ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে নারীদের অবস্থান
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের শত্রুরা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নারী অধিকার আন্দোলনের অজুহাতে বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে। কেউ কেউ নারী অধিকার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা বহুগুণে বেড়েছে। এমনকি পাশ্চাত্যে নারীদের অবস্থানের চাইতেও ইরানে নারীদের সামাজিক অবস্থান অনেক উঁচুতে রয়েছে এবং ইরানে নারীদের অবস্থানের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের অবস্থানের তুলনা চলে না।
নারী অধিকারের ক্ষেত্রে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা লক্ষ্য হলো ইরানি নারীদের সত্যিকারের ইসলামি পরিচিতি বা বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরা। ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানি মুসলিম নারীরা প্রথমে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে এবং এরপর সামাজিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সক্ষম হয়। বলা যায় বিপ্লবের পর নারীরা মানবিক মর্যাদা ও অধিকার ফিরে পায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায়ন সরকারগুলোর এজেন্ডায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এ অঞ্চলের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের মতো দেশের নারীরা বহু সংগ্রামের পর সম্প্রতি গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছে যেখানে ইরানের নারীরা বহু আগে থেকেই গাড়ি চালিয়ে আসছে এবং তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা অনেক উপরে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়া ছাড়াও ইরানের নারীদের ভোটাধিকার রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে তারা কাজ করে যাচ্ছে। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর নারীদের অবস্থান এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা অবাধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ন্যায়সঙ্গত যে কোনো দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারছে।
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী পদে নারীরা ভূমিকা রাখছে। ইরানের সংসদ মজলিশে শুরায়ে ইসলামি এবং শহর ও গ্রামের ইসলামি কাউন্সিলে নারীদের উপস্থিতি থেকে ইসলামি এ রাষ্ট্রে তাদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতো কিছুর পরও ইরানের শত্রুরা নারী অধিকারের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং ইরানে নারীদের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে বলে দাবি করছে।
ইসলামি ইরানে নারীদের অবস্থান এতোটা উঁচুতে যে নারী ও মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ফার্সি ক্যালেন্ডারে বছরের একটি দিনকে নারী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। নারী দিবস পালনের বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, 'নারী দিবস মানে হচ্ছে নারীর প্রতি সঠিক ও যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই হচ্ছে নারী'।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরানি সমাজে নারী কখনোই পণ্য নয় এবং হযরত খাদিজা (সা.) ও হযরত ফাতেমা জাহরা (সা.)র মতো নারীরা হচ্ছেন আমাদের নারীদের আদর্শ। তাই ইসলামি ইরানে নারীদের মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। ইরানের বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সম্মানজনক অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের আগে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েটের মাত্র ছয় শতাংশ ছিল নারী। বর্তমানে এ হার ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইসলামি বিপ্লবের আগে ইরানে নারী পরিচালকের পরিমাণ ছিল মাত্র ছয় শতাংশের কিছু বেশি কিন্তু বর্তমানে এ হার ৪০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া, ইসলামি বিপ্লবের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নারীদের অংশ ছিল প্রায় এক শতাংশ কিন্তু বর্তমানে এর পরিমাণ ২১ শতাংশ। বিপ্লবের আগে ইরানে শুধুমাত্র নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচটি কিন্তু বিপ্লবের পর বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজারে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে যে কোনো বিষয়ে পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর নারীস্বাস্থ্য উন্নয়নেও অনেক বড় সাফল্য এসেছে। বলা যায়, ইরানে মহিলাদের গড় আয়ু ৫৭.৬ বছর থেকে বেড়ে ৭৭.৮ বছর হয়েছে। মহিলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিমাণও ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নারী রোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিমাণও ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে প্রসূতিকালীন মায়ের মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ কমে গেছে।
ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ক্রীড়াঙ্গনেও নারীদের চোখ ধাঁধানো উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। ইসলামি শালীন পোশাক বা হিজাব রক্ষা করেই নারীরা ক্রিড়াঙ্গনে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। বিপ্লবের আগে নারী ক্রিড়াবিদরা এশিয়ায় বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতায় মাত্র পাঁচটি মেডেল পেয়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর এ পর্যন্ত ২০০টির বেশি মেডেল পেয়েছে নারী খেলোয়াড়রা যা ইরানের জন্য অনেক বড় সম্মান ও গৌরবের বিষয়।
ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানি নারীরা সামাজিক অঙ্গনেও সীমাহীন অবদান রেখে চলেছে এবং বহু ক্ষেত্রে তারা সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনসেবামূলক কাজ এবং গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এসব অঙ্গনে বর্তমানে হাজার হাজার নারী কর্মরত রয়েছে। সরকারি ছাড়াও বেসরকারী বহু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে নারীরা তৎপর রয়েছে।
মোট কথা বলা যায়, ইরানের শত্রুরা এ দেশে নারীদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়ে খুব ভালোভাবে অবহিত আছে এবং তারা এটাও জানে যে ইসলামি নীতি আদর্শে সব ক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত্রুরা ইরানের নারীদেরকে টার্গেট করেছে এবং তারা গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত যাতে ইরানি সমাজে ইসলামি আদর্শের কোনো অস্তিত্ব না থাকে কিংবা যাতে দুর্বল হয়ে পড়ে। শত্রুরা অপপ্রচার চালিয়ে নারীদের অবস্থানকে এমনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে হিজাবের প্রতি অনীহা তৈরি হয়।
এটা মনে রাখা দরকার যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ধর্মীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধ। তাই শত্রুরা ইরানকে মোকাবেলা জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের ধারণা হিজাবকে বিতর্কিত করে তুলতে পারলে ইরান দুর্বল হয়ে পড়বে। শত্রুরা এটাও জানে যে হিজাব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে ইসলামি সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাত করা যাবে না কিন্তু তারপরও তারা ধর্মীয় মূল্যবোধকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে এবং নারীদেরকে টার্গেট করেছে। তবে এবার তারা ব্যর্থ হলেও আগামীতেও হয়তো তাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।