বাংলাদেশি পাসপোর্টে "ইসরাইলি রাষ্ট্র ব্যতীত" বাক্যংশটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে
পাসপোর্টে 'ইসরাইল রাষ্ট্র ছাড়া' বাক্যাংশটি পুনঃস্থাপন করে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন আবারো পুর্নব্যক্ত করেছে।
২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিল, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের পাসপোর্টে "ইসরাইল রাষ্ট্র ব্যতিত" বাক্যাংশটি পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেয়। পার্সটুডের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিক্ষোভের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার অর্থ বাংলাদেশি নাগরিকদের ইসরাইলে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা নেওয়া হয়েছে এবং এটি ফিলিস্তিনি অধিকারকে সমর্থন এবং ইসরাইলি নীতির বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃঢ় সিদ্ধান্তের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পটভূমি
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের একজন দৃঢ় সমর্থক এবং ইসরাইলের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ২০২১ সাল পর্যন্ত, বাংলাদেশি পাসপোর্টগুলোতে একটি বিবৃতি ছিল যেখানে বলা হত: "এই পাসপোর্টটি বিশ্বের সকল দেশের জন্য বৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র ছাড়া।" এই বাক্যাংশটি বাংলাদেশের ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার এবং ফিলিস্তিনি অধিকারকে সমর্থন করার আনুষ্ঠানিক নীতির প্রতিফলন ঘটায়। তবে, ২০২১ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার নতুন ই-পাসপোর্ট থেকে এই বাক্যটি সরিয়ে দেয়। সরকার এই অপসারণের কারণ হিসেবে "আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট মান মেনে চলা" ঘোষণা করেছে। তবে,জোর দিয়ে বলা হয়েছিল যে এই পদক্ষেপের অর্থ ইসরাইলের প্রতি বাংলাদেশের নীতিতে কোনও পরিবর্তন নয়।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলী
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ২০২৩ তারিখের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে ইসরাইল-বিরোধী মনোভাব তীব্রতর হয়েছে। ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রায় এক লাখ মানুষ জড়ো হয়ে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে এবং গাজায় ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের নিন্দা জানায়। "ইসরাইল নিপাক যাক" এবং "ফিলিস্তিন মুক্ত করুন" স্লোগানসহ এই সমাবেশগুলো সরকারের উপর ইসরাইলের প্রতি তার নীতি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।
এই বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৭ এপ্রিলে একটি নির্দেশনা জারি করে যাতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগকে পাসপোর্টে "ইসরাইল রাষ্ট্র ব্যতীত" শব্দটি ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। "আমরা গত সপ্তাহে এই বাক্যটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি নির্দেশনা জারি করেছি। এই পরিবর্তন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নীলিমা আফরোজ বাসস সংবাদ সংস্থাকে এ কথা জানিয়েছেন।
পরিণতি
এই সিদ্ধান্তের বিভিন্ন পরিণতি হতে পারে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের সংবেদনশীলতা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি তার অব্যাহত সমর্থনের প্রতিফলন ঘটায়। এছাড়াও, এটি ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে আরব দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় আসার পর,এই সরকার নিজেকে জনসাধারণের অনুভূতির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। "ইসরাইলি রাষ্ট্র ব্যতীত" বাক্যাংশটির পুনরুজ্জীবন এই প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে এবং ফিলিস্তিনসহ নিপীড়িত জনগণের অধিকার রক্ষার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনসাধারণের চাপের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অবস্থান
বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত কারিগরিভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তৈরি করতে পারে কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে যে 'ফিলিস্তিনকে সমর্থন করুন' এবং 'ইসরাইলের দখলদারিত্ব নীতির বিরোধিতা করুন।' এই অবস্থান ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যা সর্বদা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে সমর্থন করার উপর জোর দেয়। এছাড়াও এই পদক্ষেপ মুসলিম দেশগুলো এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের সমর্থনে তার নীতিতে অটল থাকবে। এই সিদ্ধান্তকে ইসলামি ঐক্য জোরদার এবং নিপীড়িত জাতিগুলোর অধিকারকে সমর্থন করার দিকে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।#
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।