নরকের বুলডোজার: ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ভাঙছে ইসরাইল
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i150422
পার্সটুডে- ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে গাজা ধ্বংসের জন্য বুলডোজার চালক নিয়োগ দিচ্ছে।
(last modified 2025-07-16T14:47:20+00:00 )
জুলাই ১৫, ২০২৫ ১৯:৫৩ Asia/Dhaka
  • নরকের বুলডোজার: ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ভাঙছে ইসরাইল
    নরকের বুলডোজার: ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ভাঙছে ইসরাইল

পার্সটুডে- ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে গাজা ধ্বংসের জন্য বুলডোজার চালক নিয়োগ দিচ্ছে।

ভাবুন তো—একটি স্বাভাবিক সকালে আপনি ফেসবুকে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন, হঠাৎ একটি চাকরির বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে:
"বুলডোজার চালক প্রয়োজন!"
দৈনিক বেতন ৩,০০০ শেকেল (প্রায় ৮৮২ মার্কিন ডলার)।

পার্সটুডে গার্ডিয়ানের সূত্রে জানিয়েছে, শুরুতে হয়তো মনে হবে কোনো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য এই বিজ্ঞাপন—ধরা যাক, তেলআবিব বা দখলকৃত জেরুজালেমে। কিন্তু বিস্তারিত পড়লে আপনি স্তব্ধ হয়ে যাবেন:
"মিশন: গাজায় ঘরবাড়ি ধ্বংস করা—একটি একটি করে।"
এটা কোনো কল্পকাহিনি নয়—এটাই আজকের ফিলিস্তিনের বাস্তবতা।

এক আধুনিক গণহত্যা

এক ইহুদি মার্কিন গবেষক ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ওমর বারতোভ বহু দশক ধরে মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গবেষণা করেছেন।
তিনি বলেছেন- "গাজার দৃশ্য আর সহ্য করতে পারছি না। গাজায় যা ঘটছে, তা একজন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকের কাছেও অসহনীয়।"
তিনি বলেন, গাজার ৭০% স্থাপনা ধ্বংস বা বিধ্বস্ত করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শত শত ভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে—এবার আর গোপনে নয় বরং ফেসবুকের প্রকাশ্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব করা হচ্ছে।

যত ঘর ধ্বংস, তত টাকা

গার্ডিয়ানের সাংবাদিক এরওয়া মাহদাভি এমন একটি ফেসবুক পেজের কথা তুলে ধরেছেন যেখানে বুলডোজার চালকদের নিয়োগের বিজ্ঞাপনে ঠাসা।
কিছু বিজ্ঞাপনে প্রতিদিন ৮৮২ ডলার পর্যন্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো- বেতন দেওয়া হচ্ছে ঘরের সংখ্যা হিসাব করে।

  • ছোট ঘর ধ্বংসে ২,৫০০ শেকেল
  • বড় ভবন ধ্বংসে ৫,০০০ শেকেল।

বুলডোজার এখন গণহত্যার অস্ত্র

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ নেভ গর্ডন বলেছেন, "বুলডোজার এখন গণহত্যার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। আর ইসরায়েল নিজ হাতে তা করছে না—এ কাজ বেসামরিক ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হচ্ছে।"

যে অজুহাত এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না

দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে—গাজার প্রতিটি ঘরেই নাকি যোদ্ধাদের থাকার সম্ভাবনা আছে, তাই সব ধ্বংস করতে হবে।
তারা মাসের পর মাস দাবি করেছিল, গাজার আশ-শিফা হাসপাতাল হামাসের ঘাঁটি। কিন্তু সেখানে কিছুই মেলেনি।
তারা কোনো প্রমাণ ছাড়াই ধ্বংস করেছে এ ধরণের বহু মসজিদ ও স্কুল।

গর্ডন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , "একটা ঘর ধ্বংস করার পেছনে হয়তো যুক্তি দাঁড় করানো যায়। কিন্তু যখন পুরো একটা শহর মুছে দেওয়া হয়, তখন আর ওটা যুদ্ধ থাকে না—সেটা গণহত্যা হয়ে যায়।"

গণমাধ্যমের নীরবতা, সত্যের মৃত্যু

এসব যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, এবং ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের একে একে হত্যা করা হচ্ছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমও হয় চুপ, না হয় ইসরায়েলের কথাই পুনরাবৃত্তি করছে। কিন্তু এই গণহত্যা আর গোপন থাকছে না। এখন তো যেকোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজেই দেখতে পাচ্ছে—একটি রাষ্ট্র কীভাবে "বাড়িঘর ধ্বংস"কে দিনমজুরির পেশায় পরিণত করেছে। এই প্রশ্নটির উত্তর একদিন দিতেই হবে আর তাহলো- যারা বুলডোজারের চালকের আসনে বসেছিল, তারা কি জানত—তারা একটি জাতির ইতিহাসকে মুছে দিচ্ছে?#

পার্সটুডে/এসএ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।