গাজা ও সিরিয়ার খবর; ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বাড়ছে
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151268
পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ট্যাঙ্কগুলো বিমান সহায়তায় গাজার দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে এবং হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এলাকাটি সম্পূর্ণ দখল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
(last modified 2025-08-19T11:26:28+00:00 )
আগস্ট ১৯, ২০২৫ ১৭:২৪ Asia/Dhaka
  • • মাদক ব্যবহারকারী এক ইসরায়েলি সৈন্য
    • মাদক ব্যবহারকারী এক ইসরায়েলি সৈন্য

পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ট্যাঙ্কগুলো বিমান সহায়তায় গাজার দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে এবং হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এলাকাটি সম্পূর্ণ দখল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।

একই সাথে, ইসরায়েলিরা সিরিয়ার গোলান উপত্যকায় নতুন বসতি স্থাপনের চেষ্টা করছে এবং এ লক্ষ্যে তাদের বাহিনী কুনেইত্রা গ্রামে অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়া, মিশরীয় এবং কাতারিয় মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে হামাসের সাথে চুক্তি, ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রীর যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে সামরিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান। বিপর্যয়কর মানবিক পরিণতি সম্পর্কে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা এসব বিষয়ে এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো গাজার দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হচ্ছে

বিমান সহায়তায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো গাজার দক্ষিণে সাবরা এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা 'অপারেশন গিডিয়নের রথ'-এর অংশ এবং গাজা উপত্যকা পুনরায় দখলের প্রচেষ্টা। হিব্রু মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, হামাসের ওপর চরম আঘাত হানার জন্য এবং গাজা উপত্যকার কৌশলগত অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে এই অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, দক্ষিণ গাজায় এক মাঠ পরিদর্শনের সময়, সামরিক কমান্ডারদের সাথে দেখা করে এই অঞ্চল পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনার কথা তাদের জানিয়েছেন। এসব পরিকল্পনায় প্রায় দশ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা এবং গাজার বিভিন্ন শহর ও শরণার্থী শিবির দখল করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিপরীতে, হামাস এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধবিরতির জন্য মিশরীয় এবং কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

কুনেইত্রা আক্রমণের সময় ইসরায়েলিরা সিরিয়ায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করে

হিব্রু এবং আরবি সূত্রগুলি জানিয়েছে যে অধিকৃত সিরিয়ার গোলান উপত্যকায় নতুন বসতি স্থাপনের জন্য ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের একযোগে পদক্ষেপ এবং সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশের গ্রামগুলোতে ইসরায়েলি সৈন্যদের অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। একটি উস্কানিমূলক পদক্ষেপে, উত্তর পশ্চিম তীরে বসবাসকারী একদল ইহুদি বসতি স্থাপনকারী সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ার গোলান উপত্যকায় "হাবাশানদের নাতি-নাতনি" নামে একটি বসতি স্থাপনের চেষ্টা করে। এই লোকেরা, তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে, একটি প্রতীকী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে, কিন্তু ইসরায়েলি সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপের পরে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। একই সময়ে, ইহুদিবাদী সৈন্যরা সাঁজোয়া যান নিয়ে কুনেইত্রা প্রদেশের "আইন জিওয়ান" গ্রামে প্রবেশ করে এবং সেখানকার মোটরসাইকেলগুলোর ওপর হামলা চালানোর পরে, বেসামরিক নাগরিকদের বাড়িঘর পরিদর্শন করে।

যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে গাজার উপর সামরিক চাপ অব্যাহত অব্যাহত রাখার আহ্বান

ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গাজা দখল অব্যাহত রাখা এবং হামাসের সাথে পূর্ণ সংঘর্ষ ও গাজা উপত্যকার ওপর অবরোধকে সমর্থন করেছেন। ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল ইয়োয়েল স্মোট্রিচ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক বার্তায় হামাসের সাথে বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সামরিক চাপ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সমস্ত জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। তিনি এমন এক সময়ে এ কথা বললেন যখন মিশরীয় এবং কাতারি মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের পরিকল্পনায় হামাসকে সম্মত করতে সফল হয়েছে, যদিও ইসরায়েলি বিরোধিতার কারণে এর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক পরিকল্পনার ভায়াবহ মানবিক পরিণতি নিয়ে জাতিসংঘের সতর্কতা

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দফতর ইসরায়েলি সামরিক পরিকল্পনার কারণে গাজা উপত্যকার জনগণের বিপর্যয়কর পরিণতি এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে গাজা উপত্যকার ৮৬ শতাংশেরও বেশি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। সংস্থাটি গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিনা বাধায় প্রবেশাধিকার এবং মানবিক সাহায্য পাঠানোর ওপর জোর দিয়েছে।

মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ

হামাস এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলি মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে; একটি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দীদের বিনিময়। এই পরিকল্পনায় প্রস্তাব করা হয়েছে যে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে ১,০০০ মিটার দূরে সরে যাবে এবং ১০ জন ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। জ্বালানি, পানি, বিদ্যুৎ এবং হাসপাতাল পুনর্নির্মাণসহ মানবিক সহায়তাও গাজায় পাঠানো হবে এবং রাফাহ ক্রসিং পুনরায় চালু করা হবে। তবে, যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রতি ইসরায়েলের বিরোধিতা চুক্তির সাফল্যের সম্ভাবনা হ্রাস করেছে।

ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে মাদক ব্যবহারের বিস্তার

হিব্রু সংবাদপত্র "ইয়েদিওত আহারনোট" ইহুদিবাদী ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে মাদক ব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, অ্যালকোহল সেবনের পাশাপাশি, ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে মাদক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মতো মাদকের  ব্যবহার সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে এবং এই প্রবণতার পরিণতি সম্পর্কেও সতর্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, গাজা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবেক সৈন্য আত্মহত্যা করেছে, যা তাদের নিরাপত্তা এবং মানসিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। #

পার্সটুডে/এমআরএইচ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।