মার্চ ২৪, ২০২২ ২০:২১ Asia/Dhaka
  • সায়িদ খাতিবজাদেহ
    সায়িদ খাতিবজাদেহ

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিনিধি মুসলিম বিশ্বে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অনুপ্রবেশ রুখতে এই সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

ইসলামাবাদে এই সংস্থার ৪৮ তম বৈঠকে গতকাল বুধবার এই আহ্বান জানান ইরানের প্রতিনিধি সায়িদ খাতিবজাদেহ। তিনি বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের বলদর্পি নীতি এবং তার প্রধান সহযোগী মার্কিন সরকার মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার নামে উপিনবেশবাদী নীতি এগিয়ে নেয়ার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ওআইসির কোনো কোনো সদস্য রাষ্ট্র তাতে সাড়া দিচ্ছে! আর এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে বিপদ-ঘণ্টা হয়ে দেখা দিয়েছে। 

উগ্র ইহুদিবাদী দখলদাররা ১৯৬৯ সালে মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগ করলে এরই প্রেক্ষাপটে সে বছরই বিশ্ব-ইসলামী ঐক্য ও সার্বিক সহযোগিতার লক্ষ্য সামনে রেখে গঠন করা হয় ইসলামী সম্মেলন সংস্থা যা বর্তমানে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি নামে পরিচিত। ৫৭টি মুসলিম দেশ নিয়ে গঠিত এই সংস্থা বায়তুল মুকাদ্দাসসহ মুসলমানদের পবিত্র স্থানগুলোকে ইহুদিবাদী দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করবে এবং সব মুসলিম জাতি ও বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সহযোগী হবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল।

ওআইসি' গঠনের এই পটভূমি ও ফিলিস্তিনি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি আরব জাতিগুলোর অঙ্গীকারবদ্ধতা সত্ত্বেও ২০২০ সাল নাগাদ চারটি আরব সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই চারটি সরকার হল আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো।  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কথিত আব্রাহাম সমঝোতার আওতায় ওই চারটি আরব সরকার দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।

এর আগে আরব বিশ্বে ইসলামী জাগরণের প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের সঙ্গে কেবল আপোষ-রফা পর্যন্ত অগ্রসর হতে আরব সরকারগুলোকে উৎসাহ দিত মার্কিন সরকার ও তাদের স্থানীয় ক্রীড়নক সরকারগুলো। সৌদি সরকার নিজেকে মুসলিম বিশ্বের অভিভাবক বলে দাবি করতে অভ্যস্ত হলেও এ ধরনের আপোষ-রফার প্রতি মদদ যোগানোর পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতিও সমর্থন দেখিয়ে এসেছে।

কিন্তু মুহাম্মাদ বিন সালমান সৌদি আরবের যুবরাজ হওয়ার পর থেকে রিয়াদ মার্কিন সরকারের প্রতি আরও বেশি সেবাদাসসুলভ হয়ে পড়ে এবং সৌদি সরকারের ইঙ্গিতেই চারটি আরব সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। মুহাম্মাদ বিন সালমান ২০১৮সালে মার্কিন ম্যাগাজিন আটলান্টিককে বলেছিলেন, আমি মনে করি ইসরাইলিরা নিজস্ব দেশ বা রাষ্ট্রের অধিকারী হওয়ার অধিকার রাখে। আর তাই রিয়াদ শিগগিরই প্রকাশ্যেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

 ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর কঠোর দখলদারিত্ব ও যুদ্ধ-অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। তাই ইসরাইল আসলে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে শান্তি চায় না, বরং শান্তির ধুয়ো তুলে একঘরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং মুসলিম বিশ্বকে সবদিক থেকে দুর্বল রেখে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির মাধ্যমে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে দখলদারিত্ব আরও ব্স্তিৃত ও জোরদার করতে চায়। 

পশ্চিমা দেশগুলোসহ কয়েকটি অমুসলিম পরাশক্তি ইহুদিবাদী ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে আসলেও আরব ও মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কাছেই ইসরাইল বৈধতার সংকটে রয়েছে। তাই কয়েকটি আরব সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে ইসরাইল এ অঞ্চলে তার বৈধতার ধারণাকে জোরালো করতে চায়।

আর ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এ পদক্ষেপে মুসলিম দেশগুলোর জনগণ ক্ষুব্ধ। এ বিষয়টি মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার সংকটও সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ অত্যন্ত বড় ধরনের কৌশলগত ভুল ও তা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৪

ট্যাগ