ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪ ১৪:৫৪ Asia/Dhaka

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত লেখক এমিলি পোস্ট শিষ্টাচার সম্পর্কে বই লিখেছেন। তার মতে, শিষ্টাচার মেনে চলার ক্ষেত্রে অন্যের অনুভূতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। অর্থাৎ আপনাকে অন্যদের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে হবে। অন্যেরা যে আপনার আচরণে কষ্ট পেতে পারে অথবা আপনার আচরণের কারণে ভালো কিছু হতে পারে, তা বুঝতে হবে।

দেড় বছর বয়স থেকে শিশুরা বুঝতে শুরু করে অন্যদেরও তাদের মতো অনুভূতি রয়েছে। কাজেই এই বয়স থেকে শিশুকে এটা শেখানো শুরু করা যেতে পারে যে, তার আচরণের একটা প্রভাব অন্যের ওপর রয়েছে এবং তার আচরণের প্রভাবটা কেমন সেটাও তাকে বোঝাতে হবে। কম বয়স থেকেই শিশুকে শিষ্টাচার সম্পর্কে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এর ফলে শিশুর মনে তা গেঁথে যাবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে ভদ্র আচরণ করবে। যেসব শিশু শিষ্টাচার মেনে চলে না, তারা বড়দের কাছে যেমন খুব একটা পাত্তা পায় না তেমনি সমবয়সীদের কাছেও অপ্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে। এর ফলে শিশুকাল থেকেই ভদ্র হিসেবে গড়ে ওঠা জরুরি। তবে ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের শিক্ষা একরাতে সম্ভব নয়।

যেমন, আপনি যদি আপনার দুই বছর বয়সী শিশুকে অন্যকে সালাম দেওয়ার মতো একটি সাধারণ সামাজিক শিষ্টাচার শেখাতে চান তাহলে শিশুটির তা শিখতে এক মাস লেগে যাবে। শিশুটি যখন এই কাজটি করবে তখন অবশ্যই তার প্রশংসা করুন, সম্ভব হলে কোনো উপহার দিন। শিশুর কাছে আপনার প্রত্যাশা হতে হবে তার বয়স অনুযায়ী। একইভাবে আপনার আচরণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আপনি যখন বাড়িতে আপনার জীবনসঙ্গীর কাছে কোনো কিছু চান তখন অবশ্যই 'প্লিজ' অথবা 'দয়া করে'- এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করুন। এছাড়া কেউ কোনো কাজ করে দিলে বা উপকার করলে অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানান। আপনার সন্তানেরা আপনার আচরণ দেখে শিখছে। আপনি যদি কাউকে গালি দেন তাহলে সে অবলীলায় তা শিখে নেবে এবং সুযোগ পেলে আপনাকে অথবা তার খেলার সাথী কিংবা সহপাঠীকে গালি দিয়ে বসবে। শিশুকে আদব বা শিষ্টাচার শেখানোর জন্য সময় ব্যয় করুন। সন্তানকে ভালো কিছু না শিখিয়ে তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করার মানে হয় না।

সন্তানকে ভদ্রতা বা শিষ্টাচার শেখানোর ক্ষেত্রে আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন, দু'জনই একই নীতি ও কৌশল অনুসরণ করুন। দুই জনের কথাবার্তা ও আচার-আচরণ যদি ভিন্ন ধরণের হয় তাহলে শিশুরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় এবং সঠিক পন্থাটি বাছাই করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। আসরের এ পর্যায়ে আমরা শিশুদের জরুরি কিছু শিষ্টাচার নিয়ে কথা বলব। টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কীভাবে খাবার খাওয়া উচিত তাদেরকে তা দেখিয়ে দিন। তিন বছরের একটা শিশুর কাছে আপনি এ প্রত্যাশা করতেই পারেন যে, সে নিজে নিজে মুখে খাবার তুলে খাবে।  তবে সে যখন খাবে তখন তার পাশে বসুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট তার পাশে বসে তাকে খাবার খেতে সহযোগিতা করুন এবং মাঝে-মধ্যে মুখ মুছে দিন। অল্প বয়সী শিশুদেরকে ভঙ্গুর নয়-এমন ছোট প্লেটে খাবার দিন। খাবার যাতে অপচয় না করে এবং যেনতেনভাবে মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না রাখে সেই শিক্ষাও তাকে দিতে হবে। শিশুকে বলুন 'আমরা প্লেটের বাইরে খাবার ফেলি না, তোমার যদি পেট ভরে গিয়ে থাকে তাহলো বলো যে, আমার আর ক্ষুধা নেই। তাহলেই হবে।'

আপনি যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করুন এবং ভদ্রভাবে কথা বলুন তাহলে শিশুও সেভাবেই আচরণ করা শিখবে। আড়াই বছরের আগে সাধারণত শিশুরা শব্দের অর্থ সম্পর্কে সচেতন থাকে না। শিশু যদি শুনে বা দেখে শিখে ফেলে তাহলেতো হয়েই গেল, কিন্তু যদি না শেখে তাহলে তাকে মোলায়েম সুরে বলতে হবে- তুমি কারো কাছ থেকে কোনো উপহার পেলে অথবা কেউ তোমাকে সাহায্য করলে অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ দেবে। কীভাবে ধন্যবাদ দিতে হবে সেটাও দেখিয়ে দিন। দুই বছরের শিশুরা শেয়ারিং বোঝে। শিশু অন্যের সঙ্গে নিজের জিনিস বা খেলনা শেয়ার করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনার শিশু সন্তান যদি এ ক্ষেত্রে আগ্রহী না হয় তাহলে তাকে নানাভাবে উৎসাহিত করুন। তার নিজের খেলনা ও জিনিসপত্র তার ভাই-বোন ও খেলার সাথীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বলুন। আপনি আপনার শিশু সন্তানকে একই ধরণের দু'টি খেলনা দিয়ে বলতে পারেন, সেটা যাতে সে তার খেলার সাথীকে দেয়। অন্যকে নিজের জিনিস দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কাউকে কষ্ট দিলে যে সেজন্য মাফ চাইতে হয়, তা শিশু সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন। দেড় বছরের একটা শিশু অন্যের ব্যথা বুঝতে পারে। তবে এ জন্য যে ক্ষমা চাওয়া উচিত তা  সে বুঝতে পারে না। অবশ্য বয়স যখন তিন বা সাড়ে তিন বছরে পৌঁছায় তখন সে বুঝতে পারে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। এ ক্ষেত্রে আপনি যে কাজটি করতে পারেন তাহলো, যখন আপনার শিশু সন্তান জোর করে তার বন্ধুর খেলনাটি নিয়ে নেয় তখন তাকে বোঝান  যে, সে কাজটি ঠিক করেনি, তার বন্ধু এজন্য মনে কষ্ট পেয়েছে, তার কাছে এখন খেলনা নেই। কেউ যদি তার খেলনা নিয়ে নেয় তাহলে তার কেমন কষ্ট লাগবে? ঠিক একই ধরণের কষ্ট তার বন্ধুরও অনুভূত হচ্ছে। ধরুন, আপনার শিশু সন্তান কাউকে চড় মেরে বসল। তখন তাকে বোঝান চড় মারলে ব্যথা লাগে। এই দুই ক্ষেত্রেই শিশু সন্তানকে বলতে হবে, তুমি তোমার বন্ধুর কাছে মাফ চাও। তাকে 'সরি' বলো।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ