্ছে 

অসম পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে,  মাটিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পের পাশাপাশি শিলচর স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে গ্রেফতারকৃতদের অন্য অপরাধীদের থেকে দূরে রাখা যায়। এদিকে, কারাগারে জায়গা না হওয়ায় বন্দিদের গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পেও রাখা হচ্ছে।  

পুত্রবধূর ভুল তথ্যে তার শাস্তি পাচ্ছে ছেলে  

জামালউদ্দিন নামে এক গ্রামবাসীর ছেলে রাজিবুল হোসেন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তার অভিযোগ, পুত্রবধূর আধার কার্ডে উল্লেখিত জন্ম তারিখের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিয়ের সময় দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। পুত্রবধূ গর্ভাবস্থায় আশা কর্মীকে তার আধার কার্ডের বিবরণ দিয়েছিলেন। এখন পুরাতন পরিচয় নথিতে জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য পুত্রবধূ তার মায়ের বাড়ি মরিগাঁও যেতে বাধ্য হচ্ছে।  

নথিপত্রে ভুল সংশোধন করা হয়নি কেন: পুলিশ   

দক্ষিণ শালমারার এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, বেশিরভাগ বাল্যবিবাহের ঘটনা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। লোকেরা তাকে তাদের আধার কার্ড দিয়েছে যাতে ‘জন্ম তারিখ ইত্যাদি সম্পর্কিত বড় ভুল’ রয়েছে। ভুলভাবে গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, লোকেরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে এই নথিগুলো ব্যবহার করছে। সে সময় ভুলগুলো কেন সংশোধন করা হয়নি? 

১৭ শতাংশ গর্ভবতী মহিলা অপ্রাপ্তবয়স্ক  

এদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, গত বছর রাজ্যে ৬ লাখ ২০ হাজার ৮৬৭ জন মহিলা গর্ভবতী হয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার ২৬৪ জন অর্থাৎ, ১৯ বছর বা তার কম বয়সী ১৭ শতাংশ কিশোরীকে গর্ভবতী পাওয়া গেছে।#   

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।