মার্চ ১৭, ২০২৪ ১৪:১৩ Asia/Dhaka
  • ইরানে নারীর অধিকার বিষয়ে মিথ্যাচার করে বিশ্বের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা / ধর্ষণের জন্মভূমি আমেরিকা

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি ইরানি নারীদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার ভিত্তিতে এটা মনে হচ্ছে যে তারা দেশটির নারীদের অধিকারের রক্ষক হয়ে উঠেছে।  

প্রথমত: আমেরিকা কি আসলেই ইরানি নারী ও মেয়েদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন?

চলতি বছরের গত ৮ মার্চ  জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি ইরানে "নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য"কে "মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ"আখ্যা দিয়ে ইরান বিরোধী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মিথ্যাচারে ভরপূর জাতিসংঘের কথিত এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের কর্মকর্তারা।   

গাজার খবর কি?

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি বলেছেন, জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের অর্থায়নে মানবাধিকার ইস্যুতে নানা নাটকের পাশাপাশি ইরানকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর তথাকথিত আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই মিশনের পক্ষ থেকে এখন ইরানের বিষয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তারা বাস্তবতাকে উল্টোভাবে তুলে ধরেছে।      

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি

ইহুদিবাদী ইসরাইল, আমেরিকা ও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ইরানবিরোধী প্রতিবেদন তৈরির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এই কথা উল্লেখ করে কানয়ানি বলেন, এই প্রতিবেদন মানবাধিকারের মতো মহৎ ইস্যু এবং মূল্যবোধ অপব্যবহারের একটি স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এটা করা হয়েছে।  এই প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে, তথাকথিত আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন  জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকা ও ইহুদিবাদীদের এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করে এবং এই মিশনের সঙ্গে জড়িতদের বেতন পরিশোধ করে এসব দেশ ও গোষ্ঠী। এই মিশন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনাকে উল্লেখিত দেশগুলোর অশুভ ও অবৈধ লক্ষ্য হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

কানানি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর এসব দেশ ইরানি জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়।

ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের পরিবর্তে পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত তাদের নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মোকাবেলা করা।বিশেষত যদি তাদের মানবাধিকার এবং নারী অধিকারের প্রতি সততা এবং সহানুভূতি থাকে তবে তাদের উচিত অবরুদ্ধ গাজায় হাজার হাজার মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলা। গত ৫ মাসে গাজায় ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে যার মধ্যে ৭০ ভাগের বেশি  নারী এবং শিশু।  তাদের উচিত গাজায় গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়ে সমর্থন না করা।

গাজায় নারীদের কি ঘটছে?

কিছুদিন আগে, ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছিল আমরা গাজায় বসবাসকারী কিছু ফিলিস্তিনি নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি যারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছিল এবং সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। তারা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেছেনে যে তারা ইহুদিবাদী সৈন্যদের দ্বারা নির্মম নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহারের মতো নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়েছিলেন। দখলদার সৈন্যরা এসব নারীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল এবং তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে কাপড় খুলে ফেলতে বাধ্য করে। ইসরায়েলি সৈন্যরা দীর্ঘক্ষণ ধরে এই নারীদের হাত-চোখ বেঁধে পশুর মতো খাঁচায় আটকে রেখেছিল। তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা ও সরবরাহ থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা তাদের সন্তানদের দেখা থেকে বঞ্চিত হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের সম্পত্তিও লুট করে।

হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করছে ইহুদিবাদী ইসরাইল

ফিলিস্তিনি নারীদের নৃশংসভাবে নির্যাতন করা এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা একটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী গণহত্যার অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যা ইসরাইল গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চালিয়ে আসছে। আমরা রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটিকে তার দায়িত্ব পালন করতে এবং ইসরাইলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের পরিস্থিতি অত্যন্ত জোরালোভাবে তদন্ত করা আহ্বান জানাচ্ছি ।

 চলুন দেখি আমেরিকায় নারীরা কেমন আছে

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। নারী ইস্যু নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে মন্দ হয় না।

আমেরিকার ক্রাইম সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, "প্রতিদিন গড়ে ১৮৭১ জন নারী এই দেশে যৌন নিপীড়নের শিকার হন। মার্কিন সেনাবাহিনীতে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে অন্তত একজন ধর্ষিত হয়। পরিসংখ্যান আরো দেখায় যে মার্কিন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ৯০% ভাগ নারী পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ধর্ষিত হয়েছিল।

জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি তিনজন আমেরিকান নারীর মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯% নারী তাদের জীবনে অন্তত একবার ধর্ষিত হয়। এছাড়া প্রায় ৪৩% আমেরিকান নারী তাদের জীবনে যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারীবন্দি যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থাৎ, আমেরিকায় ২ লাখেরও বেশি মহিলা বন্দি রয়েছে যা এই দেশের কারাগারের জনসংখ্যার ১০%।

আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে বহু বছর দেশটির কালো বর্ণের মানুষরা বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। 

আমরা ইউরোপেও এর চেয়ে ভালো পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি না।  উদাহরণস্বরূপ, সুইডেনে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নারী ধর্ষিত হয়। বিচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে যৌন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৮৫ হাজার নারীর ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে। পরিসংখ্যান দেখায় যে প্রতি পাঁচজন ব্রিটিশ নারীর মধ্যে একজন ১৬ বছর বয়সের আগে যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে। ইংল্যান্ডের মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধের ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে যে গত দুই বছরে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ৪৬৩টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

গ্লোবাল রিসার্চ ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায় তখন সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশের চাহার বুলাক অঞ্চলের একটি গ্রামে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে। পরিশেষে নারী অধিকারের এই মিথ্যা দাবিদাররা ইরানি নারীদের মর্যাদা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং এটি পশ্চিমাদের মিথ্যা জগতের একটি ছোট প্রতীক মাত্র।

এর পরিপ্রেক্ষিতে হিটলারের নাৎসি সরকারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলস বলেছিলেনম, "মিথ্যা যত বড়, জনগণের পক্ষে বিশ্বাস করা তত সহজ... মিথ্যাকে এত বড় করে বল যে কেউ যেনো অস্বীকার করার সাহস না করে।" তিনি বলেছিলেন: "কখনও কখনও আমি এমন মিথ্যা বলেছি যে আমি নিজেই তাতে ভয় পেয়েছি।"#.

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ