জানুয়ারি ২৮, ২০২২ ১৮:৩২ Asia/Dhaka

জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি বলেছেন, তার দেশ সিরিয়ায় অবৈধভাবে মোতায়েন সব বিদেশী সেনার দ্রুত প্রত্যাহার চায়। 

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় তিনি ওই দাবির কথা জানান। 

পোলিয়ানস্কি সন্ত্রাস বিষয়ে মার্কিন নীতির নিন্দা জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক পর্যায়ে তো দুরের কথা মার্কিন সরকার নিজ দেশেই সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করছে না! তিনি সিরিয়ার তেল-সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে মার্কিন সেনা অবস্থানের নিন্দা জানিয়ে আরও বলেছেন, মার্কিন সেনা হস্তক্ষেপের কারণে ওইসব অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, অথচ জাতিসংঘ এ বিষয়টিকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না! জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ উপ-রাষ্ট্রদূত সিরিয়ায় নির্বিচার মার্কিন বিমান হামলার বিষয়েও তার দেশের গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।

মার্কিন সেনারা বেশ কয়েক বছর ধরে দায়েশ বা কথিত আইএস সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার নামে সিরিয়ায় দায়েশ-বিরোধী আন্তর্জাতিক জোটের ব্যানারে অবৈধভাবে উপস্থিত রয়েছে যদিও বাস্তবে সিরিয়ার তেল চুরি ও দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা ছাড়া সেখানে অন্য কিছুই করছে না তারা।  

মার্কিন বিমান হামলাগুলোয় বেসামরিক সিরিয় নাগরিকদের নিহত হওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। কেবল সিরিয়ায় নয় মার্কিন বিমান হামলাগুলোয় ইরাক ও আফগানিস্তানেও বহু বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। 

ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরোধী প্রতিরোধ-শক্তির অংশ হওয়ায় সিরিয়ার বৈধ বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে ২০১১ সনের দিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে লেলিয়ে দেয় মার্কিন সরকার ও তার আঞ্চলিক সহযোগী সরকারগুলো যাতে বাশার আসাদ সরকারের পতন ঘটে অথবা এই সরকার দুর্বল হয়ে যায়। এরপর নিজের সর্বাত্মক মদদে গড়ে-তোলা ও সব ধরনের সহযোগিতায় পরিপুষ্ট ওইসব সন্ত্রাসীদের দমনের নামে মার্কিন সরকার ২০১৪ সালের দিকে সিরিয়ায় বিমান ও স্থল হামলা চালায় এবং সেখানে সেনা মোতায়েন করে। স্থানীয় গণ-বাহিনী, সরকারি বাহিনী এবং ইরান ও হিজবুল্লাহর সহায়তায় (সিরিয়ার ক্ষেত্রে রুশ সহযোগিতাও ছিল উল্লেখযোগ্য) ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়ার পরও মার্কিন সেনারা অবৈধভাবে সিরিয়ায় মোতায়েন রয়েছে এবং তুরস্কের সহযোগিতায় সিরিয়ার তেল ও গ্যাস লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। সিরিয়ার মার্কিন সেনা ছাড়াও সীমান্তের কোনো কোনো অঞ্চলে তুরস্কের সেনা মোতায়েন রয়েছে জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই। এভাবে তুরস্কও সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। 

জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই মার্কিন সরকারগুলো সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন রেখে হত্যাযজ্ঞ ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের সেনা-মুখপাত্র জন কোরবি সদম্ভে ঘোষণা করেছেন, বিশ্বের যে কোনো স্থানে সেনাশক্তি প্রয়োগের বিষয়ে মার্কিন সরকার কারো অনুমতির তোয়াক্কা করে না! 

ওদিকে ইরান, সিরিয়া ও রাশিয়াসহ বহু দেশ সিরিয়ায় অবৈধ মার্কিন সেনা-উপস্থিতির নিন্দা জানিয়ে আসছে এবং এরফলে সিরিয় সংকটের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করছে। এ ছাড়াও মার্কিন সরকার সিরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নিজের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ও এইসব গোষ্ঠীকে দেশটির বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে।

সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকার যে শক্তির দম্ভের কারণে আন্তর্জাতিক কোনো আইন, রীতি-নীতি ও স্বাধীন দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের কোনো তোয়াক্কা করে না সিরিয়ার দেশটির নৈরাজ্যমূলক হস্তক্ষেপ ও অবৈধ সামরিক উপস্থিতিই এর বড় প্রমাণ।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮   

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।      

ট্যাগ