আগস্ট ১৬, ২০১৬ ১৩:৪৪ Asia/Dhaka

বিশ্বনবী (সা.)'র  আরো  অমূল্য বাণী ও  সংক্ষিপ্ত উপদেশ: মহানবী (সা.) বলেছেন : উপদেশ গ্রহণের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট আর অমুখাপেক্ষিতার জন্য  খোদাভীতি বা পরহেজগারিতাই যথেষ্ট। আর কর্মব্যস্ততার জন্য ইবাদতই যথেষ্ট। আর কিয়ামতই একমাত্র ভবিষ্যৎ আর আল্লাহ্ই একমাত্র প্রতিদান দাতা। 

তিনি আরো বলেছেন, দু’টি কাজের চেয়ে উত্তম কোনো পুণ্যের কাজ নেই : আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর বান্দাদের উপকার করা। আর দু’টি কাজের চেয়ে জঘন্য কোনো কাজ নেই : আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা আর আল্লাহর বান্দাদের ক্ষতি করা। 

এক ব্যক্তি বিশ্বনবী (সা.)-কে বলল : আমাকে কিছু উপদেশ দিন যার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমার মঙ্গল করবেন। তখন হুজুর (সা.) বললেন : বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো, তা তোমাকে দুনিয়া (প্রেম) থেকে মুক্ত করবে। (আল্লাহর প্রতি) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, কারণ, তা নেয়ামতকে বাড়িয়ে দেয়। বেশি বেশি দোয়া করো, কেননা তুমি জান না কখন তোমার দোয়া গ্রহণ করা হবে। সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ, আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, যার সীমা লঙ্ঘিত হয় আল্লাহ্ অবশ্যই তার সহায় হন। (মহান আল্লাহ) ইরশাদ করেন,

হে লোকেরা! তোমাদের সীমা লঙ্ঘনের ক্ষতি তোমাদের ওপরই বর্তাবে। (ইউনুস:২৩) আর যেন প্রতারণা করো না। কারণ, আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, ‘মন্দ প্রতারণা কেবল তার কর্তাকেই পরিবেষ্টন করে থাকে।’ (ফাতির:৪৩) 

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন : শিগগিরই তোমরা শাসন ক্ষমতার প্রতি লালায়িত হবে। তখন তোমাদের পরিণাম হবে আফসোস আর অনুতাপ। 

তিনি আরো বলেন : সেই জাতি কখনো সফল হবে না যারা তাদের সামাজিক নেতৃত্বভার নারীর হাতে ন্যস্ত করে।

হুজুর (সা.)-এর কাছে আরজ করা হলো : কোন্ সঙ্গীরা উত্তম?  তিনি বললেন : যখন তুমি তাকে স্মরণ করবে, সে তখন তোমাকে সাহায্য করবে; আর যখন ভুলে যাবে সে তখন তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। আরো বলা হলো : নিকৃষ্টতম লোক কারা? বললেন : জ্ঞানী লোকেরা যখন নষ্ট হয়ে যায়।

মহানবী আরো বলেন, আমার প্রতিপালক আমাকে নয়টি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন : প্রকাশ্য ও গোপনে নিষ্ঠা অবলম্বন করা, সন্তুষ্টি আর ক্রোধের অবস্থায় ন্যায়পরায়ণ থাকা, অভাব ও প্রাচুর্যের সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, আর যে আমার প্রতি অত্যাচার করে তাকে যেন ক্ষমা করি, আর আমার প্রতি যে কৃপণতা করে তাকে প্রদান করা, আর যে আমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তার সাথে যেন সম্পর্ক গড়ি, আর আমার নীরবতা যেন হয় চিন্তা-গবেষণা, আর আমার কথা যেন হয় যিকির আর আমার তাকানো যেন হয় শিক্ষা গ্রহণ। 

বিশ্বনবী (সা.) বলেন : জ্ঞানকে লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে বেঁধে ফেল।

তিনি আরো বলেন : যখন কোনো জাতির দুর্বৃত্তরা তাদের নেতা হয়, তাদের নিকৃষ্টরা হয় কর্ণধার আর দুষ্কৃতকারীদেরকে সম্মান করা হয়, তা হলে যেন তারা বিপদের অপেক্ষায় থাকে। 

মহানবী (সা.) বলেন, অন্যদিকে যখন তোমাদের নেতারা হয় তোমাদের উত্তম লোকেরা, আর তোমাদের সামর্থ্যবানরা হয় তোমাদের দানশীল লোকেরা, আর তোমাদের কাজকর্ম হয় তোমাদের সবার পরামর্শ অনুযায়ী তা হলে তোমাদের জন্য মাটির উপরিভাগই মাটির ভেতরের চেয়ে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নেতারা হয় তোমাদের নিকৃষ্টরা, আর তোমাদের সামর্থ্যবানরা হয় তোমাদের কৃপণরা, আর তোমাদের কাজকর্ম ন্যস্ত হয় তোমাদের নারীদের ওপর তখন তোমাদের জন্য মাটির ওপরের চেয়ে নিচে থাকাই শ্রেয়।

তিনি আরো বলেন : দ্রুত বেগে হাঁটা মুমিনের মূল্য কমিয়ে দেয়।

মহানবী (সা.) বলেন : যার (মাল) চুরি হয় সে সবসময় নিরপরাধ লোকদেরকে দোষারোপ করতে থাকে। ফলে তার অপরাধ চোরের চেয়েও বড় হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন : আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন যে, তাঁর অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে উদারতা প্রদর্শন করে। 

মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তির সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় এ অবস্থায় যে, তার তিনটি জিনিস থাকে, তবে তার ওপর দুনিয়ার নেয়ামত পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যার সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় সুস্থ অবস্থায়, তার মনে প্রশান্তি থাকে আর তার কাছে একদিনের জীবিকা থাকে। আর যদি চতুর্থ বস্তুটিও  যদি তার থাকে তা হলে তার দুনিয়া ও আখিরাতের সকল নেয়ামত পূর্ণ হয়। আর সেটা হলো ঈমান। 

তিনি আরো বলেন : দয়া করো সেই সম্মানিতের ওপর যে লাঞ্ছিত হয়েছে, আর সেই ধনীর ওপর যে নিঃস্ব হয়েছে আর ঐ জ্ঞানীর ওপর যে মূর্খদের কবলে পড়েছে।

আল্লাহর শেষ নবী আরো বলেন : দুটি ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ধোঁকা খেয়ে থাকে, সুস্থতা আর অবসর। (অর্থাৎ এগুলোর সদ্ব্যবহার করে না।)

তিনি আরো বলেন : অন্তরগুলো ঐসব লোকের বন্ধুত্বে বাধা পড়ে যারা তাদের প্রতি সদাচার করেছে আর ঐসব লোকের শত্রু  হয় যারা তাদের প্রতি অনিষ্ট করেছে। 

হুজুর (সা.) বলেন : নবীদেরকে মানুষের সাথে তাদের বিবেক-বুদ্ধি অনুপাতে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন : সেই ব্যক্তি অভিশপ্ত যে নিজের রুজির ভার অন্যের ওপর ন্যস্ত করেছে।

তিনি  বলেন : ইবাদতের সাতটি অঙ্গ। তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো হালাল রুজি অর্জন করা। 

মহানবী (সা.) আরো বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ্ জোরজবরদস্তি করে আনুগত্য গ্রহণ করেন না আবার কারো অবাধ্যতার মাধ্যমে তিনি পরাস্তও হন না। বান্দাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা থেকে তিনি হাত গুটিয়ে নেন নি। অথচ তিনি যেসব জিনিসের ওপরে তাদেরকে ক্ষমতাশীল করেছেন সেসবের ওপর পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। আর তিনিই হলেন সব রাজত্বের মালিক যা তাদেরকে দান করেছেন। সত্যিই যদি সব বান্দা খোদার আনুগত্যে অবিরত লিপ্ত থাকে, তা হলেও কোনো অন্তরায় ও প্রতিবন্ধক নেই। আবার যদি তারা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ করে তবে তিনি চাইলে তাদের এবং তারা যা করে তার মাঝে প্রতিবন্ধক হতে পারেন।

মহানবীর পুত্র ইবরাহীম যখন মৃত্যুবরণ করছিল (তখন  তিনি বলেন) : যা অতীত হয়েছে তা যদি (আল্লাহর কাছে) প্রেরিত সঞ্চিত বস্তু না হতো আর শেষও প্রথমের সাথেই সংযুক্ত (সকলকেই মৃত্যুর পরিণতি বরণ করতে) না হতো, তা হলে আমরা তোমার ওপর তীব্রভাবে শোকাহত হতাম হে ইবরাহীম। এরপর তাঁর চক্ষু অশ্রুসিক্ত হলো এবং তিনি বললেন, চক্ষু অশ্রু ঝরায়, আর অন্তর শোকার্ত হয়। আর আমরা শুধু সেটাই বলি যা আল্লাহর পছন্দনীয়। আর সত্যই হে ইবরাহীম! আমরা তোমার জন্য শোকাহত। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১৬

 

ট্যাগ