ইরানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে তা কি আরবদের স্বার্থ রক্ষা করবে?
(last modified Thu, 03 Jul 2025 11:56:55 GMT )
জুলাই ০৩, ২০২৫ ১৭:৫৬ Asia/Dhaka
  • ইরানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে তা কি আরবদের স্বার্থ রক্ষা করবে?

পার্সটুডে- কাতারের ওয়েবসাইট আল-আরাবি আল-জাদিদ জানিয়েছে, ইরান সব সময় আরব জাতিগুলোর বন্ধু হিসেবে ছিল, পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রকৃত সমর্থক হচ্ছে ইরান। এই ওয়েবসাইটে আরও লেখা হয়েছে, আরবদের উচিৎ ইরানের কাছ থেকে শক্তি ও স্বাধীনতার শিক্ষা নেওয়া, ইরান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়েছে। ইরানের প্রতি সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি তেহরানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া উচিৎ, এমনটি হলে তা সকল আরব দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে।

তাসনিম নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরান ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ ও এর ফলাফল বিশ্লেষণের ধারাবাহিকতায় কাতারি ওয়েবসাইট আল-আরাবি আল-জাদিদ আমেরিকা ও ইসরাইলের কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণকারী আরব সরকারগুলোর সমালোচনা করেছে এবং ইরানের সম্মানজনক ও শক্তিশালী অবস্থানের প্রশংসা করেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা এ সংক্রান্ত তথ্যই তুলে ধরার চেষ্টা করব।

এই অঞ্চলে ইহুদিবাদী ঔদ্ধত্যের মোকাবেলা করছে একমাত্র ইরান

বর্তমানে ইরান প্রকাশ্যে ইহুদিবাদীদের নিপীড়ন ও ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলোর একটি বস্তুনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। আরবরা যখন দখলদারদের অপরাধের বিষয়ে নীরব রয়েছে, তখন ইরান বাস্তবিক অর্থে ফিলিস্তিন বিশেষ করে গাজাকে সমর্থন করছে। যদিও প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে কিছু আরব শাসকগোষ্ঠীর সরকারি প্রচারণাযন্ত্র সর্বদা ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে কলুষিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং এই দেশটিকে আরব জাতির শত্রু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কয়েকটি নির্দিষ্ট আরব সরকার সব সময় নানা ভাবে অন্যদেরকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। শিয়া মাজহাব বিস্তারের ভয় দেখানোর পাশাপাশি নান অপতৎপরতা চালানো হয়েছে। 

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অনন্য ভূমিকা

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনকে ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তেহরানে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। আরব ভূখণ্ড ফিলিস্তিনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন সত্ত্বেও ইরানের বিষয়ে আরবদের ভূমিকা ছিল ভিন্ন রকম।

তারা ইরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘতম ও সবচেয়ে সহিংস যুদ্ধ শুরু করে, যার নেতৃত্বে ছিল ইরাকের স্বৈরাচারী সাদ্দাম সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন ছিল এই যুদ্ধে, তারা এই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের বিপ্লবকে দমন করতে চেয়েছিল। দুঃখজনকভাবে আরব দেশগুলো ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে নিপীড়িত জাতিগুলোর পক্ষের শক্তি হিসেবে তুলে ধরার পরিবর্তে বিপ্লব রপ্তানির ভয় ছড়িয়ে দিচ্ছিল। তারা ইরানের বিরুদ্ধে এই চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে অর্থায়ন শুরু করে। কিছু আরব তেহরানকে তৎকালীন বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার সরকারের পাশে থাকার জন্য দোষারোপ করে থাকে, কিন্তু তারা ভুলে যায় যে, কিছু আরব সরকারই দেশটিতে গৃহযুদ্ধের ইন্ধন দিয়েছিল এবং এটি প্রায় ১৩ বছর স্থায়ী হয়েছিল। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তারা সমর্থন যুগিয়েছিল।

তেহরানের সাথে জোট সকল আরবের স্বার্থ রক্ষা করবে

ইরান কখনও কোনও আরব দেশে আক্রমণ করেনি বা কোনও আরব দেশের ভূখণ্ড দখল করেনি; কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইল বহু বার এটি করেছে এবং এখন তা করে যাচ্ছে। এমনকি যে তিনটি ইরানি দ্বীপের ওপর সংযুক্ত আরব আমিরাত সার্বভৌমত্ব দাবি করে থাকে সেগুলো ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৮ বছর আগে থেকে অর্থাৎ ১৯৭১ সাল থেকেই ইরানের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। সে সময় ইরানে পাহলভি রাজতন্ত্র বজায় ছিল এবং এই পাহলভি সরকারের সঙ্গে কিছু আরব দেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল।  ইরানের সেই রাজতান্ত্রিক পাহলভি সরকার এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের একনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করত।

ইরানের কাছ থেকে শক্তি ও স্বাধীনতার শিক্ষা নেয়া উচিৎ

ইরান এমন একটি দেশ যারা নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে তার বৈজ্ঞানিক ও সামরিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। ইরান ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ এবং কঠোর ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এগিয়ে গেছে। বর্তমানে একমাত্র ইরানই ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থেকে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং এই অঞ্চলে একমাত্র ইরান দখলদার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তার দৃঢ় ও নীতিগত অবস্থান বজায় রেখেছে।

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর ইরানের সঙ্গে আরব দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছে। ইসলামের শত্রুরা একের পর এক মুসলিম দেশগুলোকে আঘাত হানবে, তারা কখনোই মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না। এখনও সময় আছে আরব দেশগুলোসহ সব মুসলিম দেশের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা।#

পার্সটুডে/এসএ/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।