থাইরয়েড হরমোন
থাইরয়েড হরমোন সম্পর্কে জানা খুবই দরকার
থাইরয়েড স্বাস্থ্য সমস্যা এখন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের মধ্যে বলা চলে অনেকটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই এ বিষয়টি নিয়ে মানুষকে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হচ্ছে। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু।
শ্রোতাবান্ধুরা! আপনারা কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আপনাদের জন্য নির্মিত অতি জরুরি অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ।
আজ আমরা থাইরয়েড নিয়ে প্রথম পর্বের আলোচনা করব। আর এ বিষয়ে কথা বলবেন তেহরানে গবেষণারত বাংলাদেশি চিকিৎসক,পুষ্টিবিদ ও ন্যাচারাল মেডিসিন কনসালটেন্ট, তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সাইন্সেস এ পিএইচডি গবেষক ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু।
জনাব ডা. হেদায়েতউল্লাহ সাজু রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
ডা. হেদায়েতউল্লাহ সাজু :ধন্যবাদ আপনাকে এবং রেডিও তেহরানকে।
রেডিও তেহরান:ডা. হেদায়েতউল্লাহ সাজু,আপনার কাছে শুরুতেই জানতে চাইব-থাইরয়েড আসলে কি?
ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: থাইরয়েড হচ্ছে একটি গ্রন্থি। মানবদেহে অনেকগুলো গ্রন্থি আছে। এসব গ্রন্থি শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে। সহজ করে বললে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানবদেহের শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে যে হরমোন নিঃসৃত হয় সেই হরমোন মানুষের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর কারণে মানুষ সুস্থ থাকে আবার এর অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন গ্রন্থির মধ্যে থাইরয়েড একটি গ্রন্থি। এটির অবস্থান মানুষের শ্বাসনালীর সামনে প্রজাপতির মতো দেখতে। এই গ্রন্থি দুটি বিশেষ হরমোন নিঃসরণ করে থাকে। ট্রাইডোথাইরোনাইন -যাকে টি-থ্রি বলা হয়। থাইরক্সিন-যাকে টি-ফোর বলা হয়। অপরটি এ দুটো হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। আর এই হরমোনের ফলে আমাদের সুস্থতা কিংবা অসুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্তের মাধ্যমে এই হরমোন পরিভ্রমণ করে।
রেডিও তেহরান:ডা,সাজু থাইরয়েড কি সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দিলেন। থাইরয়েড সমস্যা কেন হয়?
ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। এই সমস্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন ধরুন- জন্মগতভাবে একটি বাচ্চার থাইরয়েড গ্রন্থি না হয় অথবা ভুলভাবে তৈরি হয় আবার তৈরি হলেও ঠিকমতো কাজ করে না সেক্ষেত্রে কিন্তু থাইরয়েড হরমোন তৈরি হবে না। যদি আয়োডিনের অভাব হয় সেক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রোগ ও ওষুধ সেবনের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এটি হতে পারে। জেনেটিক কারণেও হরমোনজনিত সমস্যা হতে পারে।
রেডিও তেহরান: ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু, থাইরয়েড কেন হয় সে বিষয়টিও আপনি বললেন। বেশ কিছু কারণ আপনি উল্লেখ করলেন। তো আপনি গলগণ্ডের কথা বলছিলেন। এই গলগণ্ডটা আসলে কি?
ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: দেখুন, গলগণ্ড থাইরয়েড না আসলে থাইরয়েডের তারতম্যের কারণে অনেক রোগ হতে পারে তারমধ্যে গলগণ্ড একটি। যদি থাইরয়েড হরমোন কমে যায় তাহলে হাইপোথাইরয়েডিসম। যদি বেড়ে যায় তাহলে হাইপার থাইরয়েডিসম। যদি ঠিকমতো থাইরয়েড হরমোন তৈরি না হলে গলগণ্ড হবে। যদি আয়োডিনের অভাব হয় তাহলেই গলগণ্ড হয়।
রেডিও তেহরান: ডা. সাজু কীভাবে বোঝা যাবে- থাইরয়েড সমস্যা হয়েছে- অর্থ্যাৎ লক্ষণগুলো কি? বা কোন কোন লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে থাইরয়েড সমস্যা আছে?
ডা. হেদায়েতুল্লাহ সাজু: আপনি খুব চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই থাইরয়েডের সমস্যা হলে আমরা বুঝতে পারি না। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ এই সমস্যার বিষয়টি বুঝতে পারেন না। অনেকেই হয়তো দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু লক্ষণগুলো না জানার কারণে চিকিৎসকের কাছে যায় না।
থাইরয়েডের কিছু লক্ষণ স্পষ্টত বোঝা যায়।
লক্ষণগুলো হচ্ছে-খুব ক্লান্তি অনুভব করবেন। অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না। কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অল্পতেই গরম কিংবা ঠাণ্ডা অনুভূত হতে পারে। পেশি এবং জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করবেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডে সমস্যা হবে। পার্লস রেট কমে যেতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সেটি হয়েছে হাইপোথাইরয়েডিসম। অর্থাৎ যদি থাইরয়েড হরমোনের লেভেলটা কমে যায় তাহলে এসব সমস্যা দেখা দেবে।
আর হাইপারথাইরয়েডিসম হলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে-অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, গরম সহ্য করতে না পারা, দুশ্চিন্তগ্রস্ত হয়ে পড়া,অস্থিরতা, ওজন কমে যাওয়া, চুল পড়ে যেতে পারে, ত্বক পাতলা হয়ে যেতে পারে, হজমের সমস্যা হতে পারে। এরবাইরেও আরও কিছু সমস্যা হতে পারে।
একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই থাইরয়েড হরমোন তার সুস্থ থাকার জন্য কাজ করে। এর সমস্যা দেখা দিলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। ফলে থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্ব অপরিসীম।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩১