এপ্রিল ২৮, ২০২৪ ১৯:৩০ Asia/Dhaka

দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার প্রভাব এখানেই শেষ নয়; এর প্রভাব চলতে থাকবে। ফিলিস্তিন মুক্ত হবে এবং বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হবে। রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সাবেক অধ্যক্ষ, লেখক ও গবেষক মো. নাজমুল হুদা।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম এবং উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব মো. নাজমুদ হুদা, রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: প্রিন্সিপাল নাজমুল হুদা, পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস পালিত হলো। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনীর আহবানে ১৯৭৯ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এত বছর পরে এসে আল কুদস দিবসের প্রভাব এবং এর সফলতাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: দেখুন, আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত যে আল কুদস দিবসটি আসলে কি এবং কেন?

বাইতুল মুকাদ্দাস যেটি মুসলমানদের প্রথম কেবল ছিল। আল্লাহর রাসুল ১৪ মাস বায়তুল মুকাদ্দাসকে কেবলা হিসেবে নামাজ আদায় করেছেন। সেই পবিত্র মসজিদ যেখানে নামাজ আদায় করলে এক রাকাতে ২৫ হাজার রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায় হাদিস শরিফের দ্বারা প্রমাণিত। মুসলমানদের জন্য বায়তুল মুকাদ্দাস একটি মহা সম্মানিত মসজিদ। আর সেই মসজিদটি এখন সম্পূর্ণভাবে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে। বায়তুল মুকাদ্দাস খৃষ্টান, ইহুদি এবং মুসলমান-সবার জন্য পবিত্র স্থান। তারপরও এই মসজিদটির বিষয়ে ইসলামের দাবি অগ্রগণ্য। কারণ হচ্ছে ধর্মের ধারবাহিকতা চিন্তা করলে সম্ভবত হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে মুহম্মদ সা. পর্যন্ত যত নবি-রাসুল এসেছেন সবাই তাৎপর্যগতভাবে ইসলামের ওপর এসেছেন। খৃস্টান এবং ইহুদিদের নবিদেরকে আমরা নবি বলি এবং সম্মান করি। ঈসা আ., মূসা আ. কে আমরা নবি বলে মানি এবং সম্মান করি। পরবর্তীকালে তাঁদের অনুসারীরা মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেক দূরে সরে গেছে। আর সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বায়তুল মুকাদ্দাসের একমাত্র দাবিদার এখন মুসলমানরা। যারা ইসলামি জীবনবিধানের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত।

১৯৭৯ সালে ইসলামী ইরানের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী র. আল কুদস দিবস ঘোষণা করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি সেই ঘোষণা দেন। আর আজকের পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জানে আল কুদস দিবস কি এবং কেন? আর সামগ্রিকভাবে তার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়তে শুরু হয়েছে। বায়তুল মুকাদ্দাসকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার ঈমানি দায়িত্ব সকল মুসলমানের। বর্তমানে আল কুদস দিবস কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয়  আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আগামীতে এই দিবসের তাৎপর্যের মধ্য দিয়ে অনতিবিলম্বে বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হয়ে ফিলিস্তিনি সরকার গঠিত হবে এবং বিশ্ব মুসলিমের প্রাণের দাবি প্রতিষ্ঠা হবে বলে আমি আশা করি।

রেডিও তেহরান: জনাব নাজমুল হুদা, এবার যখন ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘযুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে তার মধ্যে এ দিবস পালিত হলো। চলমান যুদ্ধকে অনেকেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড মুক্ত করার যুদ্ধ হলে আখ্যায়িত করছেন। আপনি কিভাবে দেখছেন?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: চলমান গাজা যুদ্ধ-ফিলিস্তিন মুক্ত করার জন্য অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে সর্বোপরি বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করা। আল্লাহর রাসুল যেমন ইসলামের চূড়ান্ত বিজয়ের শেষ দিকে মক্কা বিজয় করেছিলেন। আর মক্কা বিজয় ছিল ইসলামের চূড়ান্ত বিজয়ের বড় পদক্ষেপ। ঠিক তেমনি আল-কুদস দিবসের মাধ্যমে যদি বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হয়, আশাকরি মুক্ত হবে। বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হলে সেই সময়টাকে আমরা মনে করি ইসলামের জন্য চরম একটা বিজয় বয়ে আনবে। সেটি হবে ইসলামের জন্য গৌরব। আর তখনই ফিলিস্তিনিদের সার্বিক সমাধান আসবে।  

রেডিও তেহরান: আল কুদস দিবস পালনের একটি বড় লক্ষ্য ছিল বিশেষ করে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ করা। এই ঐক্য কতটা এগিয়েছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: গাজায় যে চলমান যুদ্ধ সেই যুদ্ধের শক্তি জোগায় আল-কুদস। আল কুদস দিবসের প্রেরণা মুসলিম জাতিকে অনেকাংশে অগ্রগামি করেছে। আমেরিকার কূটনৈতিক চালে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশকে দেখতে পাই তারা ইসরাইলের সাথে সখ্যতা গড়েছে। কিন্তু বর্তমান চলমান যুদ্ধ এবং আল-কুদস দিবস পালনের মাধ্যমে সেই পরিবেশ পাল্টে গেছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় সমগ্র বিশ্বে বিবদমান রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। যে মতবিরোধ ছিল তার অবসান হয়ে বিশ্ব মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আর এই গতি কীভাবে আরও ত্বরান্বিত করা যায় সেজন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ইসরাইলকে বয়কট করেছে। আগ্রাসী ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ।

রেডিও তেহরান: জনাব নাজমুল হুদা, সাক্ষাৎকারের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। সবশেষে জানতে চাইব, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ চলার মধ্যেই সিরিয়ায় ইরানের কনসুলেট ভবনে হামলা চালিয়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। ইরান এই ঘটনার পাল্টা জবাব দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। আপনার কি মনে হয়- ইরান সরাসরি ইসরাইলের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে?

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: ইসরাইল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে যে হামলা চালিয়েছে তাতে তারা দুটি আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

এক নম্বর হচ্ছে সিরিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে দেশটির সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত হেনেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনে চরম অন্যায়।

দুই নম্বর হচ্ছে ইরানি কনস্যুলেট বা বাংলায় আমরা যেটাকে দূতাবাস বলি সেটি আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে চিহ্নিত। সেক্ষেত্রে কনস্যুলেট ভবনে হামলা করা আন্তর্জান্তিক আইনের চরম লঙ্ঘন। অথচ বিনা উসকানিতে ইসরাইল ইরানি কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন যেমন লঙ্ঘন করেছে একইসাথে মানবতা বিরোধী কাজ করেছে। ইসরাইলের ঐ হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর  উচুঁ পর্যায়ের কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন। তবে এর প্রভাব আজই শেষ হবে না। এর প্রভাব চলতে থাকবে।

রেডিও তেহরান: তো জনাব, প্রিন্সিপাল মো. নাজমুল হুদা বিশ্ব কুদস দিবস নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা: আপনাকেও ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/জিএআর/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ