হিমন্তবিশ্ব শর্মার মনগড়া দাবি
'হিন্দুদের দেশ ভারত, দেশে সব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত'
ভারতের বিজেপিশাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘ভারত হিন্দুদের দেশ, এদেশে সব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ আজ (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে প্রকাশ, গতকাল (বুধবার) এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ ধরণের মন্তব্য করেন।
বিজেপি নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, তিনি চান সব মাদ্রাসা বন্ধ করে সেখানে মেডিক্যাল কলেজ, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক। কারণ মাদ্রাসায় তৈরি হয় ‘মোল্লা’। আর ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয় ডাক্তার, দার্শনিক। হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘আমি যদি মুসলিম এলাকায় গিয়ে তাদের বলি আপনাদের সন্তানকে ‘মোল্লা’ নয়, চিকিৎসক বানাতে চাই তাহলে তাদের খুশি হওয়া উচিত।’
অসমে হিমন্তবিশ্ব শর্মার আমলে সরকারি খরচে চলা মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরফলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে বিরোধীদের একাংশ ও বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন সোচ্চার হয়েছে। সেই ঘটনার জের না মিটতেই এবার দেশের সব মাদ্রাসা বন্ধের পক্ষে সাফাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতি’র মুখপাত্র ও ‘জমিয়তে উলামা বাংলা’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সৈয়েদ সাজ্জাদ হোসেন আজ (বৃহস্পতিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে উনার কোনও ধ্যানধারণা নেই। যদি এ সম্পর্কে ধারণা থাকত তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে উনি এ ধরণের মন্তব্য করতেন না। কারণ, ‘মাদ্রাসা’ একটা আরবি শব্দ। যার অর্থ স্কুল, বিদ্যালয় বা মাদ্রাসা একই। উনি মাদ্রাসার ইতিহাস জানেন না। আজকে স্মরণ করা হচ্ছে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের, আজ তাঁর জন্মদিন। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি হাজার হাজার মাদ্রাসা তৈরির দিকে না গিয়ে তিনি মাদ্রাসাগুলোকে আরও আধুনিকীকরণ করার কথা বলেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘‘আইআইটি’র প্রবর্তক হচ্ছেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ‘যোজনা কমিশন’, ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’-এর পরিকল্পনার কথা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মাথায় এসেছিল। এ ধরণের বহু মাওলানা দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে বিলাসিতা, ঐশ্বর্য সবকিছু ত্যাগ করে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন।’
বিজেপি নেতা ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে টার্গেট করে ‘মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতি’র মুখপাত্র সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয় উনি ইতিহাস পড়েননি, বা ইতিহাস জানার চেষ্টাও করেন না। সেজন্য মাদ্রাসা সম্পর্কে উনি অবান্তর, অশোভন মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে মাদ্রাসাগুলোকে শুধু হেয় করা নয়, উনি ভারতের ঐতিহ্যবাহী ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধানকে অমান্য করেছেন। মাদ্রাসা থেকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়। মাদ্রাসা পড়ুয়া আলেমের কোনও বাবা-মা গোটা ভারতে কোনও বৃদ্ধাশ্রমে নেই। তাদের বাবা-মায়েরা অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন না। মাদ্রাসা থেকে দেশপ্রেমের শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা উনার মন্তব্যের চরম নিন্দা করছি, চরম প্রতিবাদ করছি।’
‘এ ধরণের মানুষগুলো আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে, দেশে গণতন্ত্রের উপরে আঘাত হানছে, দেশের সংবিধানকে অস্বীকার করছে, যেটা আগামীদিনে ইতিহাস কিন্ত ক্ষমা করবে না। ইতিহাসে একটা সময় আসবে যখন এর জবাব কিন্তু তাঁদেরকে দিতেই হবে’ বলেও মন্তব্য করেন ‘মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতি’র মুখপাত্র ও ‘জমিয়তে উলামা বাংলা’র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সৈয়েদ সাজ্জাদ হোসেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/ বাবুল আখতার/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।