জুন ২৪, ২০২৪ ১৮:২৮ Asia/Dhaka
  • দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধ, পশ্চিমা আধিপত্যের পতন ও এশিয়ার শক্তিগুলোর উত্থান
    দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধ, পশ্চিমা আধিপত্যের পতন ও এশিয়ার শক্তিগুলোর উত্থান

পার্সটুডে- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিখ্যাত তাত্ত্বিক ব্যারি বোজান ‘নয়া শীতল যুদ্ধ: একটি সার্বিক ধারনা’ শীর্ষক তার সর্বশেষ প্রবন্ধে বলেন: আমরা বর্তমানে দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধে অবস্থান করছি। পার্সটুডে’র মতে, বোজান মনে করেন, দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের নানা দিক এরইমধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে যাতে আগের শীতল যুদ্ধের সঙ্গে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের সূচনা

২০২০ সালকে দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের সূচনাকাল বলে ধরা যেতে পারে; যখন চীন হংকংয়ের দু’টি শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করে পাশ্চাত্যকে চমকে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে পাশ্চাত্যের জন্য একটি হুমকি হিসেবে তুলে ধরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে যে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল, ওই ঘটনার পর তার পালে হাওয়া লাগে।  এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের একাংশকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করলে নয়া শীতল যুদ্ধের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হতে শুরু করে।

যুদ্ধের আশঙ্কা কমায় দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধ

প্রথম শীতল যুদ্ধের সময় মানুষ প্রতিদিন যেমন পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা করত দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধে এসে সেই আশঙ্কাটা একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরও শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির সমরাস্ত্র এবং আগত ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর কৌশলের মতো নতুন নতুন প্রযুক্তির একটা প্রভাব সব সময়ই থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে আরো পরিশুদ্ধভাবে যুদ্ধের কমান্ড ও কন্ট্রোল পরিচালনা করতে পারবে ঠিকই কিন্তু সাইবার হামলার মোকাবিলায় নিজেই অনেক নাজুক অবস্থানে থাকবে। অবশ্য পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে একটা চাপা উত্তেজনা সব সময়ই বহাল থাকবে।

বৈশ্বিক আধিপত্যের অবৈধতা

দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের সময় যেকোনো বৈশ্বিক আধিপত্যই অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। পশ্চিমা শক্তিগুলোকে একথা মেনে নিতে হবে যে, তারা আর ভবিষ্যতের একচ্ছত্র মালিক নয় এবং তারা ইচ্ছে করলেই যেকোনো জায়গায় হস্তক্ষেপ করে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।  পাশ্চাত্যের বাইরের দেশগুলোতে যেভাবে সম্পদ, ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে তার ফলে বহুমেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।  এই শক্তিগুলো (বিশেষ করে চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইরান ও রাশিয়া) বহুকাল ধরে বহুমেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। ধারনা করা যায়, শীতল যুদ্ধের এ পর্যায়ে তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে। আর এ পর্যায়ে কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানে নিজেকে বসাতে চাইবে না।

প্রক্সি যুদ্ধ

দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধে মূল শক্তিগুলো পেছনে থেকে প্রক্সি যুদ্ধ চালাবে যার ফলে তাদের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। তবে কখনও কখনও প্রক্সি যুদ্ধই হয়ে উঠবে ভয়ঙ্কর এবং তা শীতল যুদ্ধ ও স্বাভাবিক যুদ্ধের সীমারখো মুছে দেবে।

শক্তির ভাগবাটোয়ারা

বিভিন্ন পক্ষের ভেতরে ও পরস্পরের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা পাবে। চীন, ভারত ও ইরানের মতো দেশগুলো দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধে প্রথম শীতল যুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। এখানে রাশিয়া ও আমেরিকার শক্তি কম থাকবে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে কাছে টেনে ইউরোপ এরইমধ্যে অনেক বড় আকার ধারন করেছে যদিও সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ইউরোপের তেমন কোনো পনিবর্তন হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব প্রতিপত্তি কমে গেছে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি আবার বিজয়ী হলে এই প্রভাব আরো কমে যাবে।#

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/২৪

ট্যাগ