মে ০৯, ২০২৪ ১৮:৫৫ Asia/Dhaka
  • পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত
    পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত

ইসলামী ইরানের পবিত্র কোম শহরের ধর্মতত্ত্ব-কেন্দ্রের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক সুরা হুদ-এর ১১৪নম্বর আয়াতকে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত বা বাক্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতে ভালো কাজগুলো বা পুণ্য কর্মের প্রভাবে পাপ ও মন্দ কাজগুলোর প্রভাব দূর হয়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশা ও প্রশান্তি হচ্ছে মানুষের জীবনের প্রাথমিক ভিত্তি। আশা ছাড়া মানুষে বেঁচে থাকার প্রেরণা পায় না। মহানবী (সা) বলেছেন, আশা-আকাঙ্ক্ষা আমার উম্মতের জন্য আল্লাহর রহমত ও করুণা। আশা না থাকলে কোনো মা-ই সন্তানকে দুধ পান করাতেন না ও কোনো চাষিই গাছ বা বৃক্ষ রোপণ করতেন না। (বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-৭৭, পৃ-১৭৫) 

একদিন মহানবীর (সা) স্থলাভিষিক্ত বা প্রতিনিধি ও শিয়া মুসলমানদের প্রথম ইমাম আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) একদল ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, তোমাদের দৃষ্টিতে পবিত্র কুরআনের কোন্ আয়াতটি পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত?  জবাবে সমবেত ব্যক্তিরা নিজ নিজ পছন্দ বা মানসিক অবস্থার আলোকে নানা আয়াত উল্লেখ করেন। যেমন কেউ কেউ বললেন সুরা নিসার ৪৮ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে বলা হয়েছে : মহান আল্লাহ শির্ক বা অংশিবাদিতার পাপ ক্ষমা করবেন না, এ ছাড়া অন্য সব পাপ ক্ষমা করবেন। 

হযরত আলী (আ)-এর জবাবে বললেন, উত্তম, তবে আমি যে আয়াতের কথা বলতে চেয়েছি এই আয়াত সেই আয়াত নয়। 

কেউ কেউ সুরা নিসার ১১০ নম্বর আয়াতের কথা বললেন। এ আয়াতে বলা হয়েছে: যে গোনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পাবে।  

হযরত আলী (আ)-এর জবাবে বললেন, এও উত্তম, তবে আমি যে আয়াতের কথা বলতে চেয়েছি এই আয়াত সেই আয়াত নয়। 

কেউ কেউ সুরা যুমারের ৫৩ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন। এ আয়াতে বলা হয়েছে: 

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

হযরত আলী (আ)-এর জবাবে বললেন, এ আয়াতও উত্তম, তবে আমি যে আয়াতের কথা বলতে চেয়েছি এই আয়াত সেই আয়াত নয়। 

অন্য কয়েকজন অন্য এক আয়াত উল্লেখ করেন। কিন্তু হযরত আলীর উদ্দিষ্ট আয়াত ছিল ভিন্ন আয়াত। তাই অবশেষ তিনি বললেন: আমি মহান আল্লাহর হাবিব রাসুলুল্লাহ (সা)'র কাছ থেকে শুনেছি যে তিনি বলেছেন, পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত হল সুরা হুদ-এর ১১৪ নম্বর আয়াত। এ আয়াতে বলা হয়েছে:   

আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পুণ্য কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।

- আগের উল্লেখিত কয়েকটি আয়াতে মহান আল্লাহ কেবল পাপ ক্ষমার কথা বলেছেন। কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে তাড়িয়ে দেয় এবং এমনকি পাপের প্রভাব বা কুফলগুলোও দূর করে দেয় এমনভাবে যেন সে অতীতে কোনো পাপই করেনি। অর্থাৎ ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে 'তাকফির' করে বা ঢেকে দেয় তথা আগের কাজগুলোকে ঠেকিয়ে দেয়। এভাবে এ আয়াতের সর্বোচ্চ আশাব্যঞ্জকতার দিকটি ফুটে উঠেছে। 

ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে বিলোপ করে ও পাপগুলো ঢেকে দেয়-এমন সুসংবাদ মানুষের মধ্যে ভালো কাজ করার প্রেরণা জাগিয়ে তোলে ও মন্দ কাজগুলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর সবচেয়ে ভালো কাজ হল দিন ও রাতের অবশ্য পালনীয় নামাজগুলো যা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। নামাজ পাপের প্রভাব ধ্বংস করার পাশাপাশি প্রশান্তি ও আশার নিয়ামক। 

সূত্র: ইরানের মেহের বার্তা সংস্থা, (সাইয়্যেদ আহমাদ মির এমাদি, ফার্সি সন-১৩৯৯) ২০২০ #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ