জানুয়ারি ০৭, ২০২৩ ১২:০৪ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। আজকের আসরেও তোমাদের সঙ্গে আছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।

তোমরা নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে অনেক কাহিনী শুনেছো। কারণ এই দু'টি বিষয়ে মানুষের জন্মের পর থেকেই আগ্রহ ছিল, আছে এবং থাকবে। এত পুরোনো বিষয় হবার পরও আমরা কিন্তু এখনও জানি না, কার্‌ সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত আর কার্‌ সঙ্গে উচিত নয়। আজকের আসরের আমরা এ সম্পর্কেই আমরা একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। তাহলে প্রথমেই জেনে নিই কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত?

ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুর মর্যাদা অনেক উপরে। এজন্যই মহান আল্লাহ, নবী করিম (সা.) এবং তাঁর বংশের মহান ইমামগণ বন্ধু নির্বাচন করার ব্যাপারে মূল্যবান কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না।"  

আর হাদিসে বলা হয়েছে, "মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।"    

রাসূল (সা.) বলেছেন, "দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে। এজন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি।"

অন্যদিকে আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।"

ইমাম গাযযালী (রহ.) বলেন, "সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং তিনটি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল- ১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং ৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান।'

ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ'। এ উক্তির মূলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে। তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। জ্ঞানী, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ত্যাগী, নিঃস্বার্থ, চরিত্রবান, সহজ-সরল ইত্যাদি গুণাবলি দেখে বন্ধু নির্বাচন করলে আশা করা যায় সে উত্তম বন্ধু হতে পারে।

বন্ধুরা, বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম তা তোমাদের জীবনে কাজে লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তো বন্ধুরা, এবারে রয়েছে বন্ধুত্ব নিয়ে একটি গান। গানের গীতিকার ও সুরকার আবুল আলা মাসুম। আর গেয়েছে শিশুশিল্পী জাহিন ইকবাল ও সামিন হাসান।

দুই বন্ধুর মনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চমৎকার গানটি শুনলে। বন্ধুরা, তোমাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে,  ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) পাঁচ শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই পাঁচ শ্রেণীর মানুষ হলো- মিথ্যাবাদী, ইতর, কৃপন, অভদ্র ও নির্দয়। অন্যদিকে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই তিন শ্রেণী হলো- বিশ্বাসঘাতক, নির্মম ও মিথ্যাবাদী।

বন্ধুরা, এবার এমন এক লোকের কথা বলব যিনি হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-এর বন্ধু হিসাবে খ্যাত ও পরিচিত ছিলেন। কিন্তু একদিন সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের কেউ কোনদিন চিন্তাও করতে পারেননি যে, এ বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটবে। একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাবেন।  

একদিন লোকটি ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর সাথে একটি বাজারের দিকে রওনা হলেন। লোকটির সাথে তার সাথে তার কৃষাঙ্গ গোলামও ছিল। গোলাম তার মালিকের পিছে পিছে চলছিল।

কিছু দূর চলার পর পেছনে ফিরে সে তাকিয়ে দেখে তার গোলাম নেই। আরও একটু সামনে চলার পর পিছনে ফিরে দেখল গোলামকে দেখা যায় না। কিছুক্ষণ পর আবার মুখ ঘুরিয়ে দেখল কিন্তু গোলামের কোনো খোজ নেই। মনে হচ্ছিল সে বাজারের খেল-তামাশা দেখার মধ্যে লিপ্ত হয়ে গেছে। আর তার মালিক ও মালিকের সাথীরা অনেক আগে চলে গেছে। চতুর্থবার পিছনে ফিরে দেখে যে তার গোলাম হাজির। গোলামকে দেখেই সে ক্রোধে আক্রোশে বলে উঠল: হারামজাদা! এতক্ষণ কোথায় ছিলি?

বন্ধুর মুখ থেকে এমন অশ্রাব্য কথাটি শুনে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) অবাক হয়ে বললেন, তুমি তার মাকে গালি দিলে? তুমি তার মাকে অবৈধ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত করলে? আমি তো এতদিন ভেবেছিলাম যে, তুমি একজন মোত্তাকী- পরহেজগার লোক। কিন্তু আজ তোমার প্রকৃত রূপ সামনে এসে গেছে। দেখা যাচ্ছে তোমার মধ্যে তাকওয়া পরহেজগারীর নাম-নিশানাও নেই।

লোকটি বললো, হে রাসূলের সন্তান! এ গোলামটি আসলে সিন্ধী। তার মাতাও সিন্ধী। আপনি তো জানেন যে, তারা মুসলমান নয়। আর গোলামের মা কোন মুসলমান নারী নয় যে, আমি তার উপর অবৈধ কাজের অপবাদ লাগিয়ে দিয়েছি।

ইমাম বললেন, তার মাতা কাফের ছিল, একশবার থাকুক। প্রত্যেক জাতির মধ্যেই বিয়েশাদীর একটা নিয়ম-কানুন ও বিশেষ প্রথা বর্তমান থাকে। যদি কোনো জাতির লোক তার জাতীয় নিয়ম-নীত ও পন্থা অনুসরণ করে বিয়ে-শাদী করে, তাহলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কোনোদিন অবৈধ সম্পর্ক হবে না। আর তাদের সন্তানদেরকে হারামজাদা বা অবৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

ইমাম জাফর সাদেক (আ.) তাকে আরো বললেন, তুমি এ মুহূর্তে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাও। আর কোনোদিন আমার কাছেও আসবে না।

সেদিন থেকে কেউ হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আ.)-কে আর কোনোদিন ঐ লোকটির সাথে চলতে দেখেনি। আজীবন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ বহাল ছিল।

রাসূল (সা.) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, আমানতদারি, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা প্রভৃতি গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সেইসাথে বন্ধুকে নিয়ে সৎপথে চলার চেষ্টা করতে হবে।    

বন্ধুরা, আসরের এ পর্যায়ে রয়েছে এ সম্পর্কেই একটি গান। এটি লিখেছেন সুমাইয়া আক্তার, সুর করেছেন এনামুল হক। আর গেয়েছে শিশুশিল্পী জাহিন ইকবাল ও দিগন্ত। 

শিক্ষামূলক গানটি শুনলে। তো শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর। কথা হবে আবারো আগামী আসরে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ