এপ্রিল ০৩, ২০২৩ ১৯:০৪ Asia/Dhaka

রমজানের প্রধান উদ্দেশ্য হল খোদা-সচেতনতা বা তাকওয়া অর্জন। মহান আল্লাহর ও খোদা-সচেতন ব্যক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দানশীলতা।

মহানবী (সা)' বলেছেন, বিচার-দিবসের ভূমি হবে আগুন। আর একমাত্র সাদাক্বা বা সদকাই সেদিন মুমিনের জন্য ছায়া হবে।-অর্থাৎ কিয়ামতের দিনে ভূমি হবে আগুনের মত উত্তপ্ত। দান-খয়রাত বা সদকা প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মহানবী আরও বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত প্রতিদিন সদকা দেয়া। -কেউ কেউ বললেন, হে রাসুল (সা)! প্রতিদিন সদকা দিলে তো আমরা অচল হয়ে পড়ব!  তখন মহানবী বললেন, ভেবো না যে কেবল অর্থ দান করাই সদকা। পথ থেকে একটি বাধা অপসারণ করাটাও এক ধরনের সদকা। রোগিকে দেখতে যাওয়াও একটি সদকা। কাউকে পথ দেখানোটাও সদকা।
মহানবীর এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় অন্যের উপকারে যে কোনো কাজ করাই সদকা। একজন দুর্বল বা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দেয়াটাও সদকা, তা সেই ব্যক্তি মুসলিম বা অমুসলিম যা-ই হোন না কেন।

ত্যাগ ও দানশীলতার ইতিহাসে উম্মুল মু'মিনিন হযরত খাদিযা (সা)রয়েছে শীর্ষস্থানীয় অবস্থান।  তিনি তাঁর যুগে আরবের সবচেয়ে ধনী হয়েও দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য এবং ইসলামের জন্য তাঁর সর্বস্ব দান করেছিলেন। দশই রমজান তাঁর ওফাত-দিবস। তাঁর জন্ম হয়েছিল মক্কায়। পিতা ছিলেন খুয়াইলিদ বিন আসাদ। খুয়াইলিদ ছিলেন কুরাইশ গোত্রের একজন ধনী ব্যবসায়ী।

কুরাইশরা ব্যবসাকে খুব গুরুত্ব দিত। অন্য আরব গোত্রের বেশিরভাগ মানুষ বছরে একবার বাণিজ্য ভ্রমণে বের হলেও কুরাইশরা বছরে দুইবার বাণিজ্য ভ্রমণে বের হত। সুরা কুরাইশে মহান আল্লাহ কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তারা শীতকালে নিরাপদে ইয়েমেনে ও গ্রীস্মকালে সিরিয়ায় সফর করতে পারত। আবরাহার হস্তি বাহিনীর মোকাবেলায় মহান আল্লাহ কুরাইশদেরকে রক্ষা করেছিলেন।

হযরত খাদিযার মাতা মহানবীর জন্মের ৫ বছর পর মারা যান বলে উল্লেখ করা হয়। আরো দশ বছর পর মারা যান তাঁর বাবা। বাবার মৃত্যুর পর খাদিযা তাঁর পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হন ও বাবার ব্যবসা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব পালন করেন এবং তা আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হন।  মহানবীর সঙ্গে বিয়ের আগেও খাদিযা তাঁর সম্পদ ইয়াতিম, অক্ষম, দুর্বল ও দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করতেন। দরিদ্র ও নিঃস্ব মেয়েদের বিয়ের খরচও তিনি দিতেন। হযরত খাদিযার পরিবার ইসলাম পূর্ব যুগেও একত্ববাদী ছিলেন এবং তারাও হযরত ইব্রাহিমের ধর্ম বা দ্বীনে হানিফের অনুসারী ছিলেন মহানবীর দাদা ও পিতার মতই। মহানবীর চাচা আবু তালিবও ছিলেন অনুরূপ এবং অবশ্য পরে তিনি গোপনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।  চাচা আবুতালিব মহানবীর সুরক্ষায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, তুমি যদি দারিদ্রের শিকার হও তবে আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা কর সদকা দেয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ এ অবস্থায় তোমার দারিদ্র দূর করবেন। -এ বিষয়ে মহান আল্লাহর প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা থাকা উচিত। আমাদের যদি ২৫ টাকা থাকে তাহলে দরিদ্রদের অন্তত ৫ টাকা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। এটাও মনে রাখা উচিত যে আমাদের সব কিছুর আসল মালিক হলেন মহান আল্লাহ। ইসলাম কৃপণতা পছন্দ করে না। আবার সব উজাড় করে দিয়ে চরম উদারতাও দেখাতে বলে না। বরং খরচ বা দানের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলে।- যাই হোক হযরত খাদিযার অর্থে প্রতিপালিত হত মক্কার ইয়াতিম ও দরিদ্ররা। জাহিলি যুগে আরবরা যখন নারীকে সম্মান দিত না। স্ত্রীর প্রতি আচরণ যখন ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপমানজনক এবং আরবদের অনেকেই যখন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত নারীর প্রতি সেই অসম্মানের যুগেও আরবরা হযরত খাদিযাকে দেখতো সম্মানের দৃষ্টিতে। তারা তাঁকে বলতো তাহেরা তথা পবিত্র। দানশীলতা ও  মানুষের সঙ্গে সদাচারণের কারণে জনগণ তাকে বলত কুরাইশ রাজকন্যা!

হযরত খাদিযাকে স্মরণ করে মহানবী অশ্র-সজল হয়ে পড়তেন। তিনি বলতেন: মানুষ যখন আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছিল তখন খাদিযাই সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি আমাকে সে সময় সহায়তা করেছেন ও সেবা করেছেন নিজেই এবং সাহায্য করেছেন অর্থ দিয়ে যখন কেউই আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।
মহানবী (সা) হযরত খাদিযাকে বিয়ে করেন নিজের ২৫ বছর বয়সে। সে সময় হযরত খাদিযার বয়স ছিল ৪০ বা মতান্তরে ২৮ বলা হয় ইসলাম প্রচারের কাজে ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে কঠোর-নিষেধাজ্ঞা কবলিত মুসলমানদের সেবায় সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেন হযরত খাদিযা (সা)। ফলে নিজ কন্যা ফাতিমার জন্য তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদই রেখে যেতে পারেননি।  শেবে আবু তালিবে অবরুদ্ধ মুসলমানদের সঙ্গে তখন কথা বলা, লেনদেন করা এবং এমনকি পানি ও খাদ্য সরবরাহ করাও নিষিদ্ধ করেছিল কাফের কুরাইশ নেতৃবৃন্দ। এ সময় পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণের গৌরবের অধিকারী কিশোর আলী (আ) গোপনে ঝুঁকি নিয়ে মক্কায় যেতেন এবং এক মোষক পানি নিয়ে আসতেন। আর সেই পানির জন্য হযরত খাদিযার সম্পদ থেকে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করা হত। খাবারও আনা হত হযরত খাদিযার অর্থ দিয়ে।

বলা হয় হযরত আলীর তরবারি বা বীরত্ব ও হযরত খাদিযার এতসব ত্যাগ না থাকলে ইসলামের অস্তিত্বই থাকতো না। তাই খাদিযা সা. আ. ছিলেন সত্যিকার অর্থেই উম্মতের মাতা বা উম্মুল মু'মিনিন। মহান ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল (আ) মহান আল্লাহর সালাম পৌঁছে দিতে হযরত খাদিযার কাছে।

যখন কয়েক বছর পর শেবে আবু তালিবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় তখন হযরত খাদিযা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন শারীরিকভাবে। বলা হয় তার কাছে আর কোনো অর্থ-কড়িই ছিল না। এমনকি কাফন দেয়ার কাপড় কেনার সামর্থও ছিল না। তাই তিনি ওসিয়ত করেছিলেন যেন মহানবীর জামাকে তার কাফন করা হয়।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে হযরত খাদিযার জীবন থেকে দান ও আত্মত্যাগের গুরুত্ব বোঝার এবং তাঁর আদর্শের অনুসারী হওয়ার তৌফিক দান করুন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ