নভেম্বর ০১, ২০২২ ২১:১১ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা ভারত থেকে আসা শেখ মুস্তাক আহমদের সাথে ইরান সফর নিয়ে কথা বলব। তিনি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলবেড়িয়াতে থাকেন। পেশায় একটি পত্রিকার সম্পাদক ও শিক্ষক।

জনাব শেখ মুস্তাক আহমদ, রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: জনাব মোস্তাক আহমেদ, আপনারা বেশ কয়েকজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতা, হাওড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইরানে এসেছেন। তো আপনাদের ইরানে আসার উদ্দেশ্য কী?

শেখ মুস্তাক আহমদ: আমাদের মূলত ইরানে আসার উদ্দেশ্য হলো এই দেশটিকে দেখা এবং একটি শর্টকোস করা। শর্টকোর্সটি ইরানের ধর্মনগরী পবিত্র কোমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় জানাতে চাই। আমরা খুব ছোটবেলা থেকে রেডিও তেহরান শুনতাম। আমাদের বাড়িতে একটা রেডিও ছিল। আর ছোটবেলায় সেই রেডিওর মাধ্যমে ইরান সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। ইরানের ইসলামি বিপ্লব যখন হচ্ছিল তখন আমি খুব ছোট। পরে ইরানের ইসলামি বিপ্লব সম্পর্কে জানতে পারি রেডিও তেহরানের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে আমি বড় হই এবং আজ আধুনিককালে ইউটিউব, ফেসবুকের মাধ্যমে রেডিও তেহরান শুনি। সেই সময় থেকেই ইরানের যে বিপ্লব, ইরানের পরিকাঠামো সবকিছু মিলিয়ে ইরান দেশটি আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগত। আমাদেরকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করত ইরান। এখানে কোমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক বন্ধু পড়াশুনা করেন। ওনার নাম ড. মাওলানা রেজওয়ান সালাম খান। উনি ওখান থেকেই পিএইচডি করেছেন। আমার ওই বন্ধুর মাধ্যমেই আমরা ইরানে এসেছি।

আমাদের ইরানে আসার উদ্দেশ্য মূলত দুটি। একটি ইরানকে খুব কাছ থেকে দেখা এবং কোমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্টকোর্স করা।

রেডিও তেহরান: জনাব মোস্তাক আহমেদ, আপনি কোমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্ট কোর্স করার জন্য এসেছেন বলে জানালেন। তো শর্টকোর্স সম্পর্কে যদি আপনি কিছু বলেন?

শেখ মুস্তাক আহমদ: জ্বি, আমাদের ঐ শর্টকোর্সের মধ্যে মূলত বেশ কয়েকটি বিষয় রাখা হয়েছে। যেমন- হিজামা, তিব্বে সুন্নতি বা তিব্বে রাসুলুল্লাহ (সা)। এর বাইরে মিডিয়ার আগ্রাসনও ছিল কোর্সের একটি বিষয়। অর্থাৎ গোটা বিশ্বে কিভাবে মিডিয়া মানব সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে সেটিও অর্ন্তভুক্ত ছিল। মিডিয়া আগ্রাসনের দুরভিসন্ধিগুলোকে আমাদের কোর্স প্রশিক্ষকরা তুলে ধরলেন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়। এর বাইরেও আরও বেশ কিছু বিষয় ছিল। এককথায় কোর্সটি আমাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমরা এই কোর্সের মাধ্যমে অনেক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি।  আমরা দেশে ফিরে গিয়ে এই জ্ঞানের আলোকে কাজ করতে পারব।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা এই কোর্সের মধ্যে আহলে বাইত সম্পর্কে কি কোনো আলোচনা ছিল কি না?

শেখ মুস্তাক আহমদ: জ্বি আহলে বাইত সম্পর্কিত একটি বিষয় আমাদের শর্টকোর্সের মধ্যে ছিল।

শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা ইরান সফর নিয়ে ভারত থেকে আসা সাংবাদিক, শিক্ষক মোস্তাক আহমেদের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি খুব শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: জনাব মোস্তাক আহমেদ আচ্ছা ইরানে এটি কি আপনাদের প্রথম সফর..

তেহরানে মুস্তাক আহমেদ

শেখ মুস্তাক আহমদ: হ্যাঁ, এটি আমাদের প্রথম সফর। ইরান আমাদের কাছে স্বপ্নের মতোই ছিল। অনেক ইচ্ছে ছিল ইরানে আসার। এখন থেকে দশ বছর আগেও ড.রেজওয়ান খান আমাদের ইরান সফর করানোর জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে বিশেষ করে ইরানি টাকার মুদ্রাস্ফীতির কারণে সে সময় আমাদের সফরে আসার সুযোগটা হয়নি। এবারে কিছু কাফেলাসহ আমরা ইরানে এসেছি।

রেডিও তেহরান: জ্বি, আপনার কাছে স্বপ্নের ইরান যা আপনি রেডিও তেহরান শুনে মনের ভেতরে স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আপনি এখন সেই  ইরানের পবিত্র নগরী কোম থেকে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলছেন। তো আপনার মনের মধ্যে যে স্বপ্নের ইরান ছিল একদা এখন বাস্তবে সেই ইরানকে দেখে কেমন লাগছে আপনার? আপনার অনুভূতি কী?

শেখ মুস্তাক আহমদ: দেখুন, আমরা মূলত ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যে ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমাদের এখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন ও খৃষ্টান- এরকম একটি মিশ্র ধর্মীয় সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বড় হয়েছি। তবে এখানে এসে আমরা দেখলাম বলতে গেলে কেবলই মুসলিম একটি দেশ। এখানকার যে সংস্কৃতি তা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। এখানকার মানুষের মধ্যে যে শৃঙ্খলাবোধ, সময়জ্ঞান, রাস্তাঘাট সবকিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সবচেয়ে বড় কথা ইরানিদের একতা; মনে হয়েছে যেন গোটা ইরান একটি পরিবার।

রেডিও তেহরান:  জনাব মোস্তাক আহমেদ, আপনি ইরানে শৃঙ্খলার কথা বললেন, সৌন্দর্য, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বললেন এবং ইরানিদের ঐক্যের কথা বললেন। অর্থাৎ গোটা ইরান যেন একটি পরিবার একটি সংসার বলে মনে হয়েছে আপনার কাছে। তাহলে আপনার স্বপ্নের সাথে বাস্তবে দেখা ইরান একেবারে মিলে গেছে কোথায় কোথায় স্বপ্ন ছাপিয়ে গেছে.. তাইতো

শেখ মুস্তাক আহমদ: জ্বি আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা ইরানের বাইরে ভারতবর্ষে বসে ইরানের বিপ্লবের কথা শুনেছি। বেলায়েতে ফাকিহ্‌ বা আয়াতুল্লাহদের বই গুরুত্বপূর্ণ সব বই পড়েছি। আমরা দর্শন পড়েছি কিন্তু দর্শনের সঙ্গে বাস্তবতার কত মিল আছে সেটি ইরানে এসে দেখলাম।

রেডিও তেহরান: আজকের পর্বের শেষ প্রশ্ন হচ্ছে ইরানের কোথায় কোথায় আপনাদের যাওয়ার সুযোগ হলো।

শেখ মুস্তাক আহমদ: দেখুন, আমরা ইরানের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। জামকারান মসজিদ যেটি ইমাম মাহদি আ. এর সঙ্গে সম্পর্কিত। ঐতিহাসিক ইস্পাহানে গিয়েছি। সেখানে একটি সেতু দেখেছি। সেতুটির নাম সিওসে পোল। তেত্রিশটি পিলারের ওপর পোলটি। ড. রেজওয়ান সাহেব বলছিলেন- একসময় ইরানের টাকার ওপর এই ব্রিজের ছবি থাকত। এছাড়াও কোম শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কুহে খিজির (আ.) বলে খ্যাত- পাহাড়ের উপর একটি মসজিদ সেখানে দীর্ঘ ৩০ মিনিট অভিযান চালিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম।

তো জনাব শেখ মুস্তাক আহমদ ইরান সফর নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১

ট্যাগ