সোচিতে সিরিয়া নিয়ে শুরু হচ্ছে সংলাপ: বন্ধ হবে পাশ্চাত্যের হস্তক্ষেপ
রাশিয়ার সোচি শহরে সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি আন্ত:সিরিয়া শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
সোচিতে সংলাপ শুরুর আগে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শীর্ষ আলোচক হোসেন জাবেরি আনসারি সিরিয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সোচিতে অনুষ্ঠেয় আলোচনা দু'দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সিরিয়া সংকট অবসানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সিরিয়ার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষা এবং স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে আমেরিকার ষড়যন্ত্র সত্বেও আলোচনা প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। সোচিতে এর আগে অনুষ্ঠিত বৈঠক সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনার সুযোগ এনে দিয়েছে। বিষয়টি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দায়েশসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীদের সমর্থকরা এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য যে পরিকল্পনা করেছিল বর্তমান আলোচনা প্রক্রিয়া তাদের সে ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়েছে। কারণ আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরব বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই দায়েশকে মাঠে নামিয়েছিল।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যলেক্সি ম্যাক কারকিন বলেছেন, সবাইকে এটা মেনে নিতে হবে যে, মস্কো সিরিয়া সমস্যা সমাধানের কৃতিত্ব ওয়াশিংটনের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে। অবশ্য সিরিয়ায় আমেরিকা দুর্বল হয়ে যাওয়ার অর্থ এ নয় যে, বিরাজমান সমস্যার সমাধান হবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং এ অঞ্চলে প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করে দেয়াই আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরবের প্রধান উদ্দেশ্য।
রুশ সংসদ দুমার সাবেক উপপ্রধান সের্গেই ব্যাবুরিন বলেছেন, "মস্কো ও তেহরানের ব্যাপক প্রচেষ্টার কারণে সন্ত্রাসীরা সিরিয়া থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শেষের দিকে আঙ্কারার কিছুটা অবদান ছিল।" ইরানের পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাদেক কুশ্কিও রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠক ও সমঝোতা থেকে শুরু করে বর্তমান বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "এসব প্রচেষ্টার কারণে জেনেভায় পাশ্চাত্যের একচেটিয়া প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে স্থানীয়ভাবে সংলাপের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।" তিনি বলেন, "স্থানীয়ভাবে সংকট সমাধানের চেষ্টা করার কারণে সিরিয়া সংকটে পাশ্চাত্যের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
যাইহোক, সুচি শহরে অনুষ্ঠেয় বৈঠক সিরিয়া সমস্যা সমাধানে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এখানে বৃহৎ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। ছয় বছর ধরে সিরিয়ায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি ও যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া থেকে বোঝা যায়, ওই দেশটিকে খণ্ড-বিখণ্ড করা এবং এ অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে দুর্বল করাই ছিল আমেরিকা, ইসরাইল ও তার মিত্রদের প্রধান উদ্দেশ্য। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৮