মনীষী আবুল-কাসেম ফেরদৌসির স্মরণ দিবস; ইরানি মহাকাব্যের স্রষ্টা এবং ঐক্যের আহ্বায়ক
-
ইরানের মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসি
পার্সটুডে-আজ, ১৫ই মে (২৫ উর্দিবেহেশত), ইরানের মহাকবি এবং শাহনামার স্রষ্টা মনীষী আবুল কাসেম ফেরদৌসির স্মরণ দিবস। তাঁর সৃষ্টি কেবল ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য অমূল্য সম্পদ।
এই মহান কাজটি করে মহাকবি ফেরদৌসি (৯৪০-১২০০) ইরানীদের জাতীয় এবং ধর্মীয় পরিচয়কে সমন্বিত করেছেন। এমন একটি কাজ তিনি করেছেন যা ইরানের প্রাচীন ইতিহাস এবং ইসলামের নৈতিক ও রহস্যময় শিক্ষায় পরিপূর্ণ। ৮০ বছর বয়সে ফেরদৌসির কাব্যিক মেজাজ এবং ইরানের জাতীয় গৌরব পুনরুজ্জীবিত করার প্রতি আবেগ শাহনামা নামে একটি মহান মাস্টারপিস তৈরির দিকে তাঁকে পরিচালিত করে।
ফেরদৌসির শাহনামার মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শ্লোক রয়েছে। ইরানের প্রাচীন রাজা ও মহান বীরদের জাতীয় গল্পসহ প্রাচীন ইতিহাসের একটি সংগ্রহ শাহনামা। এই মহাকাব্যে বিজয়, পুরুষত্ব, সাহস এবং ধার্মিকতার সাথে তাদের বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের কাব্যিক বর্ণনা রয়েছে।
ফেরদৌসী নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ ফার্সিভাষী কবি। তার শাহনামা ইরানি ভাষা, চিন্তাদর্শ এবং সংস্কৃতির সবচেয়ে মূল্যবান ও স্থায়ী রচনা। অনেক গবেষক এটিকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্ববৃহৎ মহাকাব্য বলে অভিহিত করেছেন।
শাহনামা, পৌরাণিক কাহিনী উত্তীর্ণ একটি মহাকাব্য
ফেরদৌসী ৩০ বছর শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে শাহনামা রচনা করেছিলেন। এটি এমন একটি বই যার মধ্যে জ্ঞান, ইতিহাস, নীতিশাস্ত্র এবং রহস্যবাদের সমন্বয় ঘটেছে। প্রাচীন ইরানের গভীর দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তিনি ইরানি এবং ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে এক অটুট যোগসূত্র তৈরি করেছিলেন।
শাহনামা জুড়ে তৌহিদবাদ
ফেরদৌসী আল্লাহর নাম দিয়ে শাহনামা শুরু করেছেন:
আল্লাহর নামে, যিনি প্রজ্ঞাবান / তারচেয়ে শ্রেষ্ঠতর চিন্তার অতীত
এই পংক্তিটি তার তৌহিদবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। সমগ্র শাহনামা জুড়ে, ইয়াজদান, দাদার, স্রষ্টা এবং বিশ্ব সৃষ্টির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এ সবই এক আল্লাহর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
ইসলামী শিক্ষায় প্রভাবিত
ন্যায়বিচার: কেই খসরুর মতো ন্যায়পরায়ণ বাদশাহরা ঐশি শাসনের প্রতীক। সত্যবাদিতা এবং মিথ্যা এড়িয়ে চলা: ফেরদৌসী মিথ্যা বলাকে সবচেয়ে বড় পাপ বলে মনে করেন। আল্লাহর ওপর আস্থা: শাহনামার নায়করা সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। পুনরুত্থানের উল্লেখ: কিছু কিছু পংক্তিতে বিচার দিবস এবং কর্মের হিসাব-নিকাশের কথা বলা হয়েছে।
ফেরদৌসী ও ঐক্যের বার্তা
ফেরদৌসী বিশ্বাস করতেন যে সত্য একই। ধর্মীয় পার্থক্য সীমিত মানবিক ধারণার কারণে হয়: মানুষ তাদের অদূরদর্শিতা এবং ভিত্তিহীন ধারণার কারণে গর্বিত হয়ে ওঠে। তিনি ধর্মের বিভাজনের জন্য আফসোস করতেন এবং সত্যের ঐক্যের উপর জোর দিতেন।
বিশ্ব মহাকাব্যগুলোর সাথে শাহনামার তুলনা
ইলিয়াড এবং ওডিসির দেবতারা: জিউস এবং হেরার মতো গ্রীক দেবতারা কখনও কখনও দুষ্ট এবং স্বার্থপর। শাহনামায় স্রষ্টা: আল্লাহ পবিত্র, ন্যায়পরায়ণ এবং করুণাময় এবং সর্বদা সৎ মানুষদের সাহায্য করেন। অতএব, শাহনামা হল বিশ্বের প্রথম তৌহিদবাদী মহাকাব্য যা মানুষকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান জানায়।
আজকের বিশ্বের প্রতি ফেরদৌসির বার্তা
ফেরদৌসি কেবল একজন ইরানী কবিই ছিলেন না বরংতিনি একজন নীতিবাদী দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তার বাণী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা (যেমন ফেরেদুন এবং জাহহাকের গল্প), সত্য ও ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখা, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য (সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা) এবং সংকটকালে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা, আজকের বিশ্বের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।
শাহনামা রচনার মাধ্যমে মহাকবি ফেরদৌসি ইরানের ইতিহাস এবং ইরানের গর্বিত পরিচয়কে জীবিত রেখেছেন। একইসাথে মানবতার কাছে শান্তি, ন্যায়বিচার এবং একত্ববাদের সর্বজনীন বার্তা তুলে ধরেছেন।#
পার্সটুডে/এনএম/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।