ডিসেম্বর ২২, ২০২৩ ২১:৪২ Asia/Dhaka

সাধারণত ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে দাওয়াতে যাওয়ার আদব বা শিষ্টাচার শেখানো হয়। আমাদেরকে শেখানো হয়, আমরা যাতে দাওয়াতে গিয়ে ভদ্র আচরণ করি। সঠিক কায়দায় বসা, ভদ্রভাবে খাওয়া, উচ্চস্বরে কথা না বলা, হৈ চৈ না করা এবং অন্য শিশুদের সঙ্গে শান্তভাবে খেলার উপদেশ দেওয়া হয়।

সাধারণত আমাদেরকে যখন কেউ দাওয়াত দেয় অর্থাৎ আমন্ত্রণ জানায় তখন আমরা তা গ্রহণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সবাই যে আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন তা নাও হতে পারে। কারণ যাকে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে তার হয়তো সেদিন আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে অথবা আগে থেকেই তিনি অন্য কোনো পরিকল্পনা করে রাখতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, আমন্ত্রণ গ্রহণ করা বা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত জানিয়ে দেওয়া সবার দায়িত্ব, এটা ভদ্রতা। নিজের সিদ্ধান্তটি দ্রুত জানিয়ে দিতে হবে, এর ফলে আয়োজক সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। দাওয়াতে গেলে আমরা সাধারণত ভালো পোশাক পরার চেষ্টা করি। এটা আমাদের সমাজে প্রচলিত অত্যন্ত ভালো একটা দিক। তবে অনুষ্ঠানটা কী ধরণের সেটার ওপর নির্ভর করে পোশাক পরা উচিত।

 বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলে একটু জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরা যেতেই পারে। আবার কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হলে সেখানে ধর্মীয় পোশাক পরলে তা মেজবান ও অন্য মেহমানদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানোর শামিল। এটাও শিষ্টাচার। আপনি যদি অনুষ্ঠানটি কী ধরণের সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত না থাকেন তাহলে অবশ্যই দাওয়াতকারীর কাছ থেকে তা জেনে নিন। আমন্ত্রণে গিয়ে অনেকেই এত বেশি খাবার খান যা দৃষ্টিকটু। অনেকেই খাবার খাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। অবস্থা এমন হয় যে, এ ধরণের ব্যক্তিরা অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন এবং তাদেরকে ওষুধ খেয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়া একদিকে যেমন নিজের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি কখনো কখনো আয়োজক বা নিমন্ত্রণকারীর জন্যও পীড়াদায়ক। কারণ যেকোনো আয়োজনেই খাবারের ক্ষেত্রে একটা সীমাবদ্ধতা থাকে, কিছু লোক যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খাবার খেয়ে ফেলে তাহলে তা পুরো ব্যবস্থাপনাতেই ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

কখনো কখনো দাওয়াতে অনাকাঙ্ক্ষিত মেহমান হাজির হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কেউ কেউ আয়োজকের অনুমতি গ্রহণ না করেই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে দাওয়াতে হাজির হন যা শিষ্টাচারের পরিপন্থী। অনুষ্ঠানে কাউকে নিয়ে যেতে চাইলে আগে থেকেই আয়োজকের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং তার অনুমতি নিন। আপনাকে যে সময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে, ঠিক সে সময়েই উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। কেউ কেউ বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন যা আয়োজকদের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। ধরুন, আপনি রাত আটটায় মেহমানদেরকে আসতে বলেছেন, কিন্তু তাদের কেউ কেউ সাতটায় এসে হাজির হলেন। তখনও আপনি ঘর গুছিয়ে শেষ করতে পারেননি, খাবার প্রস্তুত করাও শেষ হয়নি। এ অবস্থায় একদল মেহমান এসে হাজির। এমনটি হলে আপনার কাজের গতি যেমন কমে যাবে, তেমনি আপনার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করবে। এর ফলে আপনি যেভাবে সব কিছু গুছিয়ে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের সামনে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন ঠিক সেভাবে তাদের সামনে উপস্থাপন পারবেন না।

মনে রাখতে হবে, যারা কোনো অনুষ্ঠান বা নিমন্ত্রণের ব্যবস্থা করেন তারা সাধারণত শেষ মুহূর্তে খুব ব্যস্ত থাকেন, তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে। রান্নাঘরে তাদের খুব ব্যস্ত সময় কাটে। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হলে আয়োজকদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে কেউ যদি আয়োজকের খুব ঘনিষ্ঠ মানুষ হন তাহলে তার অনুমতি নিয়ে আগেভাগে উপস্থিত হয়ে কাজে সাহায্য করতে পারেন। এর ফলে আয়োজক বা আয়োজকেরা খুশি হবেন। দাওয়াতে যাওয়ার সময় চেষ্টা করুন উপহার হিসেবে কিছু একটা নিয়ে যেতে। এটাও একটা ভদ্রতা। একটা ফুলের তোড়া, টবে বসানো গাছ, একটা বই অথবা আপনার গাছের তাজা ফল- এ ধরণের সামান্য উপহারই যথেষ্ট। আয়োজকের সম্মানে আপনার অন্তত এটুকু কাজ করা উচিত। এছাড়া সময়মতো দাওয়াতে উপস্থিত হয়ে আয়োজকদেরকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিতে পারেন। প্রশ্নটা এমন হওয়া উচিৎ- আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, আমি আপনাদেরকে এখন কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আমি কোন কাজটি করতে পারি, আমাকে বলুন। 

কোনো দাওয়াতে সশব্দে ফোন বেজে ওঠা বেশ বিব্রতকর। তাই দাওয়াতে যাওয়ার আগেই ফোন বন্ধ করুন অথবা তা সাইলেন্ট বা নীরব মোডে রাখুন। কোনো জরুরি কারণে যদি ফোনে কথা বলতে হয় তাহলে অবশ্যই অন্যদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। অনেকেই ফোনে কথা বলার সময়ে উচ্চস্বরে কথা শুরু করেন। এতে পাশের মানুষটি যথেষ্ট বিরক্ত হন। ফোনে কথা বলার সময় গলার স্বর নমনীয় রাখুন। দাওয়াতে বসে আস্তে-ধীরে কথা বলুন। মোবাইল ফোনে কথা বলার প্রসঙ্গ যেহেতু সামনে এলোই এখানে এ সংক্রান্ত আরেকটি শিষ্টাচার উল্লেখ করছি। অফিসে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হোন। কারণ অফিস হচ্ছে কাজের জায়গা। সেখানে যদি মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত কথা বলা হয় তাহলে আপনার কাজের ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হতে পারে। আবার আপনার পাশের সহকর্মীও বিরক্ত হতে পারে। তাছাড়া অফিসের শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও এ ব্যাপারে দরকার বাড়তি সতর্কতা। ফোন এলে সিট থেকে উঠে গিয়ে কথা বলবেন। এমন স্থানে কথা বলবেন যাতে অন্য কারো কানে কথা না পৌঁছায়। অফিসকক্ষের বাইরে গিয়ে কথা বলুন। 

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ