ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ ১৬:১৭ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! স্বাগত জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। সম্প্রতি ইরানে ৪৫ তম ইসলামি বিপ্লব বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড.তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান (তারেক ফজল)।

জনাব ড. তারেক ফজল রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান:  ইরানের ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার ৪৫তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে এবার। ইরানের এই বিপ্লবের ফলাফল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?

ইমাম খোমেনী (র.)

ড. তারেক ফজল: ধন্যবাদ রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগকে আজকের আয়োজনে আমাকে যুক্ত করার জন্য। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের যে ৪৫ তম বার্ষিকী পালিত হলো এটা আমার বিবেচনায় মানুষের জানা ইতিহাসে এবং আমাদের জানা  অন্তত এক দুই শতাব্দীর ইতিহাসে  এটি একটি মহান অর্জন। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আমরা যারা রাজনীতি বিজ্ঞান পড়াই তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা। ইরানের এই যে রাজনৈতিক অগ্রগতি অর্থাৎ এই ইসলামি বিপ্লব এটাকে বিশ্বের সবগুলো শক্তি ধ্বংস করতে চেয়েছিল। এরসাথে বৈরিতা করেছে। আর সেই বৈরি বিশ্ব বাস্তবতায় ইরানের বিপ্লব সাধিত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , কার্যকর হয়েছে এবং আজ ৪৫ বছরে পা রেখেছে। এটি সত্যিই একটি মহান অর্জন। রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে আমরা যখন শিক্ষার্থীদের সামনে আলোচনা করি তখন আমরা আমাদের নতুন অভিজ্ঞতার কথা তাদেরকে শুনাতে পারি। আর সেটা বিশ্ববাসীর জন্য আমার বিবেচনায় কল্যাণকর অথবা নতুন অভিজ্ঞতার বিষয়। আর সঙ্গত কারণেই রাজনীতি বিজ্ঞানের পরিবার এজন্য আনন্দিত হতে পারি।

রেডিও তেহরান: ইসলামি বিপ্লবের ফলে ইরানের সরকার ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন এসেছে তা কতটা গণমুখী বলে আপনার মনে হয়?

ড. তারেক ফজল: দেখুন, বিপ্লবের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামি সরকার ব্যবস্থা কার্যকর আছে। আর এ বিষয়ে বাস্তবে আমি দুটো সূত্র পেয়েছি। যে দুটো সূত্রের মাধ্যমে ইরানের সরকারকে আমি জানতে পারি।

একটি হচ্ছে ইরানের সংবিধান আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিশ্ব মিডিয়া। তবে সঙ্গত কারণে মিডিয়ার সবটা ইরানের জন্য বন্ধুমূলক নয়। তারপরও যতটুকু বিশ্ব মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি সেটা থেকে ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কতখানি গণমুখী-যেটাকে আমরা বলি প্রাইমারি ইনফরমেশন-সেটা আমার জানা নেই। তবে সেকেন্ডারি ইনফরমেশন পাচ্ছি এবং দেখছি তাতে ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গণমুখী বলার সুযোগ আছে। কারণ পশ্চিমাদের ব্যবস্থার মধ্যে আধুনিক সরকার ব্যবস্থার যে তিনটি শাখা নির্বাহী, আইন এবং বিচার বিভাগ সেই তিনটি ইরানে আলাদাভাবে কার্যকর করেছে। আর সেই নির্বাহী বিভাগ জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা নির্বাচিত এবং সরকার পরিচালনা করছে আর নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটা সংবিধানের কাঠামো এবং বাস্তবে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি। ইরানের নির্বাহী বিভাগ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কোনো একটি দেশে তিনটি বিভাগ আলাদা হলে সেটিকে আধুনিক রাষ্ট্র বলা হয়। ইরানে সেটি আছে। ইরানে নির্বাচন হচ্ছে এবং যে নির্বাচনের কথা আমরা পশ্চিমা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি। ফলে ইরানকে গণমুখী বলতে কোনোই আপত্তি থাকা উচিত নয়।

রেডিও তেহরান: আবারও ফিরে এলাম সাক্ষাৎকারে। ড. তারেক ফজল, ইরানের ইসলমি বিপ্লবের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল পশ্চিমা সাম্রাাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। সেই অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে ইরান?

ড. তারেক ফজল: দেখুন, যখন ইরানে ইসলামি বিপ্লব সফল হলো এবং ইরানি নেত্রীবৃন্দ দাবি করলেন লা শারকিয়া লা গারবিয়া। প্রাচ্য নয় প্রতিচ্য নয়-ইসলাম। তারা তাদের সেই নীতির ওপর অটুট আছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমারা পুরোপুরি তাদের বিরুদ্ধে ছিল এবং আছে। সর্বশেষ আমরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে দেখতে পাই ইরান ইসলামি ভ্রাতৃত্ব বা ইসলামি নীতিমালার বিবেচনা থেকেই ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যে  পৈশাচিক গণহত্যা চলছে তার বিরুদ্ধে যেকোনো মুসলিম রাষ্ট্রের চেয়ে ইরান সক্রিয় এবং কার্যকরভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ইরানি প্রচেষ্টা, কূটনীতি এবং প্রজ্ঞার কারণেই সাবেক বিশ্বশক্তি যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করার কথা স্বীকার করেছে। এটা একটি মহান অর্জন। এক্ষেত্রে ইরানের কৃতিত্ব যেকোনো মুসলিম রাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে। অন্য যেকোনো রাষ্ট্র প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনীদের পাশে নেই ইরান সেখানে আছে কিন্তু কিছু কিছু হয়তো তাদের কৌশলি অবস্থান নিতে হচ্ছে। সুতরাং ইরান তার অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ঘোষিত ইসলামি নীতিমালা পরিপালন করছে। আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও ইসলামি বিবেচনা থেকে তারা সেই কার্যক্রম এবং দায়িত্ব পালন করছে। সুতরাং ইরানের বিপ্লবকালীন যে ঘোষণা ইসলামি নীতিমালাকে বিশ্ব পর্যায়ে সমুন্নত রাখবে এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এবং সেটা তারা অনেক ক্ষেত্রেই কম-বেশি সফলতার সাথে অনুশীলন করেছে, চর্চা করছে এটা বলা যায়।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক তারেক ফজল আমরা সাক্ষাৎকারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইব, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাবলী বিশেষ করে গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের যে লড়াই চলছে, সেখানে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের কোনো শিক্ষা কী প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয়?

ড. তারেক ফজল: অবশ্যই ইসলামি বিপ্লবের প্রভাব ফেলছে। এতক্ষণ আপনার সাথে যে তিনটি প্রশ্নের জবাব আমি দিয়েছি প্রতিটিতেই আমি একটা কথা বলেছি যে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হয়ে যাবার পর থেকে ইরানের ভেতরে যে পরিবর্তন এসেছে সেই পরিবর্তন পৃথিবীর সবজায়গায় কিন্তু স্পর্শ করেছে। আমি বারবার বলছি এটা শুধু মুসলিম বিশ্বকে নয় অমুসলিম অনেক দেশকেও অনুপ্রাণিত করেছে। অমুসলিম বিশ্ব এটা বুঝতে পারছে যে  পাশ্চাত্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জবরদখল থেকে বাঁচতে হলে তাদেরকে বিপ্লব করতে এবং স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে হবে। আর মুসলিম বিশ্ব তো অনেক থেকেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তারা কোনো মডেল পাচ্ছিল না। আমি মনে করি ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরান একটি মডেল তৈরি করেছে। আজকে হামাসের যে প্রতিরোধ যোদ্ধারা যে সাহস এবং মানসিক শক্তি নিয়ে লড়াই করছে অবশ্যই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আজকের এ পর্যায়ে আসার কথা ছিল না। তারা ইতিহাস থেকে তো শিখেছে তবে অবশ্যই ইরানের ইসলামি বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়েছে।

এছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে কীভাবে লড়তে হবে, কৌশলগত বিষয় এবং প্রায়োগিকভাবে কি হবে, সফলতা অর্জন করা যাবে কি না এসব বিষয় তারা ইরান থেকে শিখেছে। বিপ্লব হবার পর অন্তত দশ বছর ইরানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিবিসি সিএনএন থেকে শুরু করে বিশ্ব মিডিয়া একে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিল-ইসলামি বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিল। সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকাটা ছিল খুব বড় চ্যালেঞ্জ।শুধু মিডিয়া নয় বাস্তবেও বিশ্ব শক্তিগুলো ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। ধীরে ধীরে ইরান নিজেকে বাঁচাতে এবং প্রতিহত করতে সক্ষম হলো ও প্রতিষ্ঠিত করল সেই শিক্ষাটা হামাস নিচ্ছে। আগামী দিনে মুসলিম অমুসলিম যারা বিপ্লব করবে যেকোনো বিপ্লবই সেটা হিন্দু বিপ্লব, সেটা মার্কবাদী হোক, লিবিয়া হোক কিংবা কিউবা হোক বা সেটা মুসলিম বিশ্বের হোক-ইরান তাদের কাছে একটা অনুসৃত আদর্শ বলে আমি মনে করি।

রেডিও তেহরান: তো জনাব অধ্যাপক ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যাপক তারেক: আপনাকে ও রেডিও তেহরানকে ধন্যবাদ।

সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলা। উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৫

ট্যাগ