অক্টোবর ৩০, ২০২৩ ১৮:২৫ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি প্রবাদের গল্প। প্রবাদটি হলো: চীৎকার করতে চাও! এই প্রবাদের পেছনের গল্পটি বেশ মজার। গল্পটি এরকম:

একটা শৃগাল বেশ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে। আশেপাশে কিছুই ছিল না যা খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে। সময়টা ছিল শেষ বিকেল। একটু পরেই রাত ঘনিয়ে আসবে। খাবার খুঁজে পাবার ব্যাপারে তাই সে হতাশ হয়ে পড়লো। সুতরাং জঙ্গলের ভেতর খাবার পাবার ব্যাপারে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে চললো শহরের দিকে। যেতে যেতে মনে মনে বললো: যা আছে কপালে! হয় মানুষজনের দৌড়ানি খাবো কিংবা পেট ভরে মার খাবো, নয়তো কিছু না কিছু খাদ্যবস্তু অবশ্যই সংগ্রহ বা শিকার করবো। ভাবতে ভাবতে সূর্য অস্ত গেল। চারদিক অন্ধকার হয়ে এলো। ঠিক এরকম একটা সময়ে শেয়াল শহরে গিয়ে উপস্থিত হলো। 

শেয়াল শহরে ঢুকেই নাক দিয়ে শুঁকতে শুরু করে দিলো। আশ্চর্য ঘ্রাণশক্তি শেয়ালের। শুঁকতে শুঁকতে সে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো। যেতে যেতে সে একটা সরাইখানায় গিয়ে পৌঁছলো। ওই সরাইখানায় কাফেলার সঙ্গে সবই ছিল। সেখানে রাত্রি যাপনকারী যাত্রীরা ভ্রমণের ক্লান্তিতে শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে শেয়াল যা পেয়েছে তাই খেয়েছে। বিচিত্র রকমের খাবার দেখে সে এত খুশি হয়ে গিয়েছিল যে ভুলেই গিয়েছিল সে কোথায় আছে। তার মনেই ছিল না যে তাকে সাবধানে কাজ করতে উচিত। ভুলে গিয়ে সে মুসাফিরদের জিনিসপত্রে আরও খোঁজাখুজি করতে লাগলো। এমনকি তাদের প্লেট-বাটি ইত্যাদিতেও পা-মাথা দিয়ে শব্দ তুললো।

সুতরাং যা হবার তা্ হলো। যাত্রীদের থালা-বাসন, জিনিসপত্র স্পর্শ করার কারণে টুংটাং শব্দ হলো এবং যাত্রীদের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে জেগে উঠে যাত্রীরা দেখলো শেয়াল তাদের জানমালের ক্ষতি করছে। সবাই উঠে পড়ল এবং মৃদু হট্টগোল শুরু হলো। হাতের কাছে যে যা পেলো-লাঠি, কাঠ, লোহার রড ইত্যাদি হাতে তুলে নিলো এবং শেয়ালকে পেটানোর জন্য দৌড়াতে লাগলো। শেয়াল মার খাবার ভয়ে দৌড় দিয়ে সরাইখানার ছাদে গিয়ে পালালো। ছাদে ছিল কয়েকটি রঙের পাত্র। রঙ মিস্ত্রীরা প্রতিদিন ওই রঙের পাত্র ভর্তি করে পশমের সূতায় রঙ লাগাতো। ওই রঙিন পশমি সূতা কার্পেট বোণার কাজে ব্যবহার করা হতো। 

শেয়াল তো পালানোর জন্য উপযুক্ত আশ্রয় খুঁজছিল। দিক বিদিকশূন্য হয়ে স্টিলের ছোট ড্রামের মতো চাকাওয়ালা একটি পাত্রে ঢুকে পড়লো। স্বাভাবিকভাবেই শেয়ালের হাত পা পাত্রে রাখা রঙে রঙিন হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর শেয়াল ওই পাত্র থেকে বেরিয়ে যেখান থেকে এসেছিল সেই জঙ্গলের দিকে দৌড়ে পালালো। বনে যখন পৌঁছলো তখন সকাল হয়ে এলো। শেয়ালকে সবার আগে দেখতে পেলো খেঁকশিয়াল। সে শেয়ালকে চিনতে পারে নি। এরকম নীল রঙের কোনো জন্তুকে সে এর আগে আর দেখেও নি কোনোদিন। সুতরাং ভয় পেয়ে গেল এবং পালাতে চেষ্টা করলো। শেয়াল তাকে ডেকে বললো: ওই খেঁকশিয়াল! কোথায় যাস! এবার সে শেয়ালের আওয়াজ চিনতে পারলো। দ্বিধা-দ্বন্দ্বময় মনে সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো: তুমি শেয়াল? এ কী হাল তোমার?

শেয়াল এবার পুরো ঘটনা খুলে বললো। শেয়ালের কথা শুনে খেঁকশিয়াল তার দিকে ফিরে বললো: কপাল ভালো যে রাতের অন্ধকারে শহরে গেছো। তা না হলে তুমি এতক্ষণে বড় বড় মাংসের টুকরোয় পরিণত হতে। এখন কী করতে চাও? শেয়াল বললো: কিছুই না। নদীতে গিয়ে পরিষ্কার হতে চাই। তারপর দেবো লম্বা একটা ঘুম। খেঁকশিয়াল বললো: আমার অবশ্য তোমাকে নিয়ে ভিন্ন চিন্তা ছিল। এই রূপে তোমাকে কেউ চিনতে পারবে না। কোনো জন্তুও তোমাকে শেয়াল বলে বুঝতে পারবে না। তাই খাবার লোভে এক্ষুণি নিজেকে উন্মুক্ত করে ফেলো না। শেয়াল বললো: তার মানে? খেঁকশিয়াল বললো: তার মানে আমি বনের পশুদের গিয়ে বলবো যে আকাশ থেকে আমাদের নয়া রাজা এসেছে। 

শেয়াল জানতে চাইলো: কী হবে তাতে? খেঁকশিয়াল বললো: সবাই তোমাকে দেখার জন্য উপহার হিসেবে কিছু না কিছু খাবার নিয়ে আসবে। তার পর থেকে তোমার আর কোনো চিন্তা নেই। বিনা শ্রমে তুমি খাবার পেয়ে যাবে। শেয়াল বললো: দারুণ চিন্তা। কিন্তু বনের পশুরা যদি জানতে পারে, তখন? খেঁকশিয়াল বললো: যদি সতর্ক থাকো এবং চীৎকার না করো, কেউ চিনতে পারবে না। শেয়াল মাথা নাড়লো। খেঁকশিয়াল কথা অনুযায়ী কাজ করলো এবং বনের পশুরা দলে দলে তাদের নতুন রাজাকে দেখতে এলো। হ্যাঁ! ওই রঙ আর গঠনের কোনো প্রাণীই কেউ এর আগে আর দেখে নি। এমনকি বনের রাজা বলে স্বীকৃত সিংহও দেখতে গেল শেয়ালকে। সবাই হাদিয়া নিয়ে গেল নয়া বাদশাহর জন্য। খাবার দাবারের সমস্যা আর থাকলো না তাদের। এমনকি যখন যে আদেশ দেওয়ার দরকার, সেরকম আদেশ দিয়ে ক্ষমতা উপভোগ করতে লাগলো তারা। এভাবে কাটলো কিছুদিন। শেয়াল একদিন খেঁকশিয়ালকে ডাকলো। 
খেঁকশিয়াল যথাযথ সম্মান দেখিয়ে বললো: জাঁহাপনা! আমি হাজির! শেয়াল তার কানে কানে বললো: বহুদিন হয়ে গেল মন খুলে একটু চীৎকার করে ডাকতে পারছি না। ইচ্ছে করছে চীৎকার করি। খেঁকশিয়াল বললো: এ কাজ করলে তুমিও মরবে, আমিও! রাত আসুক! অন্ধকারে চীৎকার করো! তখন কেউ দেখতে পাবে না। শেয়াল বললো: আমার তো তর সইছে না। এক্ষুণি ডাকতে ইচ্ছে করছে। খেঁকশিয়াল বললো: ভুলেও এ কাজ করো না। একবার ভেবে দেখো! যেই সিংহ তোমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছে সে যদি জানতে পারে-কী অবস্থা হবে তোমার, আমার? কিন্তু শেয়াল অপারগ। অগত্যা খেঁকশিয়াল বললো: ঠিক আছে, চীৎকার দিতে চাও,দাও! তবে একটু অপেক্ষা করো, আমি এখান থেকে পালাই। বলতে না বলতেই শেয়াল চীৎকার দিলো। সিংহ ওই ডাক শুনে এক থাবায় শেয়ালে চামড়া তুলে নিলো। তারপর থেকে কেউ যখন গোপন কথা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বলে: চিৎকার করতে চাও? 

পার্সটুডে/এনএম/৩০/১১৩

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ