মে ১৮, ২০২৪ ১৯:৫৯ Asia/Dhaka
  • ইরানের চবাহার 'গোল্ডেন গেট': এশিয়ায় ভারতের শক্তি বিস্তারে আমেরিকা কেন ভয় পাচ্ছে?

ভারত ইরানের কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণের চবাহার বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। নয়াদিল্লি আফগানিস্তানসহ মধ্যএশিয়ার দেশগুলোর সাথে তার বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর এবং ককেশাস অঞ্চল, পশ্চিম এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের জন্য একটি নতুন বাণিজ্য পথ খোলার পরিকল্পনা করেছে৷

ভারতীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়া ইরানের চবাহার সমুদ্র বন্দর ব্যবহার ইসুতে ইরান-ভারত সহযোগিতা সম্পর্কে বলেছেন: "এই বন্দর আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ভারতের সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ধমনী হিসাবে কাজ করবে।"

কিন্তু এই চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে।

 ২০০৩ সালে ইরান ও ভারত প্রথম এই প্রকল্প নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে, কিন্তু ইরানের সাথে ভারতের সম্পর্কের উন্নয়নের বিরুদ্ধে আমেরিকার চাপের কারণে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার তেমন অগ্রগতি হয়নি এবং এক পর্যায়ে আলোচনা থেমে যায়। এরপর ২০১৫ সালে পাশ্চাত্যের সাথে ইরানের পরমাণু সমঝোতার অধীনে ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার পর তেহরান ও নয়াদিল্লি ফের আলোচনা শুরু করে।

ইরানের চবাহার বন্দর কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

৬০ হাজার কোটি ডলারের শিল্পপণ্য রপ্তানির জন্য ভারত তার পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। চবাহার বন্দরের মাধ্যমে ভারত প্রথমে ইরানে পণ্য পরিবহন করতে পারে এবং তারপরে রেল বা সড়ক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের মতো সম্পদ-সমৃদ্ধ স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে তার পণ্য পরিবহন করতে পারে। এক ভারতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা এই রুট দিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছানোর কথাও বলেছেন।

দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সদস্য কবির তানেজা বলেছেন:

ইরানের চবাহার সমুদ্র বন্দর পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় আরও বিনিয়োগে ভারতের জন্য এক ধরনের সোনালী দরজা।

বন্দরটি এখন আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর (INSTC) প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারতের লক্ষ্য হচ্ছে, ইরানের মাধ্যমে মুম্বাই এবং আজারবাইজানের রাজধানী বাকুসহ মধ্য এশিয়ার রাজধানীগুলোর মতো সস্তা বাজারের সাথে ভারতের অর্থনীতিকে সংযুক্ত করা।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নিষেধাজ্ঞা

নয়াদিল্লি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতে ১৯৭৪ এবং এরপর  ১৯৯৪ সালে দুইবার ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর থেকে আমেরিকা ভারতকে নিজের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে। যদিও ভারত জাতিসংঘ কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত কোনও নিষেধাজ্ঞাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় না, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করতে হয়েছে। 

ভারতের উন্নতিতে আমেরিকার শঙ্কা

ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ। বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারত চীনের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে বড় বৈশ্বিক নেতৃত্বে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটি এমন একটি বিষয় যা কেউ কেউ আমেরিকার জন্য অত্যন্ত ভীতিকর বলে মনে করেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা বিশ্বে ভারতের প্রভাব ঠেকানোর জন্য যেকোনো কৌশল অবলম্বন করবে।

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতিমধ্যেই ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ভারতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়াতে ইরানের তেলের ক্রয় থেকে বিরত থাকায় ভারত তার চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীর মোকাবেলায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চবাহার বন্দর নিয়ে নোংরা খেলায় অবর্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছু বিশ্লেষক বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলা করে ভারত এগিয়ে গেলে তা দেশটির বিরাট সম্ভাবনার দ্বার  খুলে দেবে।  

মধ্য এশিয়ায় আমেরিকার এখন দুটি বড় প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে অর্থাৎ রাশিয়া ও চীন। তাই এই অঞ্চলে ভারতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমেরিকার জন্য সুখকর হবে না।

ভারতীয় বিশ্লেষক তানজা বলেছেন: চবাহার আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং নয়াদিল্লি এই প্রকল্পকে দীর্ঘমেয়াদে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করতে ইচ্ছুক।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ