মে ০৬, ২০২৪ ১৯:৫৫ Asia/Dhaka
  • মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন (বামে) ১৩ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন
    মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন (বামে) ১৩ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন

ইংল্যান্ডের সংবাদ সংস্থা মিডল ইস্ট আই একজন ইউরোপীয় কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আমেরিকা বিশ্বের বাস্তবতার সাথে তার সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অযৌক্তিক ও হাস্যকর কথাবার্তা বলছে।

ইতালির সাবেক এই কূটনীতিক এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক ইউরোপের সাবেক সমন্বয়কারী মার্কো কর্নেলোস বলেছেন,

আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি সম্প্রতি তাদের হুমকি মূল্যায়ন বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে তাদের জন্য বিশ্বব্যাপী হুমকির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।  এই প্রতিবেদনে সিআইএ, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি, ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর যৌথ বিশ্লেষণ ও মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।

আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে:

'আগামী বছরগুলোতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন এক ক্রমবর্ধমান ভঙ্গুর ও গোলযোগপূর্ণ বৈশ্বিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে যেখানে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা, জাতিগুলোর মধ্যেকার চ্যালেঞ্জ আরো তীব্রতর হওয়া, অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল  হওয়া এবং আঞ্চলিক সংঘাত বহুগুণে বৃদ্ধ পাবে। এ ছাড়া, চীনের উদ্বেগ ও উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা, রাশিয়ার মতো পাশ্চাত্যের বড় শত্রুর আগমন, ইরানের মতো কিছু আঞ্চলিক শক্তির উত্থান, বেসরকারি কিছু মিলিশিয়া বাহিনীর উত্থান, আন্তর্জাতিক আইন প্রভৃতি মার্কিন আধিপত্য বা মোড়লিপনার পথে বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে'

আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির এই প্রতিবেদনে ইরান, রাশিয়া ও চীনকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় আমেরিকার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

যাইহোক, প্রতিবেদনের এই ধরনের বিশ্লেষণ আশ্চর্যজনক কিছু নয় কারণ এটি বহু বছর ধরে মার্কিন রাজনীতির মূলমন্ত্র। সমস্যা হচ্ছে, প্রতিবেদনটি কোন্‌ ধরনের আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুনের কথা বলছে তা স্পষ্ট নয়। জাতিসংঘের সনদ নাকি মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থায় থাকা প্রথাগত আইন তার কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়। প্রধান সমস্যা হল মার্কিন রাজনৈতিক নীতিতে পশ্চিমা অন্য দেশের সাথে তাদের কোনো পার্থক্য নেই এবং আমেরিকার অন্ধ সমর্থকে পরিণত হয়েছে। আর এটাই হচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর বড় ভুল।

নিউলিবারেল মতাদর্শের দাবিদার আমেরিকার দ্বিমুখী নীতির কারণে আজ গাজা উপত্যকায় মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  আমেরিকার আচরণ সম্পর্কে এক কথায় বলা যায়,

(আমার মিত্রদের জন্য সবকিছু বৈধ কিন্তু শত্রুদের জন্য আইন।)

আমেরিকাকে অবশ্যই ইতিহাস মেনে নিতে হবে:

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির এই প্রতিবেদনে চীন, রাশিয়া ও ইরানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরকারি মিলিশিয়া প্রতিরোধ বাহিনী যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস এবং ইয়েমেনের আনসারুল্লাহকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই ধরনের হাস্যকর অভিযোগ বা কৌশল এখন কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বরং বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের সম্মুখীন হবে। কেবলমাত্র ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার গুটি কয়েক দেশ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় মার্কিন আধিপত্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা এক মেরুকেন্দ্রিক থেকে বহু মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে পরিবর্তিত হচ্ছে। দীর্ঘ মানব ইতিহাস জুড়ে, বহু সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হয়েছে। তাই মার্কিন নীতিনির্ধারকদেরও ইতিহাসের এই অমোঘ নিয়মগুলো মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ইতিহাসের রায় মেনে নিয়ে আমেরিকাকে এখন দুটি পথের যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। তাদেরকে হয় ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসানের মতো পরিণতি মেনে নিতে হবে অথবা চলমান বাস্তবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে যার পরিণত হবে মহা বিপর্যয়।

আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির এই প্রতিবেদনে গাজা সংকট নিয়ে যা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। কেননা প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে, ('গাজা উপত্যকার দিকে নজর দেয়া উচিত যেখানে হামাসের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী বেসরকারি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করার জন্য ইরান, চীন ও রাশিয়া তাদেরকে গড়ে তুলেছে। এ বিষয়টি আঞ্চলিক সংকটকে তীব্রতর করেছে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে জটিল করে তুলতে পারে।')

প্রতিবেদনের এই অংশ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি গাজার সংঘাতকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের কয়েক দশকের বাধাহীন জুলুম নির্যাতনের কারণে সেখানে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও রাজনৈতিকসহ সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণেই ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড দখল করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও, নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কথা উল্লেখ করা যায়, মার্কিন সমর্থন না থাকলে এতোদিনে ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেত।

আমেরিকার বৈশ্বিক অবস্থান দুর্বল হওয়ার আসল কারণ গাজায় ইসরাইলের রক্তপাতের প্রতি আমেরিকার অটল সমর্থনসহ ওয়াশিংটনের দ্বৈত আচরণ। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করার পর, বাইডেন সরকার এর বিরোধিতা করে যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির এই প্রতিবেদন এমন সময় প্রকাশিত হয়েছে যখন ইসরাইল গাজায় ৩৪০০০ এরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে যাদের  বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ