ইসরাইলি জায়নবাদীরা কেন ইতালির ন্যাপলি শহরকে অপছন্দ করে?
পার্স টুডে: ইতালির উপকূলীয় মহানগরী ন্যাপলি দীর্ঘদিন ধরে অন্যায় ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। আজও এই শহরের মানুষ ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জায়নবাদ ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন ম্যাগাজিন কাউন্টারপাঞ্চের (CounterPunch)-এর বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ১৬৪৭ সালে “মাসানিলো বিদ্রোহ”-এর মধ্য দিয়ে একটি অস্থায়ী গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—যার মাধ্যমেই শুরু হয় শহরটির স্বাধীনচেতা ও সংগ্রামী চেতনার ধারা।
ন্যাপলি শহরের সঙ্গে ফিলিস্তিনের একটি প্রতীকী সম্পর্কও রয়েছে। বহু বছর ধরে এই শহর ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের (যার রোমান ইতিহাসে নাপোলির সাথে মিল রয়েছে) সাথে ‘সিস্টার সিটি’ চুক্তিতে আবদ্ধ। সম্প্রতি গাজা সমর্থনে নাপোলিতে বিক্ষোভ, কনসার্ট (যেমন ‘লাইভ ফর গাজা’), শিল্প প্রদর্শনী ও রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এই সমর্থনের একটি উদাহরণ হলো- এই শহরের “তাভেরনা দি সান্তা কিয়ারা” নামের একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট, যা খোলাখুলিভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে BDS আন্দোলন (বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা) সমর্থন করে। এই রেস্টুরেন্টটিকে "ইসরাইলি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে একটি নিরাপদ স্থান" হিসেবে দেখা হয়। তবে সম্প্রতি এটি জায়নবাদীদের হামলার শিকার হয়েছে।
রেস্টুরেন্টে হামলা ও ন্যাপলিবাসীর প্রতিক্রিয়া
২০২৪ সালের ৩ মে, এক ইসরাইলি পর্যটক দম্পতি রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার পর সেখানে কর্মীদের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে। তারা গাজার ওপর ইসরাইলের হামলাকে সমর্থন করে এবং রেস্টুরেন্ট মালিক নাইয়োজ মুনদা-কে “সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী” বলে অপবাদ দেয়।
শুধু তাই নয়, তারা অনুমতি ছাড়াই ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে দেয়। যার ফলে রেস্টুরেন্টটি নানা ধরনের বর্ণবাদী হুমকি ও সহিংসতার সম্মুখীন হয়।
স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায় ও নগর কর্তৃপক্ষ রেস্তোরাঁর পক্ষে না দাঁড়িয়ে ইসরাইলি দম্পতির কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু নাপোলির সাধারণ মানুষ নীরব থাকেনি।
৬ মে, হাজারো মানুষ নাপোলির টাউন হলে জড়ো হয়ে জায়নবাদী সংগঠনগুলোর সাথে সকল সহযোগিতা বন্ধের দাবি জানায়।
একটি জনপ্রিয় প্রচারণা #ZionistsNotWelcome (জায়নবাদীদের এখানে স্থান নয়) চালু করা হয়। এছাড়াও শহরজুড়ে ৫ হাজারের বেশি জায়নবাদবিরোধী স্টিকার বিতরণ করা হয়। ‘১০০% ফর গাজা’ নামে একটি প্রচারণায় মাত্র ১০০ ঘণ্টায় গাজাবাসীর জন্য ১ লাখ ইউরো তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
ইসরাইলের প্রচারণা ও বৈশ্বিক প্রতিরোধ
ইসরাইল প্রতি বছর প্রায় ১৫৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তার পক্ষে প্রচারণা চালাতে, যার মূল উদ্দেশ্য—ইসরাইলের সমালোচনাকে "ইহুদিবিদ্বেষ" হিসেবে তুলে ধরা। হাজার হাজার বেতনভোগী লোক এই কাজের জন্য নিয়োজিত, যারা বিশ্ববাসীর সামনে গাজায় চলমান নিধনযজ্ঞকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করছে।
তবে ন্যাপলির মানুষ প্রমাণ করেছে যে, এই ধরণের প্রচারণা ব্যর্থ করা সম্ভব।
ন্যাপলির এই পদক্ষেপ এখন অন্য অনেক দেশ ও অঞ্চলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, মালদ্বীপ সম্প্রতি ইসরাইলি নাগরিকদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
নাপোলির স্পষ্ট বার্তা:
- জায়নবাদী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও
- ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সমর্থন জোরদার কর
- ইসরাইলের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা মুখোশ উন্মোচন কর
নাপোলি তার সংগ্রামী ইতিহাসের মতো আজও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছে এবং প্রমাণ করছে যে সাধারণ মানুষও বৈশ্বিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।
ন্যাপল শহর তার গৌরবময় প্রতিরোধের ইতিহাসকে ধরে রেখেছে এবং আজও বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচারপ্রত্যাশীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এটি প্রমাণ করছে—সাধারণ মানুষ চাইলেও বড় শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১২