এক সন্ত্রাসবাদীর প্রতি জার্মান সরকারের সমর্থনে ইরানি গণমাধ্যমগুলোর প্রতিক্রিয়া
তেহরানে 'জার্মান দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া উচিত'
পার্স-টুডে-ইরানের বিশিষ্ট সাংবাদিক হোসাইন শরিয়তমাদারি প্রতিবাদী এক প্রবন্ধে লিখেছেন: ইরানে জার্মান রাষ্ট্রদূত ও জার্মান দূতাবাসকে উপস্থিত থাকতে দেয়ার অর্থ কি ইসরাইলি কনস্যুলেট খোলার অনুমতি দেয়া নয়?
সম্প্রতি ইরান জামশিদ শরমাহদ্ নামের এক সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। এই সন্ত্রাসী ছিল তুনদার নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রিং-লিডার। ইরানের বহু নারী ও শিশুসহ নিরপরাধ অনেক ব্যক্তিকে হত্যার দায় স্বীকার করেছিল পশ্চিমা-মদদপুষ্ট এই সন্ত্রাসী। জার্মানির পাসপোর্টধারী এই সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড গত ২৮ অক্টোবর কার্যকর করা হয় আদালতের রায়ের ভিত্তিতে। আপিল ও বিচার-প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন করার পর এই শাস্তি তথা উচ্চতর আদালতের রায় কার্যকর করা হয়।
পার্স-টুডে জানিয়েছে, এই সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর জার্মানি অযৌক্তিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং এর জবাবে ইরানের গণমাধ্যমগুলোও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
পশ্চিমাদের মদদে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী নানা গ্রুপ
ইরানের তাসনিম নামক সংবাদ সংস্থা লিখেছে, পশ্চিমা মদদপুষ্ট একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের লিডারের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জার্মানির কাছে ভালো লাগেনি। জার্মানি ইরানি-জার্মান এই সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রতিবাদে নিজ রাষ্ট্রদূতকে তেহরান থেকে বার্লিনে ডেকে আনে।
ইরানে জার্মান দূতাবাস ইসরাইলেরই কনস্যুলেট মাত্র এবং তা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত
এদিকে পাল্টা এক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের বিশিষ্ট সাংবাদিক হোসাইন শরিয়তমাদারি প্রতিবাদী একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল 'জার্মান দূতাবাস নাকি ইসরাইলি কনস্যুলেট?!" তিনি লিখেছেন, জার্মান সরকারের চরিত্র এখন ইসরাইলের মতই এবং এর প্রমাণগুলো অনস্বীকার্য। তাই এতে ন্যুনতম সন্দেহও আর বাকি নেই যে ইরানে জার্মান দূতাবাস ইসরাইলেরই কনস্যুলেট মাত্র এবং তা কি অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত নয়?! তিনি আরও লিখেছেন, ইরানে জার্মান রাষ্ট্রদূত ও জার্মান দূতাবাসকে উপস্থিত থাকতে দেয়ার অর্থ কি ইসরাইলি কনস্যুলেট খোলার অনুমতি দেয়া নয়?
ইরানে এক সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ডে পশ্চিমা অসন্তোষ
ইরানের 'সিয়াসাতে রুজ বা দৈনিক রাজনীতি' নামের একটি পত্রিকা পাশ্চাত্য ও মানবাধিকার নামের বড় মিথ্যাচার শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছে, ইরানের উচ্চ আদালতের পরিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বহু সংখ্যক হত্যাযজ্ঞের দায়ে দোষী হিসেবে একজন সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় পাশ্চাত্য নিন্দাবাদী নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আর এ থেকেই তাদের ইরান-বিরোধী ও মানবতা-বিরোধী চরিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
অশান্তি সৃষ্টিকারী এক সন্ত্রাসীর প্রতি ইউরোপের সমর্থন
ইরান নামক ইরানি দৈনিকও এই ঘটনার বিষয়ে পশ্চিমা প্রতিক্রিয়ার জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, ইউরোপ অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যার ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে আছে। অন্যদিকে একজন সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তেহরান ও ইউরোপের কোনো কোনো রাজধানীর মধ্যে কূটনৈতিক বিতর্ক বা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থনে জার্মান সরকারের দ্রুত গতি
এক ইরানি-জার্মান সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনাকে ঘিরে জার্মানির তিনটি শহরে ইরানি কনস্যুলেট বন্ধ করে দিয়েছে বার্লিন। এ সম্পর্কে ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ এজেন্সি ইসনা ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে। ওই বক্তব্যে আরাকচি বলেছেন, তুন্দার নামক সন্ত্রাসী গ্রুপের রিং লিডার এক ইরানি জার্মান নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় জার্মানি দেশটির মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্ট ও হামবুর্গ শহরে ইরানি কনস্যুলেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! কারণ জার্মান সরকার এই দিনগুলোতে যুদ্ধ-অপরাধী ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দেয়াকে ও ইরানের সঙ্গে জার্মানির গভীর এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক ক্রমেই ধ্বংস করার কাজকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে! #
পার্সটুডে/এমএএইচ/০২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।