আসুন সিএনএন এবং ফ্রিদা ঘিতিসের মিথ্যাচারের কৌশল সম্পর্কে জানি
(last modified Wed, 05 Jun 2024 14:16:31 GMT )
জুন ০৫, ২০২৪ ২০:১৬ Asia/Dhaka
  • আসুন সিএনএন এবং ফ্রিদা ঘিতিসের মিথ্যাচারের কৌশল সম্পর্কে জানি
    আসুন সিএনএন এবং ফ্রিদা ঘিতিসের মিথ্যাচারের কৌশল সম্পর্কে জানি

আমেরিকান একজন কলামিস্ট ও সি‌এনএনএর বিশ্লেষক ফ্রিদা ঘিতিস মার্কিন অপপ্রচারের পদ্ধতি বা কৌশল অনুসারে তার এক নিবন্ধে জনপ্রিয় ইরানি প্রেসিডেন্ট রায়িসির শাহাদাতের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার লেখার ভাষা দেখে মনে হয় মিডিয়ায় তার নিয়োগকর্তা তাকে বলেছিল তিনি যেন তার লেখায় ইরানভীতি প্রচারের লক্ষ্যে মার্কিন সরকারের নীতির বিষয়টি বেশি বেশি করে তুলে ধরেন।

অবশ্য সচেতন পাঠক মহল এটা জানেন যে, আমেরিকান মিডিয়ার পক্ষ থেকে ইরান বিদ্বেষ বা ইরান ভীতি প্রচার একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। কেননা, পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আধিপত্য ও যুদ্ধ বিস্তারের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ও একম্বর শত্রু হচ্ছে ইরান।

আমেরিকান কলামিস্ট ফ্রিদা ঘিতিস তার ওই লেখার একেবারে শুরুতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে এমন একটি সরকার হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যারা ওই দেশের সমাজকে নিষ্ঠুরতার সাথে পরিচালনা করে এবং আমার ধারণা ছিল  প্রেসিডেন্ট রায়িসি তার হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত  হয়ে  নিহত হওয়ার পর ইরানি সমাজ তাকে অপমানিত করবে বা খুশী হবে।

প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহি ইরানের পাহলভি রাজতান্ত্রিক শাসনের পতনের পর  গত ৪৫ বছরে ইসলামি ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিমাণ বিশ্বে নজিরবিহীন।

এ ছাড়া, আমেরিকা ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দামকে সমর্থন দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে আট বছরের যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। এই ধরনের চাপের মধ্যে একটি দেশ তার জনগণের সমর্থন ছাড়াই কি টিকে থাকতে পারে?

ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার শহীদ সোলাইমানি এবং প্রেসিডেন্ট রায়িসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সারা ইরানের লাখ লাখ মানুষ যেভাবে শোক মিছিলে অংশ নিয়েছে তা থেকেই তাদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি বোঝা যায়।  

 শহীদ সোলাইমানির জানাজার ছবি

 

মাশহাদে ইরানের শহীদ প্রেসিডেন্টের জানাজা অনুষ্ঠানের ছবি

এমনকি বিভিন্ন প্রদেশে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতাকে বিপুল সংখ্যক জনতার স্বাগত জানানোর ভিডিওতেও নেতাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়িকে স্বাগত জানাতে শিরাজের বিপুল সংখ্যক জনতার উপস্থিতি

প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন কলামিস্ট ফ্রিদা ঘিতিসের লেখার কৌশলটি বড় মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তার বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য বারবার মিথ্যাচারিতার পুনরাবৃত্তি করেছেন।

গত বছর তাবরিজ শহরের জনগণ ব্যাপকভাবে রায়িসিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

মার্কিন কলামিস্ট ফ্রিদা ঘিতিস মিথ্যাচার, কূটকৌশল ও ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়ার পর  আবারো কল্পনার রাজ্যে ফিরে গিয়ে দাবি করেন যে, শীঘ্রই ইরানে ক্ষমতার লড়াই বাধবে এবং ভয়ানক গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। আপনারা বলতে পারেন এটা  আমেরিকার দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর আমেরিকা বহুবার এ ইচ্ছা পোষণ করেছে যে ইরানে একটি বিচ্ছন্নতাবাদী যুদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেসবের  কিছুই হয়নি।

অবশ্য এর প্রধান কারণ ছিল তারা ইরানের মুসলিম জাতিকে চিনতে পারেনি এবং এটাও বুঝতে পারেনি যে ইরান অত্যন্ত প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার অধিকারী দেশ। তাদের মধ্যকার জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত শক্তিশালী।

 গত বছর তেহরানে ঈদে গাদির উপলক্ষে ১০ কিলোমিটার জুড়ে মানুষের উৎসবমুখর সমাবেশ

ইরানের ব্যাপারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ইচ্ছাটাও একই। বেচারা মার্কিন কলামিস্ট ফ্রিদা ঘিতিস নেতানিয়াহুর নির্দেশে তার নিবন্ধে হয়তো এই কথাগুলো লিখেছেন।

অবশ্য তিনি তার প্রবন্ধে ইসরাইলের কথাও উল্লেখ করেছেন এবং এমনভাবে লিখেছেন যেন ফিলিস্তিনিরা অন্য জায়গা থেকে ইসরাইলে এসে জুড়ে বসেছে এবং ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে আসা ইহুদি অভিবাসীদের কাছ থেকে তারা জমি নিয়েছে।

তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধে ইরানের অংশগ্রহণের অভিযোগ করেন। তবে, ইরান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের উপস্থিতির ব্যাপারে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং কেবল ইরানের ড্রোন প্রযুক্তি দেয়ার কথা বলেছে।

ইরানে আমরা লক্ষ্য করি গত কয়েক দশকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃষ্টিভঙ্গিগত বৈচিত্র্য এসেছে। এবারে এ ব্যাপারে আমরা গত কয়েক দশকের পরিবর্তনগুলোর দিকে একটু নজর দেব।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব রাফসানজানি ক্ষমতায় থাকাকালে ইরানের উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিয়ে যান। জনাব খাতামি একজন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্যের সাথে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। এরপর ক্ষমতায় আসেন জনাব আহমাদি নেজাদ। তিনি কট্টরপন্থী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এরপর সংস্কারপন্থীদের থেকে উঠে আসা প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও ক্ষমতায় এসে পাশ্চাত্যের সাথে সংলাপ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। সর্বশেষ ক্ষমতায় আসেন ড. রায়িসি যিনি কট্টরপন্থীদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্বাসী ছিলেন।

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের মিডিয়ার মিথ্যাচারিতার সাথে সুর মিলিয়ে মার্কিন কলামিস্ট মিসেস ফ্রিদা ঘিতিসও তার নিবন্ধে রায়িসিকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন যিনি ইরানের বিপ্লবের শুরুতে বেশ কয়েকজন বিদ্রোহীকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ক্ষেত্রে তিনি তিনটি বড় মিথ্যাচার করেছেন:  

প্রথমত, বিপ্লবের পরপরই ইরানের বিচার বিভাগ সেইসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল যারা প্রায় ১৭ হাজার  ইরানী নাগরিককে হত্যা করেছিল যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী ও শিশু। তখন সেইসব সন্ত্রাসীদের বিচারের দায়িত্ব পড়েছিল রায়িসির উপর।

দ্বিতীয়ত,মার্কিন এই কলামিষ্ট তার নিবন্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত সেইসব সন্ত্রাসীরা ইরানের জনগণের সাথে কি আচরণ করেছে তা উল্লেখ করেননি।  

তৃতীয়ত,তিনি এটাও বলেননি যে তাদের অধিকাংশের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি এবং অনুতপ্ত হওয়ার পর তাদের ক্ষমা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

মার্কিন কলামিস্ট মিসেস ফ্রিদা ঘিতিস এ কারণে খুশি যে সিএনএন-এর শ্রোতারা কোনো গবেষক শ্রেণীর নন এবং সম্ভবত তিনি দর্শকদেরকে যা বলবেন তা তারা মেনে নেবেন। তাই তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই মিথ্যাচারিতা অব্যাহত রেখেছেন এবং দাবি করেছেন যে ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর  দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে।

মজার বিষয় হল,তার লেখায় এটাও বলার চেষ্টা করেছেন যে, দেশের ভেতরে ও বাইরে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রায়িসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। অথচ এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় গণহত্যার সাথে জড়িত নেতানিয়াহুকে সমর্থন করে যাচ্ছে এবং উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আ্ইএস তারাই তৈরি করেছে। আমেরিকা ইরাকে ১০ লাখেরও বেশি নাগরিককে হত্যা করেছিল। এছাড়া, ভিয়েতনাম, জাপান, কম্বোডিয়া, কসোভো, লিবিয়া ও সিরিয়ার জনগণের উপরও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে মার্কিন সরকার। এমনকি মার্কিন সরকার নারী স্বাধীনতার নামে বিভিন্ন দেশে চরম মিথ্যাচার ও বর্বরতা প্রদর্শন করেছে।

যাইহোক, ইসরাইলের সমর্থনে আমেরিকা ইরানে জাতিগত দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছিল যাতে ইরানের সর্বত্র গৃহযুদ্ধ বাধানো যায়। ইরানের নিরাপত্তা বিভাগ এটাকে অত্যন্ত জটিল যুদ্ধ শুরুর চেষ্ট বলে উল্লেখ করেছে। এ লক্ষ্যে তারা ইরানে দাঙ্গাবাজদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার চেষ্টা করেছে  যাতে ইরানকে অচলাবস্থার মুখে ফেলে দেয়া যায়। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ