মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে মোদী, ঘরে-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
(last modified Tue, 20 Jun 2023 10:20:50 GMT )
জুন ২০, ২০২৩ ১৬:২০ Asia/Dhaka
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে মোদী, ঘরে-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তিন দিনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের উদ্দেশ্যে দিল্লি থেকে রওয়ানা হয়েছেন। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, আগামীকাল (বুধবার)রাত দেড়টা নাগাদ তিনি ওয়াশিংটনের অ্যান্ড্রুস এয়ারফোর্স বেসে নামবেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বার্তায় বলেছেন, ‘ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বহুমুখী, সব ক্ষেত্রেই গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পণ্য ও পরিসেবার ক্ষেত্রে  ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করি। ক্রিটিক্যাল এবং ইমার্জিং টেকনোলজিস উদ্যোগ প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা, মহাকাশ, টেলিযোগাযোগ, কোয়ান্টাম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বায়োটেক সেক্টরে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং সহযোগিতা বিস্তৃত করেছে।’ 

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক হবে। পররাষ্ট্রসচিব বিনয়মোহন কোয়াত্রা বলেন, এই বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি এবং বিকাশে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা। পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যে সহযোগিতা বাড়ানো নিয়েও কথা বলবেন মোদী-বাইডেন। আলোচনায় উঠে আসবে টেলিকম, মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত কথাবার্তাও।

বৃহস্পতিবার ওই বৈঠকের পর মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ২৪ ও ২৫ জুন মিশরে থাকবেন তিনি। মিশরের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সেখানে যাচ্ছেন মোদী।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। মণিপুরে চলমান সহিংসতারোধে তিনি  যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মণিপুর জ্বলছে, আমি আমেরিকায় চললাম। এ ব্যাপারে হিন্দিতে ছন্দ মিলিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে।  যার অর্থ- দায়িত্ব থেকে পালানো আমার পুরনো অভ্যাস, আমি প্রচার ছাড়া কিছুই জানি না। 

বিরোধীদল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আজ আরেক বার্তায় বলা হয়েছে,  ‘মণিপুরে   শতাধিক মানুষ মারা গেছে। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন। প্রায় ৫০ দিন ধরে সহিংসতা চলতে থাকলেও মণিপুরের 'ম'  বলতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী।  একদিকে মণিপুর জ্বলছে। আমাদের দেশের মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে অনুনয় বিনয় করছে। তারা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে,  আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এবার সেখানে ইমেজ উজ্জ্বল করার কাজ হবে, ইভেন্ট হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী মনে রাখবেন, একবার অটলজি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী) আপনাকে 'রাজধর্ম' অনুসরণ করতে শিখিয়েছিলেন। এটা সেই সময় যখন ‘রাজধর্ম’  পালন করা উচিত। মণিপুর জ্বলতে থাকলেও, আপনি শান্তির আবেদনটুকুও করেননি। এ সময় হল আমাদের দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়, ইমেজ পালিশ করার নয়। দায়িত্ব থেকে পালিয়ে  যাবেন না।’  

প্রায় ৫০ দিন ধরে জাতিগত সহিংসতায় জ্বলছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী কেন একবারও ইম্ফলে গেলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনাবাসী ভারতীয়দের একাংশ। জানা গেছে, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে মোদীর সফরের দ্বিতীয় দিনে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখতে পাব এই ভাবনাতেই উদ্বেলিত বহু অনাবাসী ভারতীয়। আটলান্টার বাসিন্দা চন্দ্রশেখর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নাচ, গান, মিছিলের পরিকল্পনা করেছি আমরা।’

আগামী ২৩ জুন ওয়াশিংটনে অনাবাসী ভারতীয়দের এক সভায় বক্তব্য রাখবেন মোদী। শিকাগোর ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সোমদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘মোদীর এই সফর রুটিন ভিজিট। তা থেকে আদৌ কতটা লাভ হবে, সেই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে শিক্ষা, গবেষণার মতো ক্ষেত্রে দুই দেশকে পরস্পরের সহায়ক হয়ে উঠতে হবে। সে প্রধানমন্ত্রী সফরে আসুন বা না আসুন।’ এ ভাবে সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/২০