মোদি ছবির পক্ষে আর সাম্প্রদায়িক বললেন পিনারাই বিজয়ন
কেন এত বিতর্ক? কী আছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে?
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ৭ মে রোববারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- শাহজালাল সার কারখানা কর্মকর্তার স্ত্রীর নামেই ৯১ গাড়ি -প্রথম আলো
- সোনা ব্যবসায়ী আরাভ খানের মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ –ইত্তেফাক
- বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা -মানবজমিন
- আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন: ওবায়দুল কাদেরকে রিজভী -যুগান্তর
- গাজীপুর সিটি নির্বাচন আজমত উল্লাহ ইসিতে, জাহাঙ্গীর হাইকোর্টে -কালের কণ্ঠ
- টিটো রহমান ও নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন
কোলকাতার শিরোনাম:
- বিশ্বের কাছে অপদস্থ পাকিস্তান’, শাহবাজ, বিলাওয়ালের বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন ইমরানের -সংবাদ প্রতিদিন
- নেই খাবার, নেই পেট্রোল, দলে দলে ঘর ছাড়ছেন মণিপুরবাসী-গণশক্তি
- কেন এত বিতর্ক? কী আছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে? বাদই বা পড়েছে কী কী দৃশ্য?-আনন্দবাজার
শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি-
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে চায় সরকার- বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ খবর দিয়েছে দৈনিক মানবজমিন। কীভাবে দেখছেন তার এ বক্তব্যকে?
২. চীনা মুদ্রা ইউয়ানে রাশিয়ার তেলের দাম পরিশোধ করবে পাকিস্তান। এমন খবর দিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম। এটা কী সম্ভব হবে পাকিস্তানের পক্ষে?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর
শাহজালাল সার কারখানা কর্মকর্তার স্ত্রীর নামেই ৯১ গাড়ি-প্রথম আলো
নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে ভুয়া বিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাটির ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক মুহম্মদ ইকবাল।
এইচএসসি পাস করে ২০০৫ সালে বিসিআইসির প্রকল্প শাহজালাল সার কারখানায় সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকরি নিয়েছিলেন। এরপর ১৪ বছরের চাকরিজীবনে তিনি সর্বশেষ ওই কারখানার সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক ছিলেন। এই সময়ে ৯১টি গাড়ি, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, দুটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এই ব্যক্তি হলেন খোন্দকার মুহম্মদ ইকবাল (৪২)। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার কারখানা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজারে চাকরি করতেন তিনি। অর্থ আত্মসাতের কারণে চার বছর আগে ওই কারখানা থেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ইকবাল তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি নামসর্বস্ব কোম্পানি খোলেন। কোম্পানি দুটির নামে বেশ কিছু ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে ইকবাল শাহজালাল সার কারখানা প্রকল্প থেকে ৩৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মামলায় বলা হয়েছে।
সোনা ব্যবসায়ী আরাভ খানের মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ-ইত্তেফাক
দুবাইয়ের সোনা ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের অস্ত্র মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৯ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার (৭ মে) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদ রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ২০ জনের মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আরাভ খান তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করতে শ্বশুরের মগবাজারের বাসায় যান। এ সময় একটি গুলি ভর্তি রিভলবারসহ শ্বশুরের বাসার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় আরাভের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন ডিবি পশ্চিমের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক সুজন কুমার কুন্ডু।
আসামি রবিউল ইসলাম আপনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালের ১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার। একই বছরের ১০ মে আদালত রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এ মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পান রবিউল। এরপর জামিনে গিয়ে পলাতক থাকায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর ‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তারা শুধু রুটিন কাজ করবে, তাদের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। ২০১৪ সালে একতরফা ও ২০১৮ সালে কিভাবে দিনের ভোট রাতে করা হয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী তা দেখেছে। আপনাদের অধীনে আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সব নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। জনগণ তাদের নিজের ভোট দিতে পারেনি। জনগণ আপনাদের বিশ্বাস করে না। আপনারা জনগণের সঙ্গে বারবার যে প্রতারণা করেছেন তারা সেই জবাব এবার দেবে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। ভোটের অধিকার আদায়ে সারাদেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। এবার আর সরকার রক্ষা পাবে না। অচিরেই সরকারের পতন হবে।
দেশব্যাপী আবারো গ্রেফতার নির্যাতন চলছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই ৭ ডিসেম্বর পুলিশ নয়াপল্টনে হামলা করেছিল। ৪৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। সেই হামলা ছিল পরিকল্পিত। কারাগারে গিয়ে দেখি গোটা কারাগার বিএনপি নেতাকর্মী দিয়ে পরিপূর্ণ। কারও পায়ে স্যান্ডেল, কেউ কেউ লুঙ্গি পরা। এরা অতিসাধারণ বিএনপি নেতাকর্মী। তারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিল।
তিনি বলেন, গোটা দেশটাই আজ কারাগার। আমরা ছোট কারাগার থেকে বৃহৎ কারাগারে প্রবেশ করেছি মাত্র। আটক করে নিপীড়ন করে জনগণকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। গ্রেফতার করে নির্যাতন করে গণজোয়ার ঠেকাতে পারবে না সরকার। এবার জনগণের বিজয় হবেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযে নবীনদের স্বাগত জানাতে গিয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের ওপর হামলার ঘটনায় যুবদলের নেতাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বিএনপি বা যুবদলের কোনো নেতাকর্মী তার ওপর হামলা করেনি। এ ঘটনা সাজানো ও মিথ্যা। বিএনপির তরুণ নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে।
টিটো রহমান ও নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা-বাংলাদেশ প্রতিদিন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছাড়ানোর অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান এবং নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইব্রাহীম আলী ও আনিস মিয়া। একই সঙ্গে মামলায় ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত টিটো রহমান রাজধানীর জিগাতলা এলাকার মৃত ডা. মতিনুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। 'নাগরিক টিভি' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। নাজমুস সাকিব সবুজবাগ এলাকার জলিলুর আজমের ছেলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন নাগরিক টিভির বার্তা সম্পাদক হিসেবে।
মামলাটি আমলে নিয়ে রংপুরের সিআইডি পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ড. আব্দুল মজিদ। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শাম্মি আক্তার, আজগার আলী, আমিনুল ইসলাম, আহসান হাবীব জুয়েলসহ কয়েকজন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রুহুল আমিন তালুকদার।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আসামিরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুজব, আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য বারবার প্রচার করছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার নয়; তার আত্মীয় স্বজন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধেও বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে আসামিরা। এমনকি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়েও প্রতিনিয়ত গুজব ছড়াচ্ছে তারা।
মামলার বাদী বাবু তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যারা কটূক্তি করে ইউটিউবে লাইভ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমি দ্রুত তাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাই।
অপরদিকে, একই আদালতে একই অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ হোসেন। আবেদনটি সোমবার (৮ মে) শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত।
জানা গেছে, কানাডা থেকে প্রচারিত নাগরিক টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান। নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন বার্তা সম্পাদক হিসেবে। ধর্ষণ ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে দায়ে মামলা হওয়ার পর দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যান তারা। সেখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে। আনলাইন প্ল্যাটফর্মে রাষ্ট্র, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু করেন তারা। টিটো রহমানের পুরো পরিবারই স্বাধীনতাবিরোধী। তার দাদা একাত্তরের ঘাতক ছিলেন, বাবা ছিলেন ছিঁচকে রাজাকার। আর মোস্তাফিজুর রহমান ছোটবেলা থেকেই বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট লোকদের সঙ্গে উঠাবসা করতেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে মোস্তাফিজুর রহমান দিনাজপুরে একজন মাদকসেবী এবং নারী নিপীড়ক হিসেবে পরিচিত ছিল। ইভটিজিংয়ের জন্য একাধিকবার মোস্তাফিজুর রহমান শাস্তি পেয়েছিল। আর সর্বশেষ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ার সময় এক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।
অন্যদিকে, রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় ২০১১ সালে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় মামলার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজধানীর বাসাবোর সবুজবাগ এলাকার ২৮ নম্বর মায়াকাননের পেছনে তিনটি বাড়ির পর একটি টিনশেড ঘরে পরিবারের সঙ্গে থাকতো শিশুটি। পিতা সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটিকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ২৮ নম্বর মায়াকাননে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মাদকাসক্ত নাজমুস সাকিব। এরপর ছাদে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে শিশুটিকে নিচতলার গ্যারেজে রেখে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অনলাইন নাগরিক টিভি নামের ইউটিউব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ তার পরিবার ওবায়দুল কাদের আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে।
তিনি আরও জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এই মামলার বাদী রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে কটূক্তি করায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করায় চারজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দেয়া হয়েছে। আমি চাই দ্রুত গতিতে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তবে গ্রেফতার করা না হলে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
তিনি আরও জানান, আদালতকে সম্মান জানাই, আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি ও একজন ইউটিউবার নানাভাবে টকশো করেছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এ কারণে মামলাটি করা হলো। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে টকশো করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারাকারী এসব অনুমোদনহীন অনলাইন চ্যানেল বন্ধের দাবিও জানান তিনি।
এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
বিশ্বের কাছে অপদস্থ পাকিস্তান’, শাহবাজ, বিলাওয়ালের বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন ইমরানের-সংবাদ প্রতিদিন
মুদ্রাস্ফীতির কবলে দেশ। অর্থনৈতিক সংকটে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এহেন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী কিনা বিদেশ সফরে যাচ্ছেন! এমনই অভিযোগে সোচ্চার পাকিস্তানি নাগরিকরা। গোয়ায় এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। ব্রিটেনে চার্লসের রাজ্যাভিষেকে গিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। যা নিয়ে ক্ষোভ তুঙ্গে। এই নিয়ে মুখ খুলেছেন ইমরান খানও। শাসক জোটকে আক্রমণ করে ইমরান (Imran Khan) জানাচ্ছেন, ”দুনিয়ার কাছে অপদস্থ হচ্ছে পাকিস্তান (Pakistan)।”
রাজা তৃতীয় চার্লসের (King Charles) রাজ্যাভিষেক হয়েছে শনিবার। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শাহবাজ শরিফ ও তাঁর কন্যা। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের এক সিনিয়র সাংবাদিক মঈদ পীরজাদা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন, ‘শাহবাজ শরিফ তাঁর মেয়েকেও রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকে নিয়ে গেলে? এর জন্যই কি করদাতারা কর দেন? এ কীরম রাষ্ট্রনীতি? নাকি এই ধরনের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোনও রাষ্ট্রনীতির অংশ নয়?’
অন্যদিকে ইমরানের কটাক্ষ, ”আমি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজকে বলতে চাই তিনি যখন লন্ডনে, সেই সময় ৬ জন পাক সেনা শহিদ হয়েছেন পারাচিনারে। মারা গিয়েছেন আটজন। দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে।” প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ”গোটা বিশ্বের কাছে পাকিস্তান অপদস্থ হচ্ছে।” পাশাপাশি বিলাওয়াল ভুট্টোকে (Bilawal Bhutto) তাঁর প্রশ্ন, ”আপনি দেশের টাকায় বিদেশ যাওয়ার আগে কি এক বারও জানতে চেয়েছিলেন এতে পাকিস্তানের লাভ হবে না ক্ষতি হবে?” সব মিলিয়ে পাক মন্ত্রীদের বিদেশ সফর ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে।
জমজমাট কর্ণাটক! অসুস্থতা নিয়েই প্রচারে সোনিয়া, জবাবে বেঙ্গালুরুতে মেগা রোড শো মোদির-সংবাদ প্রতিদিন
বুধবার কন্নড়বাসীর রায় গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগে রাজ্যে রাজনীতির পারদ চড়ছে হু হু করে। কর্ণাটক বিধানসভা (Karnataka Assembly Election) নির্বাচনের প্রচার ঘিরে কংগ্রেস-বিজেপি আক্রমণ পর্ব জারি ছিল। এবার সেটা নতুন মাত্রা পেল। প্রথমবার আসরে নামলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। পালটা পরপর দু’দিন রোড শো-তে প্রধানমন্ত্রী মোদিও।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম ভোটের প্রচার করলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী। শনিবার কর্ণাটকে লিঙ্গায়েত অধ্যুষিত হুব্বলিতে জনসভা করেন সোনিয়া (Sonia Gandhi)। সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। ওই সভা থেকে দুর্নীতি ইস্যুতে বিজেপিকে বিঁধে কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেত্রী বলেন, ‘৪০ শতাংশ কমিশনের সরকার চলছে। কর্ণাটককে এই দুর্নীতির সরকার থেকে মুক্ত করতে হবে।’ বিজেপির অভিশাপ থেকে মুক্ত করলে তবেই কর্ণাটকের নিজস্বতা বজায় থাকবে। সোনিয়া অভিযোগ করেন, “এখন বিজেপি প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। বলছে, বিজেপি না জিতলে কর্নাটক মোদীর আশীর্বাদ পাবে না। কর্নাটকের মানুষ কারও আশীর্বাদের ভরসায় থাকে না। নিজের পরিশ্রমের ভরসায় চলে।”
নেই খাবার, নেই পেট্রোল, দলে দলে ঘর ছাড়ছেন মণিপুরবাসী-গণশক্তি
এখনও থমথমে মণিপুরের পরিস্থিতি। হু হু করে বাড়ছে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যাও। রাজ্য ছেড়ে ইতিমধ্যেই পালিয়ে গেছেন লক্ষাধিক মানুষ। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তেত্রিশ হাজারের বেশি আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ‘দেখা মাত্র গুলির’ নির্দেশ দেওয়ার পর শুক্রবার চুরাচাঁদপুর জেলায় সেনার গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে দুই মহিলা রয়েছেন। তাঁদের একজন নার্স বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ চুরাচাঁদপুর জেলায় আটকে পড়া শতাধিক মেইথেই সম্প্রদায়ের মানুষকে উদ্ধার করে আনার সময় পথ আগলে দাঁড়ায় কয়েকশো আদিবাসী মানুষ। তখন তাদের হটাতে শূন্যে গুলি ছোঁড়ে সেনা জওয়ানরা। তাতে চারজনের গায়ে গুলি লাগে। রাজ্যে জাতি সংঘর্ষে শনিবার পর্যন্ত ৫৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই দেহগুলি রাজ্যের তিনটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ইম্ফলের রিমস হাসপাতালে ২৩টি, জেএনআইএমএস হাসপাতালে ১৫টি ও চুরাচাঁদপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে ২০ টি লাশ পড়ে আছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় মণিপুরে নিট পরীক্ষা বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রবিবার সারা দেশে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা। এবারের নিট পরীক্ষায় মণিপুরের ৮ হাজার ৭৫১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইম্ফলের মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও উখরুলের ধনমানজুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে আটকে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের উদ্ধার করে ইম্ফলের আসাম রাইফেলসের ক্যাম্পে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মণিপুরের জাতি সংঘর্ষের ফলে এরাজ্যে পড়তে আসা অন্য রাজ্যেরও অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আটকা পড়েছে। এরমধ্যে মিজোরাম, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের কয়েকশো ছাত্রছাত্রীকে নিজ নিজ রাজ্য সরকার শনিবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তবে অন্য রাজ্যের আরও পড়ুয়া এখনও মণিপুরে আটকে আছে।
টানা কারফিউর ফলে মণিপুরে খাবারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খাবার ও পানীয় জলের তীব্র হাহাকার । গত ২৮ এপ্রিল চুরাচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনার পরপরই চুরাচাঁদপুর জেলায় কারফিউ ও আরও কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করে প্রশাসন। সেদিনের ঘটনার পর থেকেই বাইরের রাজ্য থেকে আসা খাদ্য বোঝাই লরি মণিপুরে ঢোকেনি। এরপর গত ৩ মের ঘটনার পর গোটা রাজ্যে কারফিউ জারি করে রাজ্য সরকার। ফলে গত আট দিন ধরে খাদ্য বোঝাই লরি কিংবা তেলের ট্যাঙ্কার, রান্নার গ্যাসের লরি কোনোকিছুই মণিপুরে ঢোকেনি। এছাড়া দোকানপাটও বন্ধ। খাবারের সঙ্কটের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও রান্নার গ্যাসের সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে। রাজধানী ইম্ফল শহরে হাতেগোনা দুই-তিনটি পাম্পে রেশনিং ব্যাবস্থায় পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে। তার জন্য পাম্পে দীর্ঘ লাইন।
পাশাপাশি সংঘর্ষ কবলিত এলাকার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। রাজ্যের বড় বড় সরকারি দপ্তরে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। চুরাচাঁদপুরে রাজ্যের মিনি সচিবালয়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে পাশের রাজ্য আসাম, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামেও পালিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এক কাপড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছেন মানুষ। তাদের সঙ্গে না আছে খাবার, না আছে জল, ওষুধ। শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অবস্থা করুণ। আসামের কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর মহকুমায় শনিবার পর্যন্ত সতেরো হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর। এঁরা মণিপুরের জিরিবাম জেলা থেকে পালিয়ে এসেছেন। লক্ষ্মীপুরের আটটি স্কুলে শিবির করে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। শনিবার ত্রাণ শিবিরগুলি পরিদর্শন করে এবং জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণের দাবি জানিয়েছে ডিওয়াইএফআই’র প্রতিনিধি দল ।
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় শনিবার সর্বদলীয় বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি দু’দিন আগেই জানিয়েছিল সিপিআই(এম)। বৈঠকে কংগ্রেস, সিপিআই(এম), সিপিআই, বিজেপি, এনপিপি, এনপিএফ, শিবসেনা, জেডি(ইউ), আপ দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আরও সেনা মোতায়েন করা, সংঘর্ষ-পীড়িত এলাকায় আটকে পড়া মানুষকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করা, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ত্রাণ শিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত খাবার পৌঁছে দেওয়া, গুজব বন্ধে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রভৃতি সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। এদিন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠক করেন বীরেন সিং।
মাত্র দেড় বছর আগে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে মোদী-শাহ থেকে শুরু করে এক ডজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণিপুরে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। কিন্তু মণিপুর যখন জ্বলছে, প্রতিদিন মানুষ মরছে, প্রাণ বাঁচাতে ভিন রাজ্যে পালাচ্ছে, তখন মোদী-শাহ তো দূর, একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এখনও পর্যন্ত মণিপুরে আসেননি। মোদী-শাহরা অবশ্য এখন ব্যস্ত কর্ণাটকে গৈরিক শাসন জিইয়ে রাখার লড়াইয়ে। বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক সম্বিত পাত্রকে ইম্ফল পাঠিয়ে দায় সেরেছেন নরেন্দ্র মোদী। সংঘর্ষ বিধ্বস্ত মণিপুরে কোনো সরকারি প্রতিনিধিকে না পাঠিয়ে দলীয় প্রতিনিধিকে পাঠানো নিয়ে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
কেন এত বিতর্ক? কী আছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে? বাদই বা পড়েছে কী কী দৃশ্য?-আনন্দবাজার পত্রিকা
ইউটিউবে ছবির ট্রেলার দেখেই বিতর্কের মেঘ ঘনিয়েছিল। মুক্তির পর তোলপাড় ফেলে দিয়েছে পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। কেউ ছবিটিকে সমর্থন করছেন, কেউ এর বিপক্ষে সরব হয়েছেন।
কিন্তু ঠিক কী আছে এই ছবিতে? কেন ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক? অনেকে বলছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’কেও ছাপিয়ে যাচ্ছে অদা শর্মা অভিনীত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।
ছবিটির মূল চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে, তা নিঃসন্দেহে বিতর্কিত। এই ছবিতে হিন্দু মহিলাদের উপর ইসলাম আগ্রাসনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় জোরদার হয়েছে বিতর্ক।ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। হিন্দু এই তরুণী ভাগ্যের ফেরে হয়ে উঠেছেন ফতিমা। অর্থাৎ, তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক ‘ফাঁদ’ পেতে শালিনীকে ফতিমা করে তোলার কাহিনি দেখিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত।শুধু হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে যাওয়াই নয়, এই ধর্মীয় পরিবর্তন শালিনীর জীবনেও বয়ে এনেছে চরম দুর্ভাগ্য। তাঁকে সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। ধর্মান্তরিত নারীর অসহায় জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।
পরিচালক দেখিয়েছেন, শুধু হিন্দু নয়, কেরলে এই ধর্মান্তরণের ‘ফাঁদে’ পা দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন খ্রিস্টান মহিলারাও। এই ছবির ট্রেলারে দাবি করা হয়েছে, কেরল থেকে ৩২ হাজার মহিলা ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন।সুদীপ্ত নিজে অবশ্য এই ছবিকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলার ঘোর বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি ছবি তিনি তৈরি করেছেন। নেপথ্যে রয়েছে অনেক গবেষণা, পরিশ্রম এবং তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ।পরিচালকের কথায়, ‘‘আমি কখনওই বলিনি কেরলে যে সব মেয়েদের ধর্মান্তরণ হচ্ছে তাঁরা আইসিস-এ যোগ দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, মেয়েগুলো একেবারে উবে যাচ্ছে কী ভাবে?’’
কেরলে ধর্মান্তরণকে ঘিরে নিষ্ঠুর এবং করুণ চক্র চলছে বলে দাবি পরিচালকেরতিন নারীকে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বলে দাবি পরিচালক সুদীপ্তের। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের কাহিনি এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, ‘‘তাঁদের এক জন এখনও আফগানিস্তানের জেলে বন্দি। অন্য জন আত্মহত্যা করেছেন, বিচারের অপেক্ষায় তাঁর মা-বাবা। অন্য আর এক মেয়ে এখন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন যাঁকে ক্রমাগত ধর্ষণ করা হয়েছে।’’এই ছবিকে ইতিমধ্যেই করমুক্ত বলে ঘোষণা করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একাধিক রাজ্যে বিজেপি নেতা হিন্দু মহিলাদের জড়ো করে ছবিটি দেখাচ্ছেন। দাবি, গোটা ভারতের সমস্যার কথা বলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।
বিজেপিশাসিত কর্নাটকে ভোট আসন্ন। সেখানেও নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গিয়েছে সুদীপ্তের ছবির কথা। মোদীর দাবি, এই ছবি সমাজে সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দেবে।এ দিকে, যে কেরলকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই বামশাসিত রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন স্পষ্ট জানান, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে দিতে এই ধরনের ছবি তৈরি হয়েছে।’’সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিজেপিবিরোধী দলগুলি একযোগে এই ছবিকে ‘প্রচারসর্বস্ব’ বা ‘রাজনৈতিক প্রচারমূলক’-এর আখ্যা দিয়েছে। আঙুল উঠেছে সঙ্ঘ পরিবারের দিকেও।মুক্তির আগে ছবিটি থেকে অন্তত ১০টি দৃশ্য বাদ দিতে হয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর কাঁচি চালিয়েছে সেন্সর বোর্ড।
কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের সাক্ষাৎকারের অংশও বাদ পড়েছে।বেশ কিছু দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে সংলাপ ছিল। তাই সে সব দৃশ্য বাদ পড়েছে। ছবিতে একটি সংলাপ ছিল, যেখানে বলা হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্টরা দু’মুখো’। ‘ভারতীয়’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে এই সংলাপ থেকে।‘দ্য কেরালা স্টোরি’র একটি দৃশ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আগামী দু’দশকে এই রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হবে।’’ বিতর্কিত সংলাপের জন্য এই গোটা দৃশ্যই বাদ দেওয়া হয়েছে।অনেকে বলছেন, ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে সুদীপ্তের এই ছবি বিতর্কে ঘি ঢেলেছে। বিজেপিও ভোটের মুখে ছবিটিকে আঁকড়ে ধরেছে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৭