বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১: রেডিও তেহরানের শ্রোতার ভাবনা
সভ্যতার অগ্রগতি মানেই নানা বিধ উন্নয়ন। যা ছিল, যা আছে, তার থেকে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়া মানুষের ধর্ম। মানব সভ্যতার এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির রথ চলমান, এই যুগ যান্ত্রিক যুগ। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অবদান।
প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সার্থক প্রয়োগ। এই উন্নত শীর্ষ থেকে মানুষ আর আরণ্যক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। অথচ আজ পৃথিবীর দূষিত পরিবেশে যা দুরবস্থা, তাতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত উক্তি:
'দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর/ হে নব সভ্যতা'।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, বিজ্ঞানের কৃপাধন্য মানব সভ্যতার এই আকাশচুম্বী উন্নয়নই দূষণ জর্জরিত পরিবেশের জন্য দায়ী।
উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উন্নয়নের বহরে অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষিত হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অন্তরায় হয়ে ওঠে। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মানুষকে সভ্যতা গড়তে হবে। পরিবেশকে বাঁচিয়ে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক উন্নয়ন। পরিবেশ শুধু প্রকৃতিগত নয়, মানুষ, সমাজ, মানুষের মানসিক সুস্থতা সব নিয়েই পরিবেশ। উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের যোগসূত্রতা গভীর ও একাত্ম।
আমাদের মত কৃষিপ্রধান দেশ কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নে খুবই জরুরী। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন বলতে বোঝায় অল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফলনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে কৃষির ক্রমোন্নয়ন ঘটে চলেছে। এই উন্নয়নের ফলে আপাতদৃষ্টিতে পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে হয় না। কিন্তু কৃষি উন্নতির ফলে একদিকে যেমন কৃষকদের স্বচ্ছলতা বাড়ছে পরিবেশ দূষণ ও ঘটছে। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার আজ অপরিহার্য। আর এসবের ব্যবহারের ফলে জল এবং মাটি ব্যাপক পরিমাণে দূষিত হচ্ছে।
শিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় শিল্পকে। বর্তমানে ক্ষুদ্র-মাঝারি ভারী শিল্পের বিকাশ ঘটছে। একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে, বহু মানুষ কাজকর্মে সুযোগ পাচ্ছে এ কথা সত্য কিন্তু পাশাপাশি উন্নয়ন পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বহু বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ বায়ুতে, বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে, জলে মিশছে। অব্যবহৃত শিল্প সামগ্রী, বর্জ্য পদার্থ দূষণের অন্যতম কারণ, কলকারখানার ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক বিষ রূপে।
গ্রাম শহর সর্বত্র এখন রাস্তাঘাট নির্মাণের উদ্যোগ দেখা দিয়েছে। বহু দুর্গম পথ এখন হয়েছে সুগম। তবে রাস্তাঘাট তৈরির জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে বহু গাছ, যা পরিবেশের পক্ষে অনুকূল নয়। এছাড়াও পরিবেশের পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকারক হচ্ছে যানবাহনের ধোঁয়া। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটলেওবায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে চলেছে। জলপথ ও আকাশ পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ।
দিনে দিনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য আসছে। এই সাফল্যে আবার সংকট ঘনিয়ে তুলছে অনেক। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে উৎক্ষিপ্ত মহাকাশযান পৃথিবীর বায়ুকে ভীষণভাবে দূষিত করছে। পরমাণু গবেষণা ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। গবেষণা চালাতে গিয়ে নিষ্কলুষ বরফের দেশ কেউ মানুষ আজ কলুষিত করে ফেলছে। অ্যান্টার্টিকার বুকে চলছে বিভিন্ন গবেষণা। তার জন্য সেখানে চালানো হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, ব্যবহৃত হচ্ছে মোটরগাড়ি, হেলিকপ্টার, বিভিন্ন গবেষকদল ছেলে আসছে তাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
উন্নয়ন মানুষের লক্ষ্য। বেঁচে থাকা মানুষের ধর্ম। কিন্তু উন্নয়ন যেন মানুষের ধ্বংসের মৃত্যু বীজে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। উন্নয়ন চাই, উন্নয়ন করতে হবে। তবে পরিবেশকে রক্ষা করে। কলকারখানা গড়ে উঠবে, শিল্পের আরো প্রসার হবে, কৃষির প্রসার হবে, কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রশ্ন তাই ও অবদানের নতুন নতুন ইলেকট্রনিক্স শিল্পের বিকাশ হবে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের নিত্য নতুন বিলাসবৈভবের চাহিদা মেটাতে হবে। তা সত্ত্বেও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও সূক্ষ্ম পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জল ও বাতাস জাতি দূষিত না হয়, শব্দের আধিক্য যাতে পীড়নের কারণ না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন হওয়া উচিত। দেখতে হবে সভ্যতার প্রতি যাতে পরিবেশ দূষণের কারণ ও প্রতিপক্ষ হয়ে না দাঁড়ায়, বরং উন্নয়ন হবে পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার সহায়ক। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রেডিও তেহরানের সকল শ্রোতা ভাই-বোনেরা সজাগ হবেন, সচেতন হবেন এই আশা রাখি।
বিধান চন্দ্র সান্যাল
ঢাকা কলোনী, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।