জানুয়ারি ০৮, ২০২৩ ২০:৩৭ Asia/Dhaka
  • ইয়েমেনের শরণার্থী
    ইয়েমেনের শরণার্থী

গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আলোচনা সভায় মানবাধিকার ইস্যুতে ইরানের বিরুদ্ধে বিষেদগার গাওয়া হচ্ছে। পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা বক্তব্য ও নানা অভিযোগ এমনভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে যা থেকে বোঝা যায় বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে তারা বিষেদগার করছে। তবে এ আচরণের মাধ্যমে তারা মানবাধিকার পরিস্থিতির কখনোই উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না।

আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ মানবাধিকার ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার জন্য সত্যিকারের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইরানের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির কাসেম মোমেনি বলেছেন, 'মানবাধিকার বিষয়টি আমেরিকা ও ইউরোপের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে'। তিনি বলেন, 'সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে আমরা কখনোই নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নীতিমালা মেনে চলতে দেখিনি। কিন্তু এ দেশটিই আবার ইউরোপ ও আমেরিকার প্রধান কৌশলগত মিত্র। অথচ মানবাধিকারের দাবিদার পাশ্চাত্যের এ দেশগুলো একই ইস্যুতে ইরানের বিরুদ্ধে সোচ্চার'।

গত সাত বছর ধরে ইয়েমেনে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে তা মানবাধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির আরেকটি বড় দৃষ্টান্ত। পাশ্চাত্য ইয়েমেনের সাধারণ মানুষের ওপর সৌদি আরবের বিমান হামলার বিরুদ্ধে কোনো কথা তো বলছেই না বরং তারা আগ্রাসী এ দেশটির কাছে কোটি কোটি টাকার অস্ত্র  বিক্রি করছে এবং হামলা অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করছে।

খোদ আমেরিকায় বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের ওপরেও নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ জুলুম নির্যাতন চালানোর ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ইউরোপেও অভিবাসী ব্যক্তিদের প্রাথমিক মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য বহু অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, উগ্রপন্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধি ও জাতিগত সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানদের সাথে বর্ণবাদী আচরণের ঘটনা ঘটছে যা পাশ্চাত্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এমনকি পাশ্চাত্যের সরকারগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের অনুগত স্বৈরশাসকদেরকে বিভিন্ন পদক প্রদান ও পুরস্কারে ভূষিত করছে যাতে তারা জনগণের আন্দোলন দমনে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

একদিকে ইসরাইল ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করছে অন্যদিকে সৌদি আরব ইয়েমেনে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব অপরাধযজ্ঞে আমেরিকাসহ ইউরোপের অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। ইসরাইল ও সৌদি আরবের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নমনীয় অবস্থান নিঃসন্দেহে অগঠনমূলক এবং ধ্বংসাত্মক। আজকে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা এমন সময় মানবাধিকার ও মানবিয় মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলছে যখন তারাই আবার ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। মানবাধিকারের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের এই দ্বিমুখী নীতির কারণে আগ্রাসী ও শিশু হত্যাকারী জালিম সরকারগুলো আরো উৎসাহিত হচ্ছে এবং পরোক্ষভাবে তাদের অপরাধযজ্ঞের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। পাশ্চাত্যের ওই দেশগুলো শুধুমাত্র নিজেদের আর্থিক ফায়দা হাসিলের জন্য আগ্রাসী সরকারগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। অথচ এর ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে এবং নারী ও শিশুসহ লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্প্রতি বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)এর নবুওত প্রাপ্তি দিবস উপলক্ষে দেয়া এক ভাষণে সত্য ঘটনা আড়াল করা বা বিকৃতভাবে তুলে ধরাকে শত্রুদের নরম যুদ্ধের অন্যতম কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাশ্চাত্যের মিথ্যাচারের কয়েকটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, 'গত সাত বছর ধরে মার্কিন সরকারের সমর্থন ও সবুজ সংকেতে ইয়েমেনের মজলুম জনগণের ওপর বোমা বর্ষণ এবং খাদ্য ও ওষুধসহ অন্যান্য জরুরি পণ্যের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে সৌদি আরব। অথচ পাশ্চাত্যসহ আন্তর্জাতিক সমাজ এ ব্যাপারে টুঁশব্দটিও করছে না। কিন্তু যখনই ইয়েমেনের প্রতিরোধকামী জনগণ নিজেদের তৈরি অস্ত্র দিয়ে শত্রুর ওপর পাল্টা হামলা চালাচ্ছে তখনই জাতিসংঘসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের এ আচরণ মার্কিন পদক্ষেপের চাইতেও ন্যক্কারজনক'।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পাশ্চাত্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তোলা, জাপানে মার্কিন পরমাণু বোমা হামলায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ নিহত হওয়া, উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মার্কিন অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন তারাই আবার সন্ত্রাসবাদ দমনের শ্লোগান দিচ্ছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শিশুদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতা মানবাধিকার ইস্যুতে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতির আরেকটি বড় দৃষ্টান্ত। বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনের গাজার ওপর ইসরাইলি অবরোধ চলছে যা কিনা সকল আন্তর্জাতিক আইনকানুনের লঙ্ঘন। অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে পাশ্চাত্য কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ইসরাইল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ইসরাইল হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইসরাইল বিশ্বে শিশু হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১৯৬৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ইসরাইল ১৮ বছরের নীচে ৫০ হাজারের বেশি শিশু-কিশোরকে হত্যা করেছে। এছাড়া, এখনো শত শত ফিলিস্তিনি শিশু ইসরাইলের বিভিন্ন জেলখানায় অনেক বছর ধরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে পাশ্চাত্যের মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে শিশু হত্যার বিরুদ্ধে কখনোই সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মানবাধিকার বিষয়ে এসব দেশের সরকারের দ্বিমুখী আচরণ।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যেমনটি বলেছেন, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কিংবা চেয়ে চেয়ে দেখছে তারা মানবাধিকারের সমর্থক হতে পারে না। সে কারণে তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে এমন আশা করাও ভুল হবে। কেননা তারাই সন্ত্রাসবাদের মূল উৎস বা উস্কানিদাত।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ