ইয়েমেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি মার্কিন এফ-৩৫ বিমানের জন্য হুমকি?
-
ইয়েমেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি মার্কিন এফ-৩৫ বিমানের জন্য হুমকি?
পার্সটুডে - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে বিশাল বিমান হামলা শুরু করে। এই হামলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর পশ্চিম এশিয়ায় সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক অভিযান।
ইয়েমেনের বিভিন্ন অঞ্চল এক হাজারেরও বেশি বার মার্কিন বিমান এবং নৌবাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, আমেরিকানরা বিমানবাহী রণতরী হ্যারি ট্রুম্যান এবং কার্ল ভিনসনের উপর ভর করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
এমনকি বি-২ কৌশলগত বোমারু বিমান এবং মার্কিন সবচেয়ে ভারী বাংকার-বিধ্বংসি ১৪ টন ওজনের GBU-57 বোমাও এই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ইয়েমেনের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে এই বোমাবর্ষণ সফল হয়নি এবং ইয়েমেনিরা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সুড়ঙ্গগুলোতে চলাচলের পথ পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হয়। তাই, এই ভারী বোমা ব্যবহার করেও প্রত্যাশিত ফলাফল আসেনি এবং মার্কিনিরা বুঝতে পেরেছে যে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা এতো সহজ হবেনা।
আমেরিকার একের পর এক সামরিক ব্যর্থতা এবং ক্ষয়ক্ষতির কারণে, বিশেষ করে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি F-18 যুদ্ধ বিমান এবং কয়েক ডজন ড্রোন ভূপাতিত হওয়ায় এবং অত্যাধুনিক মার্কিন পঞ্চম প্রজন্মের F-35 যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় হোয়াইট হাউস হঠাৎ তার অবস্থান পরিবর্তন করে তারা ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ মে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান স্থগিত করেন। এনবিসি নিউজ চ্যানেল জানিয়েছে, মার্চ থেকে এই অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ হয়েছে, যার মধ্যে হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে হাজার হাজার বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র।
নিউ ইয়র্ক টাইমস "কেন ট্রাম্প হঠাৎ হুথিদের উপর হামলা বন্ধের নির্দেশ দিলেন?" শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে ইয়েমেনে মার্কিন হামলা হঠাৎ বন্ধ করার কারণগুলো তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রাথমিক ধারণা ছিল এক মাসের সময়সীমার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবে। কিন্তু ১০০ কোটি ডলার খরচ করার পর এবং বেশ কয়েকটি F/A-18 সুপার হর্নেট স্ট্রাইক ফাইটার, সেইসাথে বিপুল সংখ্যক MQ-9 রিপার রিকনেসান্স এবং যুদ্ধ ড্রোন হারানোর পর ট্রাম্পের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়।
প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইয়েমেনিরা আমেরিকান যুদ্ধবিমানগুলোতে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এবং ট্রাম্প এই বিষয়গুলোর আলোকে আক্রমণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওমানের মধ্যস্থতায় এটি করা হয়েছিল এবং একমত হয়েছিল যে ইয়েমেনিরা আমেরিকান জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে না এবং আমেরিকানরা ইয়েমেনিদের উপর সামরিক আক্রমণ চালাবে না। প্রকৃতপক্ষে, বেশ কয়েকবার, ইয়েমেনি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মার্কিন F-35 এবং F-16 যুদ্ধবিমানগুলোকে প্রায় ভূপাতিত করার চেষ্টা করেছিল, যা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করার জন্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল।
এই প্রসঙ্গে, একজন মার্কিন কর্মকর্তা "ওয়ার জোন" ওয়েবসাইটের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে ইয়েমেন থেকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত এড়াতে মার্কিন F-35 স্টিলথ ফাইটারকে এড়িয়ে চলার কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই কর্মকর্তা বলেন: "ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এত কাছে এসেছিল যে F-35 বিমানটিকে কৌশলে চলাচল করতে বাধ্য করা হয়েছিল।" বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেছেন: "ইয়েমেনি প্রতিরোধ বাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমেরিকার বেশ কিছু F-16 যুদ্ধবিমান এবং একটি F-35 কে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল, যার ফলে মার্কিনীদের হতাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।"
প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে সামরিক অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করেছে, আর তা হলো ইয়েমেনি সামরিক বাহিনী এবং আনসারুল্লাহ আন্দোলনের যোদ্ধাদের পেশাদারিত্ব এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের দীর্ঘ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা। #
পার্সটুডে/এমআরএইচ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।