ইতিহাস বিকৃতি জোরদার
জাপানে মার্কিন সেনাদের পাশবিক ধর্ষণ! দখলদারদের পবিত্রকরণে সচেষ্ট ওয়াশিংটন পোস্ট
পার্সটুডে-ব্রায়ান পি ওয়ালশ একটি পোস্ট লিখেছেন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের ওয়েবসাইটে। জাপানে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানে তাদের উপস্থিতির বর্ণনাগুলোর ধরন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র হিসেবে উপযুক্ত নয় বলে তিনি মনে করেন। তার মতে এসব বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তার পোস্টটির শিরোনাম ছিল এরকম: ইতিহাসের বইগুলোতে মার্কিন সেনাদের বদনামকরণ কিভাবে স্থান পেল?
পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী পোস্টদাতা তার পোস্টের শুরুতেই জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী শিগিরু ইয়োশিদার একটি যৌক্তিক ছবি দিয়েছেন। ইনি দখলদার মার্কিনীদের জন্য পথ খুলে দিয়েছেন। এই বর্ণনায় দখলদারদের সঙ্গে সহযোগিতা ও তাদের কাছে জাপানকে অর্পণ করাকে বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হল এই লেখকের লেখায় জাপানের ওপর মার্কিন পরমাণু বোমা নিক্ষেপের বিষয়ে কোনো ইশারাও দেয়া হয়নি। বিশ্বের দেশগুলোর ইতিহাসে মার্কিন সরকারই একমাত্র সরকার যে যুদ্ধের সময় পরমাণু বোমা ব্যবহার করেছে। মার্কিন সরকার দুই বার এমন কাজ করেছে। আর এই দুইবারই পরমাণু হামলার শিকার হয়েছেন জাপানের দুটি শহরের লাখ লাখ বেসামরিক মানুষ। বিস্ময়ের ব্যাপার হল ওয়াশিংটন পোস্টের টেক্সটে বিশ্বজনমতকে মার্কিন যুক্তরাষ্টের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে, অথচ বেসামরিক জনগণের ওপর সবচেয়ে বিস্ময়কর ও ধ্বংসাত্মক আর প্রাণঘাতী বোমা নিক্ষেপের ঐতিহাসিক ঘটনাটির ইঙ্গিতও করা হয়নি!
এই নোটে, আমেরিকান দখলদারদের অপরাধের বর্ণনা করে এমন ঐতিহাসিক বইগুলিকে অগোছালো, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা লেখা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মার্কিন সেনারা যখন জাপান দখল করে তখন প্রথম দশ দিনে কানাগাওয়া প্রদেশে অনেক জাপানি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল মার্কিন সেনাদের মাধ্যমে। কিন্তু এসব ঘটনার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে এই নোট বা পোস্টে। বলা হয়েছে জাপানের ১৩৬৬ জন নারী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ দেয়া হয়নি বলে এইসব ঘটনার অস্তিত্ব অস্বীকারযোগ্য। এই নোটে দাবি করা হয়েছে যে জাপানের ওপর মার্কিন সেনাদের ছয় বছরের দখলদারিত্বের সময় মার্কিন ও তার মিত্র বাহিনীর সেনারা মাত্র এক হাজার ১০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
একই নোটের অন্যত্র লেখক মার্কিন সেনাদের মধ্যে যৌন-বাহিত রোগের ব্যাপক বিস্তারকেও ম্লান করে দেখাতে চেয়েছেন। ব্রায়ান পি ওয়ালশ জাপানে মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বই-পুস্তকে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা তথ্য সূত্রে মার্কিন-বিরোধী পরিবেশ বিরাজ করায় হতাশা প্রকাশ করে লিখেছেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চতর শিক্ষার পর্যায়ে অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের রাজনীতিকরণ এতই তীব্র যে এমনকি অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ইতিহাসবিদরাও এক্ষেত্রে মার্কিন বিরোধিতা ও বিদ্বেষের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সক্ষম নন। মার্কিন-বিদ্বেষ এখন এমনই ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে দেশটিকে বিশেষ করে দেশটির সেনাদেরকে ইতিহাস গবেষকরা নিপীড়ক ও দমনকারী হিসেবে দেখছেন এবং তাই এই সেনারা বিশ্বে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে না বলে তারা মনে করছেন।
এই লেখকের দৃষ্টিতে মার্কিন বিদ্বেষী লেখকদের একজন হলেন জন ডাবলিও ডাওয়ার যিনি ২০১৯ সালে মার্কিন-জাপান সম্পর্ককে অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে ডাওয়ার বলেছেন, আমরা মার্কিন-জাপান নিরাপত্তা চুক্তি চলতে থাকার বিরোধী। কারণ, এ চুক্তি জাপানের স্বাধীনতাকে হুমকিগ্রস্ত করেছে এবং জাপানকে মার্কিন সাম্রাজ্যের একটি ঘাঁটিতে পরিণত করেছে ও দেশটিকে চীনের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক অবস্থান গ্রহণে বাধ্য করেছে।
বাস্তবতা হল জাপানের সঙ্গে মার্কিন সরকারের সেমি-উপনিবেশবাদী আচরণের প্রতিবাদ করায় ওয়াশিংটন পোস্টের এই লেখক ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মার্কিন-জাপান সম্পর্ক বিষয়ের গবেষককে মার্কিন বিদ্বেষী বলে অভিহিত করেছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের এই পোস্টের আলোকে বলা যায় জাপানি গণমাধ্যমগুলো ও তাদের ইতিহাসের অধ্যাপকবৃন্দ ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপকবৃন্দ যথেষ্ট সক্রিয় নয় বলে ... এবং ইতিহাসের বর্ণনা ও স্মৃতিগুলোকে রক্ষার ব্যাপারে মার্কিন সরকারের প্রতি নতজানু জাপান সরকারের অনীহার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো প্রভাবশালী গণমাধ্যম ধীরে ধীরে ইতিহাসকে বিকৃত করছে এবং জাপানে মার্কিন অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে সাফাই দিচ্ছে।
বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করেন প্রচারের লড়াইয়ে জাপানের জোরালো ভূমিকার অভাবে জল্লাদ মার্কিন শক্তিকে দেখানো হচ্ছে মজলুম হিসেবে এবং এ বর্ণনাও মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে যে জাপানে মার্কিন পরমাণু বোমা ব্যবহারের জন্য জাপানই দায়ী। আর এতসব মার্কিন প্রচারণার জোয়ারের আড়ালে জাপানে মার্কিন পৈশাচিকতা, বর্বরতা ও পাশবিকতার বিষয়টি বিস্মৃতির শিকার হবে।
#
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।