ইশরাককে মেয়র ঘোষণা ইস্যু: নির্বাচন কমিশনের ম্যান্ডেট বললেন আপিল বিভাগ
(last modified Thu, 29 May 2025 10:22:52 GMT )
মে ২৯, ২০২৫ ১৬:২২ Asia/Dhaka
  • ইশরাককে মেয়র ঘোষণা ইস্যু: নির্বাচন কমিশনের ম্যান্ডেট বললেন আপিল বিভাগ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, যেসব প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে ও সমভাবে নির্বাচন কমিশনের মৌলিক ম্যান্ডেটের (আইনগত বা বিচারগত) ভেতরে পড়ে।

লিভ টু আপিলকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় বিলম্ব মার্জনা করে আপিল গ্রহণের কথা বলেছেন হাইকোর্ট।

আজ আপিল বিভাগ বলেছেন সাংবিধানিক যে দায়িত্ব আছে, তা নির্বাচন কমিশন পালন করবে। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত একসঙ্গে পড়লে অর্থ দাঁড়ায় যে নির্বাচন কমিশনকে আপিল করার জন্য বলছেন, যা এত দিন তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পর্যবেক্ষণে ইসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে ইসিকে আপিল করতে বাধ্য। তা না হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা গেজেট স্থগিত চেয়েছিল, তা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। পক্ষ না হওয়ায় এবং আপিল করার যুক্তি না থাকায় ইসি আপিল করবে না বলে আগে জানিয়েছে। আজকে যে আদেশ হলো আবেদনকারীকে লিভ দেননি, কোনো স্থগিতাদেশ দেননি এবং নিষ্পত্তি করেছেন। নিষ্পত্তি করে বলেছেন ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।’

লিভ টু আপিলের ওপর গতকাল শুনানি হয়। আদালত ইসির বক্তব্য শুনতে নোটিশ ইস্যু করে আজ শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়। আদালতে ইসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইয়াছিন খান। লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন শুনানি করেন। ইশরাকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এ কে এম এহসানুর রহমান শুনানিতে ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। শপথ নিয়ে দায়িত্বপালন করছিলেন তাপস। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। একই বছরের ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে ইশরাকের করা নির্বাচনী মামলায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। রায়ে তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করা হয়। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় এবং ইসির গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে চলতি মাসে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। শুনানি নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে ২২ মে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মেয়র ঘোষণা ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে গত সোমবার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। পরদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আজ আদেশ দেওয়া হয়।#

পার্সটুডে/জিএআর/২৯