ডিসেম্বর ১৯, ২০২২ ১৯:৫৩ Asia/Dhaka
  • ইউরোপ  সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল
    ইউরোপ সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল

মানবাধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী আচরণ সম্পর্কিত আলোচনার গত পর্বে আমরা আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলেছি। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়ে আরো আলোচনা করবো।

পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে মানবাধিকার বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। মানবাধিকারের আড়ালে তারা গোপনে অনেক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের আরো অনেক দেশ মানবাধিকারের পক্ষে অনেক বড় বড় কথা বলে কিন্তু বাস্তবতার সাথে তাদের কথা ও আচরণের কোনো মিল নেই। কারণ এ দেশগুলোতে বিরোধী মত দমন, স্থানীয় আদিবাসী ও অস্বেতাঙ্গদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুন্ন করা, কারাবন্দিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় অভিবাসীদের সাথে দুর্ব্যবহার প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায় যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় দৃষ্টান্ত। এ  থেকে বোঝা যায় পাশ্চাত্য তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে মানবাধিকার ইস্যুটিকে ব্যবহার করে। মানবাধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির বিষয়টি কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, পাশ্চাত্যের এ আচরণ বিশ্বে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখবে না। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টার কারণে মানবাধিকারের প্রকৃত মর্ম হারিয়ে যেতে বসেছে।

সামাজিক শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বিষয়ক গবেষক রবার্ট ফ্যান্টিনা বলেছেন, ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রস্তাব পাশ হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৮টি দেশ ওই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল। প্রস্তাবে মানবাধিকার রক্ষার জন্য খুঁটিনাটি এমন অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু এ প্রস্তাবের প্রতি ওয়াশিংটন সমর্থন জানালেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশ মানবাধিকার বিষয়ক নীতিমালা মানছে না। 

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ক নীতিমালায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে গিয়ে এবং ধর্ম, বর্ণ ও জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখার কথা বলা হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক ঘোষণায় ইতিবাচক কথা থাকলেও দুঃখজনকভাবে এটি এখন অন্য দেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য পাশ্চাত্যের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে পাশ্চাত্য অন্য দেশের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।      

ইসলাম ধর্মেও মানবাধিকারের নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। পাশ্চাত্যে মানবাধিকারের যে দর্শন তার সাথে ইসলামের বেশ খানিকটা পার্থক্য রয়েছে।  ইসলামের দৃষ্টিতে মানবিয় মূল্যবোধ রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়টি মেনে চলতে মুসলমানদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সে কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

যদিও বর্তমান মানব জাতি বস্তুগত উন্নয়নে  ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে কিন্তু সভ্যতা টিকিয়ে রাখা এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য ঈমান ও আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন রয়েছে। ইসলামে মানবাধিকার রক্ষার উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখা। কিন্তু পাশ্চাত্যের মানবাধিকার নীতিমালার সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। এই পার্থক্য থেকে বোঝা যায়, এ কারণেই পাশ্চাত্যের সরকারগুলো অবলীলায় মানবাধিকার বিষয়ে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে এবং এটাকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকারগুলোর এ আচরণের কারণে মানবাধিকার রক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না। ফলে মানবিয় মূল্যবোধ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।

ঠিক একই কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদও বিভিন্ন দেশে মানবাধিকারের নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নিরপেক্ষভাবে নজরদারি করতে পারছে না। মানবাধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর দ্বিমুখী নীতির কারণে এই ইস্যু এখন রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক পারসা জাফরি মানবাধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্যের এ আচরণের সমালোচনা করে বলেছেন, এটাকে রাজনৈতিকিকরণ করা না হলে মানুষের জীবন আরো সুন্দ হয়ে উঠবে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ঠিক উল্টো চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর পক্ষপাতমূলক ও স্বেচ্ছাচারী আচরণের কারণে মানবাধিকারের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর যে গবেষণা বা তদন্ত হয়েছে তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিগুলোর দ্বারা প্রভাবিত এসব গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করা। এরফলে কেবল মানবাধিকার পরিষদের নিরপেক্ষতা, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুন্ন হচ্ছে।

মানবাধিকারের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী আচরণ থেকে বোঝা যায় যেখানেই তাদের স্বার্থ রয়েছে সেখানেই তারা অন্য দেশের বিরুদ্ধে এ ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অন্যভাবে বলা যায়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবচেয়ে  বড় শত্রু তারাই যারা এটাকে সেইসব দেশের সরকার ও জাতির বিরুদ্ধে ব্যবহার করে যারা কিনা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার।  মানবাধিকারের দাবিদাররা এমন সময় মানবাধিকার রক্ষার কথা বলছে যখন তারা নিজেরাই ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জনগণের জীবনকে দুর্বিসহ করে দিয়েছে। এমনকি জরুরি ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য আমদানি থেকেও ইরানকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বহু ইরানি চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছে।

ইসলামি ইরান মানবাধিকারের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করে এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ আচরণ করার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।  একইসাথে ইরান এও জানিয়েছে সব জাতির নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস, সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ