ইরানের উপর ইহুদিবাদী ইসরাইলি হামলা কেন বিপরীত ফল বয়ে এনেছিল?
(last modified Wed, 02 Jul 2025 11:43:23 GMT )
জুলাই ০২, ২০২৫ ১৭:৪৩ Asia/Dhaka
  • ইরানের উপর ইহুদিবাদী ইসরাইলি হামলা কেন বিপরীত ফল বয়ে এনেছিল?

একটি মার্কিন প্রকাশনা ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের কাছে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকারের পরাজয়ের কারণ নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

আমেরিকান প্রকাশনা ফরেন পলিসি মঙ্গলবার লিখেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকার এবং ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধ তেল আবিবের জন্য প্রতিকূল ফলাফল বয়ে এনেছে এবং তেল আবিব তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পার্সটুডে অনুসারে, আমেরিকার এই প্রকাশনার নিবন্ধে বলা হয়েছে, যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল একটি বিশাল ইসরাইলি আক্রমণের মাধ্যমে যার মধ্যে রয়েছে ইরানি স্থাপনাগুলোতে গোপন অভিযান এবং বিমান হামলা কিন্তু ইরান শিগগিরি ইসরাইল এবং মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে শক্ত জবাব দেয় যা একটি গুরুতর আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এইভাবে,ইরান তার বিরোধীদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে যে তারা তার সীমান্তের বাইরে পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে সক্ষম।

মার্কিন প্রকাশনাটি আরো যোগ করেছে, ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বিবৃতি সত্ত্বেও, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কোনো নির্দিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুসারে এই কর্মসূচির বিকাশের প্রধান স্থাপনাগুলো এখনো অক্ষত রয়েছে এবং ইসরাইল 'ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করার' লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

ফরেন পলিসি আরো লিখেছে: এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সংসদ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাথে সহযোগিতা স্থগিত করার অনুমোদন দিয়েছে এবং পারমাণবিক অস্পষ্টতার কৌশল গ্রহণ করেছে। এই কৌশলটি ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে যে অবস্থান গ্রহণ করেছে,তার পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে সেটা তারই মত।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি

মিডিয়া আউটলেটের মতে, যদিও এই আক্রমণের পারমাণবিক ফলাফল নির্ধারণ করা হয়নি, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল এবং এর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মার্কিন ও ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সামরিক ঘাঁটি, গোয়েন্দা সদর দপ্তর, তেল শোধনাগার এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।

ফরেন পলিসি জানিয়েছে যে ইরানের প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পর, "বিমানবন্দর, বিশেষ করে বেন-গুরিয়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, ইসরায়েলি অর্থনীতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং অনুমান অনুসারে, ইসরাইল কমপক্ষে ৫০ কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন থাড ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। যদিও ইসরাইলি সেন্সরশিপ সেন্টার মিডিয়াকে কাজ করতে এবং সংবাদ কভার করতে বাধা দিয়েছিল, এই যুদ্ধে ৪১,০০০ এরও বেশি লোক তাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।'

ট্রাম্পের প্রাক্তন উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ইসরাইল বাঁচাতে যুদ্ধ বন্ধ করা প্রয়োজন এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষার অভাব ছিল। ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন যে ইসরাইল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরানি জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করেছে

আমেরিকান ম্যাগাজিনটি আরো বলেছে,  ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ইরানের অভ্যন্তরে অপ্রত্যাশিত সামাজিক পরিণতি হয়েছিল এবং পশ্চিমা প্রত্যাশার বিপরীতে রাজনৈতিক পরিবর্তন বা শাসক  পতনের আগুন জ্বালানোর পরিবর্তে এটি জাতীয়তাবাদী অনুভূতি এবং জাতীয় ঐক্য বৃদ্ধি করেছিল। এই যুদ্ধ ইরানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত তো করেই নি বরং এর জনগণের মধ্যে সংহতিও বৃদ্ধি করেছিল এবং ইসরাইলি আক্রমণের প্রতি ক্ষোভের ফলে একটি ব্যাপক জাতীয় সংহতি তৈরি হয়েছিল যার মধ্যে শিল্পী থেকে শুরু করে ক্রীড়াবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তি এবং এমনকি জেনারেশন জেড পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানিরা ইসরাইলি আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় যারা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছিল তাদের গ্রহণ করেছিল এবং এটি তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধকে শক্তিশালী করেছিল। শিশু, ডাক্তার এবং বেসামরিক নাগরিকদের শহীদ হওয়ার ছবি দেখে ইরানি জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছিল যে যুদ্ধের লক্ষ্য তাদের মুক্ত করা নয় বরং তাদের দেশকে ধ্বংস করা। ফরেন পলিসি  উপসংহারে বলেছে,  যদিও ইসরাইল হিসাব করেছিল যে এই যুদ্ধ ইরানে শাসনের পতনের দিকে পরিচালিত করবে, ফলাফল সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল এবং ইরানকে দুর্বল করার পরিবর্তে এটি তার লক্ষ্য অর্জনে ইসরাইলের দুর্বলতা প্রকাশ করেছিল এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টের সংহতি জোরদারে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।