অক্টোবর ২৯, ২০২২ ২০:১১ Asia/Dhaka

সারা দুনিয়াতে ইহুদিরা একটা গোলমাল বাঁধিয়ে রাখতে চায় নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। ইহুদিরা জন্মগতভাবেই ইসলাম বিদ্বেষী। তারা হিজাবের যে ইস্যুটিকে সামনে এনে উসকানি দিচ্ছে আসলে এই ইস্যুটি প্রধান নয়! এর পেছনে আরও কিছু আছে! রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার আবদুল আউয়াল ঠাকুর।

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রগতির নামে, অধিকারের নামে এক ধরনের বেলেল্লাপনায় আগ্রহী করে তোলার মধ্য দিয়ে মূলত বে-পর্দার ব্যাপারটি বেপরোয়াভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

হিজাব

বিশিষ্ট এই সাংবাদিক বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যারা হিজাবের বিরোধীতা করছেন তারা মূলত নারীর শরীর এক তৃতীয়াংশ ঢেকে রেখে  নিজেদেরকে প্রগতির একটা আবরণ দেয়ার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার পেছনে অধিকার কিংবা উন্নয়ন সম্পর্কিত না। এর সাথে আসলে ভোগবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি শালীনতা, সভ্যতা, মানসিকতা এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের মা, বোন, মেয়েদেরকে পর্দার সাথে রাখতে চাই কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাহসা আমিনি

দেখুন, নির্লজ্জতার স্বপক্ষে দাঁড়ানো যেন বর্তমান সময়ের একটি ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কার্যত সারা বিশ্বকে পর্নোগ্রাফি যেভাবে গ্রাস করেছে সেই অবস্থায় হিজাবের পক্ষে দাঁড়ানোটাই সভ্যতার পক্ষে বলে বিবেচিত হবে।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা এবং প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব, ইরানে মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, ভাঙচুর ও জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, যেকোনো আন্দোলনের দুটো দিক থাকে। একটি হচ্ছে জাতীয় স্বার্থের বিষয় আর অন্যটি অন্যদের স্বার্থ রক্ষা। যে আন্দোলনের সাথে জাতীয় স্বার্থ জড়িত থাকে সেই আন্দোলনের-আন্দোলনকারী এবং নেতৃত্বে যারা থাকেন তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আন্দোলনে বিজয় অর্জন করা তবে জাতীয় সম্পদ ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন না করা। কারণ জাতীয় সম্পদ হচ্ছে জনগণের দ্বারা অর্জিত সম্পদ। এটা রাষ্ট্রের নিজস্ব নয়; জনগণের নিজস্ব সম্পদ। সুতরাং জাতীয় সম্পদ নষ্টের প্রসঙ্গ যদি আসে সেখানে ভাঙচুর সহিংসতা কিংবা অন্য যা কিছু হোক না কেন একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে জাতীয় সম্পদ নষ্টকারীরা অবশ্যই জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের স্বপক্ষে আন্দোলন পরিচালনা করতে পারে না।

রেডিও তেহরান: এসব সহিংসতা ও বিক্ষোভ ভাংচুরের সঙ্গে আমেরিকা-ইসরাইলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর পেছনে তাদের উসকানি রয়েছে। এমন বক্তব্য দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। আপনি কী বলবেন?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: বিষয়টি কিন্তু গভীরভাবে দেখা দরকার এই কারণে যে, গত কিছুদিনে ইরানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। আইআরজিসি বা ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ড, তারপর আরও একজন ব্রিগেডিয়ারকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালানো হয়েছে। পারমাণবিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনাকে একটি সমীকরণের মধ্যে এনে যদি এই আন্দোলন সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যে কথা বলেছেন তার সঙ্গে মেলানো যায় তাহলে একটি যোগসূত্র স্থাপন করা যাবে। এসব ঘটনা কে করেছে সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারা করেছে  সে ব্যাপারে যদি গণ অর্থে ধরে নেই- আমেরিকা, ইসরাইল কিংবা আরও কেউ এর পেছনে রয়েছে কি না সেটিকে স্পষ্ট করার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান এসব ঘটনার সাথে জড়িত আছে সেটি খোঁজ করে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

ইহুদিবাদী ইসরাইল

বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে আমেরিকা এবং ইসরাইলকে নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তার সাথে মেলাতে গেলে আসলে ঘটনাগুলো কিভাবে ঘটছে, কারা ঘটাচ্ছে এবং কোন বিবেচনায় সামনে আনা হয়েছে! যদি আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাথে যুক্ত করি তাহলে অবশ্যই বলতে হবে-যে ইস্যুটি সামনে এসেছে হিজাব আসলে এই ইস্যুটি প্রধান নয়। এর পেছনে আরও কিছু আছে। যারা এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন এবং টানছেন তাদেরকে যদি ধরা না যায় তাহলে কথাটা শুধুমাত্র স্লোগানে পরিণত হবে। ফলে যে বক্তব্য সর্বোচ্চ নেতা দিয়েছেন সেই বক্তব্যের সাথে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে অবশ্যই অভ্যন্তরীণভাবে এর সূত্র ও পুরো বিষয়টিকে সামনে আনতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে ইরানের এই বর্তমান আন্দোলনের সাথে কার কি সম্পৃক্ততা আছে। এরসাথে অন্য কোনো প্রক্রিয়া যুক্ত আছে কি না?

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইরান এমন একটি দেশ যে দেশটি পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামি বিপ্লবের দেশ। ইসলামি বিপ্লবের দেশ ইরান তাদের বিপ্লবের ধারাবাহিকতায়  পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে যেসব ঘটনা ঘটছে তার পেছনে অন্য কোনো বিষয় কাজ করছে কি না অথবা পুরনো সুতার কল যারা নেড়েছেন তারাই নাড়ছেন কি না মে বিষয়টি খুঁজে দেখা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যান্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।

রেডিও তেহরান: চলমান সহিংসতায় হিজাব-বিরোধী একটা মনোভাব ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে এবং এমন একটা ধারণা দেয়া হচ্ছে যেন হিজাবের কারণে ইরানে নারীর সমস্ত উন্নয়ন ও অধিকার আটকে আছে। আপনার মন্তব্য কী?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর:  দেখুন, হিজাব কেবল ইরানি নারীদেরই না বিশ্বের কোনো দেশের নারীদের উন্নয়ন কিংবা অধিকার  আটকে রাখে না। হিজাবের সম্পর্ক হচ্ছে পর্দার সাথে। আর পর্দার বিষয়টি হচ্ছে এরমাধ্যমে নারী নিজেকে আবৃত রাখবে। একটু পেছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে দু'টি বিশ্ব যুদ্ধের মধ্যে যে আগ্রাসী তৎপরতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সেইসব যুদ্ধে অধিক সংখ্যক পুরুষ নিহত হওয়ার ফলে অধিক সংখ্যক নারী বিধবা হয়ে যান। সেইসব নারীকে প্রগতির নামে, অধিকারের নামে এক ধরনের বেলেল্লাপনায় আগ্রহী করে তোলার মধ্য দিয়ে মূলত বে-পর্দার ব্যাপারটি বেপরোয়াভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

হিজাব পরিহিত ইরানি নারী

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যারা হিজাবের বিরোধীতা করছেন তারা মূলত নারীর শরীর এক তৃতীয়াংশ ঢেকে রেখে  নিজেদেরকে প্রগতির একটা আবরণ দেয়ার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার পেছনে অধিকার কিংবা উন্নয়ন সম্পর্কিত না। এর সাথে আসলে ভোগবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি শালীনতা, সভ্যতা, মানসিকতা এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের মা, বোন, মেয়েদেরকে পর্দার সাথে রাখতে চাই কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দেখুন, নির্লজ্জতার স্বপক্ষে দাঁড়ানো যেন বর্তমান সময়ের একটি ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কার্যত সারা বিশ্বকে পর্নগ্রাফি যেভাবে গ্রাস করেছে সেই অবস্থায় হিজাবের পক্ষে দাঁড়ানোটাই সভ্যতার পক্ষে বলে বিবেচিত হবে। হয়তো কথাটি একটু অন্যরকম শোনা যেতে পারে কিন্তু একথাটি ঠিক যে- ইসলাম যে হিজাবের ব্যবস্থা করেছে সেটি মূলত নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। আর নারীর সেই মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয় হিসেবে ইরান যদি হিজাব প্রসঙ্গে কঠোরতা আরোপ করে থাকে সেটি সভ্যতার বিপক্ষে নয় মোটেও। যারা হিজাবের বিপক্ষে আজ কথা বলছেন তারা হালকা এবং চটুল বাক্যে এটি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। যারা আজ হিজাবের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা মূলত এমন একটি বর্বরতার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান যাতে আবারও একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা যেতে পারে।

রেডিও তেহরান: ইরানে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলে মিছিল হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় সভা-সমাবেশ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তারা যদি ইরানের জনগণের প্রতি এতই দরদি হবে তাহলে এত নিষেধাজ্ঞা দেয় কেন? নিষেধাজ্ঞায় তো সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, ইসরাইলের প্রসঙ্গটি এরকম ইহুদিরা যেকোনো কারণেই হোক জানতেন যে শেষ নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পৃথিবীতে আসবেন। কিন্তু তিনি যেহেতু তাদের বংশের নয় সে কারণে ইগো থেকে তারা রাসুল (সা.) মানেননি। ইহুদিদের এই মানসিকতা তাদের জন্মসূত্রে। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি- জন্মসূত্রেই ইহুদিরা মুসলিমবিরোধী হয়। ইসরাইলি টিভিতে কিছুদিন আগে দেখেছিলাম ইসরাইলি তৎকালীন একজন মেয়র বলেছিলেন যে যত বেশি মুসলমান হত্যা করতে পারবে সে তত ভালো ইহুদি। এটি আমি বিবিসির নিউজে শুনেছিলাম। সুতরাং একটি ধর্মের কিংবা একজন মানুষের প্রবণতা যদি এমন হয়  আরেকটি ধর্মের মানুষকে হত্যা করা  এবং তাতে ভালোত্বের সার্টিফিকেট হয় তাহলে অনুমান করা যায় ইরানসহ সারা বিশ্বে মুসলামানদের বিরুদ্ধে ইসরাইলিদের একটি গণ আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় বর্তমান বিশ্বের সহিংসতা, বিপর্যয় এবং মানবিকতার চরম সংকট দেখা যাচ্ছে তার প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ইহুদি এবং ইসরাইলের ষড়যন্ত্র রয়েছে। কার্যত সারা দুনিয়াতে ইহুদিরা একটা গোলমাল বাঁধিয়ে রাখতে চায় নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। আর সেই সূত্রধরে ইরানের হিজাবের বিষয়টি তারা একটি ইস্যু হিসেবে সামনে এনেছে কারণ হিজাবের বিরোধীতা করলে একটা সস্তা সমর্থন পাওয়া যেতে পারে। তার বাইরে তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৯

ট্যাগ