কেন ইসরায়েলি 'টেভা' বিশ্বের অন্যতম ঘৃণিত ওষুধ কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে?
-
টেভা কোম্পানি
পার্সটুডে- বিশ্বের বৃহৎ জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনকারী ইসরায়েলি কোম্পানি টেভা বিশ্বের অন্যতম ঘৃণিত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে টেভা জনমতের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েছে এবং এখন এটি বৈশ্বিক ওষুধ শিল্পে নীতি-নৈতিকতা লঙ্ঘনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদেরকে "বিশ্বস্বাস্থ্য রক্ষার অঙ্গীকারবদ্ধ" প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় দিলেও কোম্পানির কর্মকাণ্ড ঘিরে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। অনেকের চোখে টেভা এখন দুর্নীতি ও মানবিক মূল্যবোধ অস্বীকারকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতীক।
সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধে এই কোম্পানির সহযোগিতা-সমর্থন এবং সেখানকার মানবিক সংকটের প্রতি তাদের নির্লিপ্ততা। বহু মানুষ, চিকিৎসক ও সেবিকা টেভার ওষুধ বর্জনের ডাক দিয়েছেন এবং কোম্পানিটিকে শিশু হত্যায় ইসরায়েলি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করছেন।
গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। সেখানে নারী ও শিশু হত্যা অব্যাহত রয়েছে, ওষুধ ও চিকিৎসকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং হাসপাতালগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে গাজার জনজীবন বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি ওষুধ কোম্পানি হিসেবে এসব নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বদলে টেভা ইসরায়েলের গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাদের ওষুধগুলো গাজাবাসীকে দেওয়া হচ্ছে না, কেবলমাত্র ইসরায়েলের ভেতরের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এই নীরবতা ও পক্ষপাতদুষ্টতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোম্পানির ভাবমর্যাদাকে ভীষণভাবে কলঙ্কিত করেছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করার পরও টেভা গাজার জন্য কোনো বাস্তব উদ্যোগ নেয়নি, বরং তাদের বিবৃতিগুলো কেবল ইসরায়েলকে সমর্থন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর মাধ্যমে তাদের বার্তাটি স্পষ্ট হয়েছে—বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেনেরিক প্রস্তুতকারীও মানবিকতা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, যদি রাজনৈতিক স্বার্থ তাতে সুরক্ষিত থাকে।
শুধু তাই নয়, টেভার বিরুদ্ধে সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগও উঠেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার মূলনীতির সঙ্গে এই সহযোগিতা সরাসরি সাংঘর্ষিক। ফলে কোম্পানির নৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই কারণে আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকরা ২০২৫ সাল থেকে টেভার ওষুধ বর্জনের ডাক দিয়েছেন। আইরিশ চিকিৎসকরা ঘোষণা দিয়েছেন, শিশুদের ক্ষেত্রেও তারা "ইসরায়েলি ওষুধ" ব্যবহার করবেন না। ডাবলিনের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের কর্মীরাও আনুষ্ঠানিকভাবে টেভা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ইতালীয় চিকিৎসরা টেভার ওষুধ ডাস্টবিনে ফেলছেন- এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
২০২৪ সালে টেভা ইসরায়েলি সরকারকে প্রায় ৭৫ লাখ ডলার কর দিয়েছে, আর এই অর্থ গাজা ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখন টেভা কেবল একটি ওষুধ কোম্পানি নয়, এটি মানবাধিকারবিরোধী লোভ ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। গাজার গণহত্যায় নীরব সমর্থনের দায়ে এই প্রতিষ্ঠান ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।#
পার্সটুডে/এসএ/২০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।